ইন্ডিয়া হুড ডেস্ক: আরজি কর কাণ্ডকে ঘিরে একেবারে যেন প্রতিবাদের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে দেশ জুড়ে। বিভিন্ন হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তারেরা একে একে প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন। নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে আন্দোলন করছেন এমনকি কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন তাঁরা। তবে লড়াইটা শুধু তাঁদের নয়। এই লড়াই গোটা রাজ্যের মেয়েদের। এবার সেই মামলায় বড় পদক্ষেপ করল সুপ্রিম কোর্ট।
গত ৯ আগস্ট ভোরে আরজি কর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চারতলায় সেমিনারকক্ষ থেকে উদ্ধার হয়েছিল মহিলা চিকিৎসকের দেহ। তাঁকে ধর্ষণ ও খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। প্রাথমিক ভাবে ওই মামলার তদন্ত চালাচ্ছিল কলকাতা পুলিশ। কিন্তু পরে হাইকোর্টের নির্দেশে আরজি কর হাসপাতালের এই ভয়ানক ঘটনার তদন্তভার নিয়েছে CBI। ইতিমধ্যেই আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে চলেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকেরা। পর পর চার দিন চলেছে জিজ্ঞাসাবাদের পর্ব। এবার ধৃত অভিযুক্তদের পলিগ্রাফ পরীক্ষা করাতে উদ্যোগী হয়েছে CBI। আজ অর্থাৎ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর কাণ্ডের মামলার প্রথম শুনানি চলছে।
আরজি কর কাণ্ডের মামলা এবার সুপ্রিম কোর্টে
প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চে এই মামলা উঠেছে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির এজলাসে উপস্থিত রয়েছেন আইনজীবী কপিল সিব্বল, অভিষেক মনু সিংভি-সহ অন্য আইনজীবীরা। সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাও রয়েছেন এজলাসে। এদিন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় প্রশ্ন করেন, ‘মহিলারা নিরাপদে কাজে যেতে না পারলে, সমাজে সবার অধিকার থাকবে কী ভাবে? এছাড়াও চিকিৎসক হোক কিংবা সুশীল সমাজ, কারও উপরই রাজ্যের ক্ষমতা চাপানো যেন না হয়।’ শুধু তাই নয় তিনি বলেন, ‘মৃতার নাম ও ছবি ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দেখানো হচ্ছে।’ আর এই আবহেই এবার রাজ্য সরকারকে একের পর এক প্রশ্নে বিদ্ধ করে প্রশ্ন বিচারপতি।
রাজ্য পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করলেন প্রধান বিচারপতি
রাজ্যে দফায় দফায় যে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মিছিল বের হচ্ছে তাতে রাজ্য পুলিশের এমন বর্বর আচরণ নিয়েও প্রশ্ন তোলে সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি জানিয়েছেন যে, ‘রাজ্য সরকার কেন ভাঙচুরের ঘটনা রুখতে পারল না বুঝতে পারছি না। এদিকে যখন চিকিৎসকরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন এবং জনতার দল ঢুকে পড়ছে হাসপাতালে বিভিন্ন ঘর ভেঙে ফেলার জন্য তখন পুলিশ কী করছিল। এই গুরুতর অপরাধের জায়গাকে কি সুরক্ষিত করেছিল পুলিশ?’
মহিলাদের নিরাপত্তায় টাস্ক ফোর্স নির্মাণ!
অন্যদিকে প্রধান বিচারপতি রাজ্য সরকারের কাছে জানতে চান, আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষকে সাসপেন্ড করা হয়েছে কি না। জবাবে রাজ্য জানায়, তাঁকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও চিকিৎসকদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ের জন্য প্রধান বিচারপতি সাত জনের একটি জাতীয় টাস্ক ফোর্স গঠনেরও নির্দেশ দিয়েছেন। এক্ষেত্রে টাস্ক ফোর্স দু’টি বিষয়ে পরিকল্পনা করতে বলা হয়েছে প্রথমত, নারী পুরুষ নির্বিশেষে চিকিৎসা পেশায় হিংসা রুখতে হবে। দ্বিতীয়ত, নিরাপদ কাজের পরিবেশের জন্য পারফেক্ট প্রোটোকল তৈরি করতে হবে।
ইতিমধ্যেই হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৩৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে সুপ্রিম করতে জানায় রাজ্য। তবে আজকের শুনানির পর আগামী ২২ আগস্ট CBI কে তদন্তের স্টেটাস রিপোর্ট জমা দিতে বলেছে শীর্ষ আদালত। এবং জন্য হয়েছে আগামী ২৩ আগস্ট এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।