নুন আনতে পান্তা ফুরায়, দিনমজুরের ছেলে IIT-তে! অভিজিতের সাফল্যে গর্বিত মেদিনীপুর

Published on:

abhijit maji iit bhubaneswar

ইন্ডিয়া হুড ডেস্ক: ইচ্ছাশক্তি যদি প্রবল হয়, তাহলে জীবনে যে কোনো বাঁধা তার কাছে তুচ্ছ হবেই। আর এই ধারণা যে কতটা সত্যি তা কম বেশি সকলেই আমরা উপলব্ধ করেছি। দেশের কোণায় কোণায় এমন অনেক গরীব মেধাবী ছাত্র ছাত্রী রয়েছে যারা আর্থিক দুর্বলতাকে কাটিয়ে ঠিক তাদের লক্ষ্যে পৌঁছোতে পারে। আর তেমনই পেরেছে জঙ্গলমহলের অভিজিৎ। অবাক করে দিয়েছে সকলকে।

খেলার মাধ্যমেই মেধার বহিঃপ্রকাশ

পশ্চিম মেদিনীপুরের গুড়গুড়িপাল থানার কঙ্কাবতী গ্রামের বাসিন্দা অভিজিৎ নিজের গ্রামের স্কুলে পড়াশোনার পাশাপাশি নিয়মিত ফুটবল খেলত। এক কথায় বলা যায় তুখোড় এবং খাটি ফুটবলার। ২০১৯ সালে খেলা প্রসঙ্গেই তার কথা সবংয়ের দশগ্রাম সতীশচন্দ্র সর্বার্থসাধক শিক্ষাসদনের প্রধান শিক্ষক যুগল প্রধানকে বলেছিলেন এক ফুটবল কোচ। সে বার সুব্রত কাপ খেলতে যাওয়ার কথা দশগ্রাম স্কুলের। কিন্তু বড় শর্ত দিল সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক। শর্তে এই বলা হয়েছে যে, অভিজিৎ যদি তাঁর স্কুলে ভর্তি হয়, তবেই একমাত্র সুব্রত কাপ খেলতে যেতে পারবে।

WhatsApp Community Join Now

প্রধান শিক্ষকের গাইডেই ক্লাসের টপার অভিজিৎ!

খেলার এই সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করতে চায়নি সুব্রত। সেই মতোই ক্লাস এইটে মাঝপথে গ্রামের স্কুল ছেড়ে দশগ্রাম স্কুলে ভর্তি হতে হয় অভিজিৎ-কে। স্কুলের হয়ে সুব্রত কাপ খেলতেও যায় সে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল অভিজিৎ যে শুধু ফুটবল খেলায় পারদর্শী, তা কিন্তু নয়। পড়াশোনাতেও সে বেশ তুখোড়। আর তা নজর এড়ায়নি প্রধান শিক্ষকের। তাই গাইড করেছেন নিয়মিত। ২০২১ সালে মাধ্যমিকে স্কুলের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পায় সে। এমন মেধাবী ছাত্রের পরিবারের আর্থিক পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে এগিয়ে আসে স্কুলের ট্রাস্ট। হস্টেলেই অভিজিতের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। পড়াশোনার খরচেও বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়। এ বছর উচ্চমাধ্যমিকেও দুর্দান্ত ফলাফল তার। এবার স্বপ্ন IIT।

IIT স্বপ্নপূরণ অভিজিৎ-র

অভিজিৎ-র ইচ্ছা জেগেছে যে ভালো কোনও প্রতিষ্ঠান থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার। তাইতো মেধাবী এই ছাত্রকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে স্কুলের শিক্ষকরা। তাঁদের সহযোগিতা এবং চেষ্টা বিফলে যায়নি অভিজিৎ এর। অবশেষে গত মঙ্গলবার IIT ভুবনেশ্বরে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হয়েছে সে। ভুবনেশ্বর থেকে অভিজিৎ জানিয়েছে, ‘স্কুলের প্রধান শিক্ষক যুগলবাবু, কাজলবাবু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সভাপতি দীপকবাবু, স্কুলের প্রাক্তনী নিরঞ্জনবাবু এবং স্কুলের শিক্ষকদের সাহায্য ছাড়া আমি এই জায়গায় আসতে পারতাম না। আমি যদি কোনও দিন প্রতিষ্ঠিত হতে পারি, তাহলে ওই স্কুলের জন্য, কাজলবাবু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের জন্য কিছু করার চেষ্টা করব। যাতে আরও অনেক দুঃস্থ ছেলে পড়ার সুযোগ পায়।’

আরও পড়ুনঃ ২০ বছরের প্রতীক্ষার অবসান, হাইকোর্টে জয় শিক্ষকের! বড় রায় আদালতের

অভিজিৎ-র বাবা সুকুমার মাঝি পোল্ট্রি ফার্মের লেবার। মা কাঞ্চনী মাঝি মাঝেসাঝে চাষের কাজে মজুর খাটেন। অভিজিৎ এর বাবা ও মা ছেলের এই এত বড় সাফল্যের কথা শুনে আনন্দে চোখে জল ধরে রাখতে পারছেন না। অভিজিৎ এর মা জানিয়েছেন, ‘আমরা নিজেরা লেখাপড়া জানি না। তাই ছেলেদের পড়াতে চেয়েছি বরাবর। কিন্তু ওর বাবা আর একা সংসার টানতে পারছিল না। বড় ছেলে বিশ্বজিৎ উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পরে পড়াশোনা মাঝ পথে ছেড়ে ডাকবিভাগের চাকরিতে ঢুকে যায়। মেজ ছেলে শুভজিৎ মেদিনীপুর IIT-তে কারিগরি বিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করছে। এবং ছোট ছেলে অভিজিৎ এর স্কুলের শিক্ষকরা এতটাই তাকে সাহায্য করেছে যে সে এখন IIT ভুবনেশ্বর পড়তে পারছে।’

বাছাই করা গুরুত্বপুর্ন খবর পেতে গ্রুপে যুক্ত হোন