বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: কথায় বলে লম্ফঝম্ফ বেশি ভাল নয়! এতদিন বোধহয় রক্ত গরম থাকায় সে কথা কানে ঢোকেনি বাংলাদেশের। তবে ভারত স্থল বন্দর দিয়ে আমদানি নিষিদ্ধ করায় ধীরে ধীরে অভিভাবকের বলা কথা বুঝতে শিখছে সবচেয়ে কাছের পড়শি।
সম্প্রতি দিল্লির তরফে ফের ধাক্কা খেয়েছে ঢাকা। স্থলপথ দিয়ে বহু আগেই নিষিদ্ধ করা হয়েছিল বাংলাদেশি বস্ত্র আমদানি। এবার সেই পথ ধরেই, বাংলাদেশ থেকে আসা কাঁচাপাট ও পাটজাত পন্য আমদানি নিষিদ্ধ করে দিল ভারত। মূলত সেই কারণেই, প্রথম কিছুদিন ধুঁকতে থাকলেও এবার মুখ থুবড়ে পড়েছে বাংলাদেশের রপ্তানি।
রপ্তানি নিয়ে চরম সংকটে বাংলাদেশ
একদিকে একের পর এক আমদানি বন্ধ করে জোরালো ধাক্কা দিয়েছে ভারত। অন্যদিকে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত শুল্ক নিয়ে এখনও সমঝোতার পথে হাঁটেনি ইউনূসের সরকার। তাছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতার পর বর্তমানে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধের প্রকোপ বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যকে একেবারে ভাতে মেরেছে!
ওপার বাংলার বেশ কয়েকজন রপ্তানিকারক জানাচ্ছেন, ভারতের নিষেধাজ্ঞার পর ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নিয়ে চিন্তা, সবমিলিয়ে চতুর্দিক থেকে সমস্যার কারণে এখন ব্যাপক সংকটে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য। এ প্রসঙ্গে বিকেএমইর প্রাক্তন সভাপতি ফজলুল হক বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, দেশের অভ্যন্তরে ও বিদেশ দুই দিক থেকেই চাপে পড়েছে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য।
মূলত বৈশ্বিক অস্থিরতার কারণে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে ভয় পাচ্ছেন পশ্চিমের ক্রেতারা। তাছাড়াও ভারতের সাথে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সম্পর্ক ক্রমশ খারাপ খাতে যাওয়ায় ইউরোপের দেশগুলি বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বলেই খবর। বাংলাদেশের এক সংবাদমাধ্যম বলছে, চারিদিক থেকে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য মুখ থুবড়ে পড়ায় এখন নতুন অর্ডার দিতে ভয় পাচ্ছেন ক্রেতারা।
অবশ্যই পড়ুন: পাকিস্তানের থেকে বহু এগিয়ে, লাস্ট বয় বাংলাদেশ! বিশ্ব ট্যাঙ্ক শক্তিতে কততে ভারত?
অভ্যন্তরীণ সমস্যাতেও জর্জরিত বাংলাদেশ
বিদেশি শক্তির তরফে ধাক্কা খাওয়ার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ একাধিক সমস্যা নিয়ে এখন প্রশ্নের মুখে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য। জানা যাচ্ছে, গ্যাস থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ সংকট, এলসি জটিলতা, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি মতো পুরনো সমস্যাগুলি নিয়ে বর্তমানে যথেষ্ট ভোগান্তিতে বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকার। তাছাড়াও NBR নিয়ে প্রশাসনিক সংকটের কারণে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে।
পাশাপাশি শাটডাউনের কারনে কাস্টমস ক্লিয়ারিংয়ে দেখা দিয়েছে জট, ফলে বাইরের ক্রেতারাও নতুন অর্ডার সময়মতো পাবেন কিনা তা নিয়েও সংশয়ে রয়েছেন। ফলত সবদিক থেকে বলা যায়, ভারতের একের পর এক কড়া নিষেধাজ্ঞার পর নানান দিক থেকে চাপ নিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য পথে বসতে চলেছে!