বছরে তিনবার জন্মদিন পালন করেন আদানি! তৃতীয় কারণটি গোটা বিশ্বকে কাঁদিয়েছিল

প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: ভারতের শিল্প এবং বাণিজ্যিক জগতে যে সকল ধনকুবেরের তালিকা রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলেন গৌতম আদানি (Gautam Adani)। কিছুদিন আগেই অর্থাৎ গত সপ্তাহেই শিল্পপতি গৌতম আদানির ৬৪তম জন্মদিন উদযাপন করা হয়েছিল। কিন্তু অনেকেই জানেন না যে গৌতম আদানি প্রতি বছর তিনবার করে জন্মদিন পালন করে থাকে। অবাক হচ্ছেন নিশ্চয়ই? তবে এটাই সত্যি। চলুন আজকের প্রতিবেদনের মাধ্যমে জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত।

আদানির প্রথম জন্মদিন

১৯৬২ সালের ২৪ জুন, গৌতম আদানি জন্মগ্রহণ করেছিলেন আহমেদাবাদের এক সাধারণ পরিবারে। সাধারণ, সাদামাটা পরিবারে বাবা মা ভাই বোনের সঙ্গে বেশ শান্তিতে কেটেছিল ছোটবেলা। তখন থেকেই গৌতম আদানি শিখেছিলেন সঠিক আদর্শ, পরিশ্রমের মূল চাবিকাঠি, একাগ্রতা এবং আদর্শে স্থির থাকার শিক্ষা। শেঠ চিমনলাল নাগিন্দাস বিদ্যালয়ে তাঁর পড়াশোনা শুরু হয়। পরে উচ্চশিক্ষার প্রতি তাঁর মনোযোগ চলে যায়। তাই ১৬ বছর বয়সেই তিনি পড়াশোনা ছেড়ে দেন।

নিজের থেকে কিছু করার চিন্তাভাবনা যেন তখন তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল। তাইতো কিছু টাকাপয়সা নিয়ে মুম্বাইয়ে চলে আসেন তিনি। সেখানে একটি হীরা বাছাইকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন। এরপর সেখানে কাজ করতে করতে মাত্র ১৯ বছর বয়সেই তিনি গড়ে তোলেন নিজের ডায়মন্ড ব্রোকারেজ ব্যবসা গড়ে তোলেন। আর এখান থেকেই মেলে জীবনের প্রথম বড় সাফল্য। এরপরে ১৯৮১ সালে আহমেদাবাদে গৌতম আদানি তাঁর বড় ভাইয়ের প্লাস্টিকের কারখানায় কাজ শুরু করেন।

আদানির দ্বিতীয় জন্মদিনের রহস্য!

ঠিক সাত বছর পর, ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আদানি এক্সপোর্টস—যা বর্তমানে আদানি গ্রুপ নামে পরিচিত, সেখানেই কৃষিপণ্য ও বিদ্যুৎ-সংক্রান্ত জিনিসের বাণিজ্যের যুক্ত ছিল। তখন থেকেই শুরু হয় গৌতম আদানির (Gautam Adani) আসল ব্যবসা। কিন্তু এই ব্যবসার খাতিরেই এক রাতে বেশ কিছু দুষ্কৃতীদের হাতে পড়েছিলেন আদানি। ১ জানুয়ারি, ১৯৯৮ সালে আহমেদাবাদের কারনাবতী ক্লাব থেকে সহকর্মী শান্তিলাল প্যাটেলের সঙ্গে বের হওয়ার সময় তাদের গাড়ি ঘিরে ধরে একদল সশস্ত্র বাহিনী।

পরিস্থিতি এতটাই ভয়ংকর ছিল যে তাঁর জীবন-মৃত্যুর হিসেব ঝুলে ছিল। শেষে ওই ভয়ংকর পরিস্থিতিতেও নিজেকে সংযত করে ঠাণ্ডা মাথায় পরিস্থিতি বুঝে এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণ করার পর এক বুদ্ধিতেই গৌতম আদানি ওই মরণফাঁদ থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। এরপর থেকে আর কোনো সংকট এবং বিপদ তাঁকে আর ছুঁতে পারেনি। আর তাই সেদিনকে আদানির দ্বিতীয় জন্মদিন হিসেবে পালন করা হয়।

আদানির তৃতীয় জন্মদিন

জানা গিয়েছে দুষ্কৃতীদের হামলার ঠিক ১১ বছর পর অর্থাৎ ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর মুম্বাইয়ে এক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা হয়েছ। আর ওইদিন রাতে তিনি মুম্বাইয়ের তাজ হোটেলের বিখ্যাত মাসালা ক্র্যাফট রেস্তোরাঁয় রাতের খাবার খাচ্ছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন দুবাই পোর্টের সিইও মোহাম্মদ শরাফ। খাবার শেষে বিল মিটিয়ে তারা যখন হোটেল থেকে বেরোচ্ছিল সেই সময় তারা উঠে লবিতে যেতেই, গুলির মুখোমুখি হতে হয়েছিল তাঁদের। সেই সময় অন্যকে বাঁচানোর জন্য তিনি এগিয়ে এসেছিলেন।

আরও পড়ুন: শুভাংশু শুক্লাকে মহাকাশে পাঠিয়ে কতটা লাভবান হবে ভারত!

নারী, বৃদ্ধ এবং শিশুসহ সকলকে নিরাপদে রেখে আদানি নিজে শেষে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছিলেন। একটি ছোট বাথরুমের কিউবিকলে গাদাগাদি করে আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তবুও থামেনি হামলাকারীদের গুলির হুংকার। সেই সময় তিনি কোনরকমে ক্যাপ্টেন মেহতাকে ফোন করেছিলেন। তখনই জানতে পারেন যে পুরো তাজ হোটেল আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

সেই ভয়ংকর মুহূর্ত থেকে বেঁচে ফেরার যে পন্থা তিনি ঠান্ডা মাথায় অবলম্বন করেছিলেন যেন মনে হয় তাঁর পুনরায় জন্ম হয়েছে। তাই এই দিনটিকেও জন্মদিন হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে।

Leave a Comment