সহেলি মিত্র, কলকাতাঃ বাংলায় পুরোদমে এখন বর্ষাকাল চলছে। আর এই বর্ষার মরসুমে বাঙালির পাতে যদি ইলিশ না থাকলে কেমন যেন খালি খালি লাগে। ইতিমধ্যে নামখানা থেকে শুরু করে দিঘার মৎস্যজীবীরা কয়েক টন ইলিশ ধরেছেন। আর সেগুলি কলকাতা সহ বাংলার বিভিন্ন বাজারে ছেয়ে গিয়েছে। তবে মাছপ্রেমী বাঙালি বাজারে গিয়ে একটা জিনিস কিন্তু খুঁজছেন। আর সেটা হল পদ্মার ইলিশ। এ বছর আদৌ ওপার বাংলার ইলিশ এপারে আসবে কিনা সেই নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। তবে হাল ছাড়তে নারাজ বাংলার সরকার। এবার এক ধাক্কায় ৫০০০ টন ইলিশের দাবিতে চিঠি পাঠানো হল সেই দেশে।
বাংলাদেশ থেকে বাংলায় ঢুকবে ইলিশ?
২০২৪ সালের আগস্ট মাসের পর থেকে নানা ইস্যুকে ঘিরে ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক রীতিমতো তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। সবথেকে বড় কথা, বাংলাদেশ থেকে স্থলবন্দর দিয়ে ৯ ধরনের পণ্য আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ভারত সরকার। এহেন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ইলিশ মাছ ভারতে না পাঠিয়ে ‘বদলা’ নিতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ বাঙালির সাধের পদ্মার ইলিশ হয়তো এ বছর নাও খাওয়া হতে পারে। যদিও আবেদনের ব্যাপারে কোনও ফাঁক রাখতে চাইছে না বাংলা।
গত বছর এই সময়ে সে দেশের মৎস্য দফতরের তরফে জানানো হয়েছিল, আগে দেশের মানুষ ইলিশ পাবেন তারপর অন্য কোনও দেশে পাঠানো হবে। এদিকে এখন ওপার বাংলায় যে ইলিশ মাছ উঠছে সেগুলি বেশ চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। এক কথায় সাধারণ মানুষের হাতের নাগালের বাইরে চলে গেছে ইলিশ। এসবের মাঝেই বাংলার ‘ফিশ ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন’ বাংলাদেশ থেকে ৫ হাজার টন ইলিশ আমদানির জন্য সে দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রককে এ মাসেই চিঠি দিতে চলেছে। এমনকি বাংলা থেকে একটি প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে তারা আলোচনাতেও বসতে চায়।
মাছ আনতে উদ্যোগী রাজ্য সরকার
অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ার মকসুদ জানিয়েছেন, প্রতি বছর দুর্গাপুজোর মুখে বাংলাদেশ সরকার ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেয়। কিন্তু সেই সময়ে বাংলাদেশে বেশি ইলিশ পাওয়া যায় না। তাই এ বছর আগেভাগে অনুমতি পাওয়ার জন্য প্রতিনিধিদল পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অতুল দাস জানিয়েছেন, গত বছর ৫ হাজার টন ইলিশ আমদানির জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। দুর্গাপুজোর সময়ে ৩ হাজার টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হলেও শেষ মুহূর্তে মাত্র ৬০০ থেকে ৮০০ টনের মতো ইলিশ এসেছিল।
আরও পড়ুনঃ দ্বিতীয় টেস্টে হবে না পাঁচ দিনের ম্যাচ! বাড়তে পারে টিম ইন্ডিয়ার সমস্যা
বাংলাদেশের রপ্তানি-নীতি অনুযায়ী ইলিশ শর্ত-সাপেক্ষে রপ্তানি-যোগ্য পণ্যের তালিকায় রয়েছে। তাই সরকারের অনুমোদন ছাড়া ইলিশ রপ্তানির সুযোগ সেখানে নেই। ইলিশ ছাড়াও বাংলাদেশ থেকে পাবদা, ভেটকি, পুঁটি আসে। আর এ দিক থেকে বিপুল পরিমাণে শুঁটকি, লটে, কাঁচকির পাশাপাশি রুই, কাতলা, ম্যাকারেল যায় ও পারে। সৈয়দ আনোয়ার মকসুদ বলছেন, ‘গত বছর যে সময়ে ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়, তখন বাংলাদেশেই ইলিশের দাম বেশ চড়া। ফলে এ দিকের বাজারেও চড়া দামেই বিক্রি করতে হয়েছিল। এ বছর তাই একেবারে ইলিশের ভরা মরশুমেই আমরা চেষ্টা করছি।’
ইলিশের দাম আকাশছোঁয়া
জানলে অবাক হবেন, বাংলাদেশের কৃষি বিপণন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এখন ইলিশের দাম ৩৫-৪০ শতাংশ বেশি। কয়েকটি বাজার পরিদর্শন করে দেখেছে যে চাঁদপুর থেকে ৫০০ গ্রামের একটি নদী ইলিশ এখন সর্বনিম্ন ১,৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। মাঝারি আকারের (প্রায় ৭৫০ গ্রাম) ইলিশের দাম প্রায় ২০০০ টাকা কেজি এবং ১ কেজির বেশি ওজনের ইলিশ ২,৮০০-৩,২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এহেন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, ওপার বাংলা থেকে এপারে কতটা ইলিশ আসবে, এবং সেগুলি আদৌ সাধারণ মানুষের হাতের নাগালের মধ্যে হবে কিনা সে ব্যাপারে।