কলকাতাঃ আপনিও কি আগামী বছর WBCS পরীক্ষায় বসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন? তাহলে আপনার জন্য রইল অত্যন্ত জরুরি খবর। জানা যাচ্ছে, আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৫ সাল থেকে এই গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় বিরাট পরিবর্তন আসতে চলেছে। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন। জানা গিয়েছে, ২০২৫ সাল থেকে পশ্চিমবঙ্গ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় বড়সড় বদল আনছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন।
বিজ্ঞপ্তি জারি
আগামী বছর থেকে যে পরীক্ষায় বদল ঘটতে চলেছে তা নিয়ে ইতিমধ্যেই একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। আর এই বিজ্ঞপ্তি দেখেই রীতিমতো পরিক্ষার্থীদের চোখ কপালে উঠেছে। ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে জারিও করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তি। যেখানে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে ২০২৫ সাল নতুন সিলেবাসে হবে WBCS পরীক্ষা। তবে এখানে একটি বিষয় বলে রাখা জরুরি, এই পরিবর্তন প্রিলিমিনারি এবং মেনসের ক্ষেত্রে ঘটানো হবে। এই এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে একের পর এক আপডেট দিলেন দাঁতন ২-এর বিডিও অভিরূপ ভট্টাচার্য।
বদলে যাচ্ছে পরীক্ষার প্যাটার্ন
বিডিও জানিয়েছেন, সামনের বছর পরীক্ষার ক্ষেত্রে কিছুটা ইউপিএসসি পরীক্ষার ছোঁয়া থাকবে। আগে যেটা অবজেক্টিভ ছিল, এখন সেটা ডেসক্রিপটিভ হবে বলে জানানো হয়েছে। এক নজরে জেনে নিন কেমন কী পরিবর্তন ঘটানো হবে পরীক্ষায়।
প্রিলিমিনারির সিলেবাসে বদল
এখন আপনিও নিশ্চয়ই ভাবছেন যে প্রিলিমিনারির সিলেবাসে কী কী বদল হবে? তাহলে জানিয়ে রাখি, সামনের বছর থেকে WBCS প্রিলিমিনারিতে ২০২৫ সাল থেকে দুটো পেপার থাকবে। একটি হল General Studies Paper 1 এবং দুই General Studies Paper 2। প্রতিটি পেপারের ক্ষেত্রে ২০০ করে নম্বর থাকবে এবং পরীক্ষা দেওয়ার জন্য হাতে সময় থাকবে প্রতি পেপারে ২ ঘণ্টা করে। General Studies Paper 1 -এ থাকবে ইংরেজি কম্পোজিশন, জেনারেল সায়েন্স, কারেন্ট ইভেন্ট অব ন্যাশনাল এন্ড ইন্টারন্যাশনাল ইম্পর্টেন্স, ভারতের ইতিহাস, ভূগোল, ইন্ডিয়ান পলিটি এন্ড ইকোনমি, ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল মুভমেন্ট, জেনারেল মেন্টাল অ্যাবিলিটি।
এছাড়া General Studies Paper 2-এ থাকবে কম্প্রিহেনসন, ইন্টার পার্সোনাল স্কিল, লজিক্যাল রিজওনিং এন্ড অ্যানালিটিক্যাল এবিলিটি, ডিসিশন মেকিং এন্ড প্রবলেম সলভিং, জেনারেল মেন্টাল অ্যাবিলিটি, মাধ্যমিক বা সমতুল স্তরের অঙ্ক।
মেনসের সিলেবাসেও বদল
মেনসের সিলেবাসেও কিন্তু আমূল বদল ঘটানো হয়েছে। মেনস পরীক্ষায় দুটো ভাগ আছে। উত্তীর্ণ হতে একটা ধাপ। আরেকটা ক্ষেত্রে নম্বর মেধাতালিকার জন্য যোগ হবে। পেপার A-র পূর্ণমান ৩০০। যার জন্য সময় থাকবে ৩ ঘণ্টা। পেপার B-এর ক্ষেত্রে ৩ ঘণ্টা সময় বরাদ্দ থাকবে। ৩০০ মার্কসে হবে পরীক্ষা। তবে এই দুটো পরীক্ষার নম্বর মেধাতালিকায় যোগ হবে না। এরপর আরও আটটি পেপার রয়েছে। সবটাই হবে বর্ণনামূলক। WBCS গ্রুপ A বা B-এর জন্য মেনসের Paper 1 থেকে Paper 8 পরীক্ষা দিতে হবে। চিন্তার কিছু নেই। প্রতিটি পেপারের ক্ষেত্রে থাকবে ৩ ঘণ্টা করে। অর্থাৎ সবমিলিয়ে মেনসের পূর্ণমান হবে ২০০০। WBCS গ্রুপ A বা B-এর জন্য পেপার ওয়ান (১) থেকে পেপার সিক্স (৬) পর্যন্ত এই পরীক্ষা। সংশ্লিষ্টদের ক্ষেত্রে অপশনাল পরীক্ষা দিতে হবে না।
পেপার A-তে থাকবে বাংলা অথবা নেপালি। এর মধ্যে থাকবে চিঠি লেখা, রিপোর্ট লেখা, প্রেসি, কম্প্রিহেনসন, ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদ অথবা ইংরেজি থেকে নেপালি অনুবাদ, রচনা। এতে উত্তীর্ণ হতে হবে। ন্য়ূনতম ৩০ শতাংশ নম্বর পেতেই হবে।
পেপার B- হল ইংরেজি পেপার। এই পরীক্ষা মাধ্যমিক অথবা সমতুল পরীক্ষার মতোই। এই পেপারে থাকবে প্রেসি, ভোকাবুলারি অর্থাৎ শব্দভাণ্ডার যাচাই, রচনা অথবা রিপোর্ট লেখা। বাংলা/ হিন্দি/ উর্দু/ নেপালি/ সাঁওতালি থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করতে হবে। পেপার A-র মতো এক্ষেত্রেও ন্য়ূনতম ৩০ শতাংশ নম্বর পেতেই হবে। শুধুমাত্র উত্তীর্ণ হতে হবে।
কোন পেপারে কী কী থাকবে?
এক নজরে দেখে নিন কোন পেপারে কী কী থাকবে।
যেমন পেপার ১-এ থাকবে ইংরেজি রচনা এবং কম্পোজিশন, পেপার ২-এ থাকবে বাংলার কৃষ্টি এবং সংস্কৃতি, পেপার ৩-এ থাকবে ইতিহাস এবং ভূগোল, পেপার ৪-এ থাকবে কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, জিকে, জেনারেল সায়েন্স, সায়েন্স এন্ড টেক ও কম্পিউটার, পেপার ৫-এ থাকবে ইন্ডিয়ান ইকোনমি এন্ড পলিটি, পেপার ৬-এ থাকবে অ্যারিথমেটিক এন্ড রিজিওনিং। পেপার ৭ এবং পেপার ৮ হল অপশনাল পেপার। এক্ষেত্রে গ্রুপ A এবং গ্রুপ B-এর পূর্ণমান ২০০। গ্রুপ C-এর ক্ষেত্রে ১৫০ এবং গ্রুপ D-এর ক্ষেত্রে ১০০। গ্রুপ A এবং গ্রুপ B-র জন্য সবমিলিয়ে ২২০০ নম্বরের ভিত্তিতে মেধাতালিকা প্রকাশ হবে। গ্রুপ C-এর ক্ষেত্রে সেটা ১৬৫০ এবং গ্রুপ D-এর ক্ষেত্রে ১৬০০ পূর্ণমানে প্রকাশিত হবে মেধাতালিকা।
কতটা লাভ হবে পরীক্ষার্থীদের ?
এবার এই নতুন ব্যবস্থার ফলে পরীক্ষার্থীদের কতটা লাভ বা ক্ষতি হবে সে সম্পর্কে বড় মন্তব্য করেছেন দাঁতন ২-এর বিডিও অভিরূপ ভট্টাচার্য। তিনি জানিয়েছেন, এখন লেখা অভ্যাস করতে হবে। কারণ পুরোটাই বর্ণনামূলক হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে প্রথমে একটু সকলের সমস্যা হবে হয়তো কিন্তু এটা সকলের সুবিধার জন্যই আনা হয়েছে। অর্থাৎ ফাঁকিবাজি করলে চলবে না। এক কথায় সকলকে খুঁটিয়ে বই পড়ার পরামর্শ দিচ্ছেন অভিরূপ। বইয়ের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সব টপিক পড়তে হবে। তবেই পরীক্ষায় সাফল্য মিলবে।