নয়া দিল্লিঃ কথায় আছে, আজ যে রাজা কাল সে ফকির। কিন্তু ভারতে এমনও একজন ছিলেন, যিনি রাজা থেকে সোজা জেলের আসামি হয়েছিলেন। এক বিখ্যাত কোম্পানির মালিক অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা নয়-ছয় করে আর্থিক তছরূপের মামলায় জেলে গিয়েছিলেন। অথচ, কিছু বছর আগেও সলমন খান ও রবিনা ট্যান্ডনের মতো বলিউড সেলিব্রিটিরা, এই ব্যবসায়ীর সঙ্গে কাজ করতেন।
আমরা কথা বলছি Rotomac পেন কোম্পানির মালিক বিক্রম কোঠারিকে নিয়ে। এই পেনের নাম হয়তো আপনিও শুনেছেন। কয়েকবছর আগে যাঁরা পড়াশুনা শেষ করেছেন, তারা কমবেশি সবাই একবার হলেও Rotomac পেন ব্যবহার করেছেন। কিন্তু এই কোম্পানির পেন আর বাজারে পাওয়া যায়না কেন? সেটি জানতে হলে আপনাকে এই পেন কোম্পানির ব্যবসা সম্পর্কে জানতে হবে।
Pan Parag পান মশলা থেকে Rotomac পেন কোম্পানি
নব্বইয়ের দশকে মনসুখভাই কোঠারি পান মশলার ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৮৩ সালে কোঠারি প্রোডাক্টস লিমিটেড স্থাপিত হয়। আর এই কোম্পানির Pan Parag পান মশলা গোটা দেশে বিখ্যাত হয়ে ওঠে। এই ব্যবসার চূড়ান্ত সাফল্যের সময়েই Rotomac পেন কোম্পানির প্রতিষ্ঠা করেন বিক্রম কোঠারির বাবা মনসুখভাই কোঠারি। ১৯৯২ সালে কানপুরে প্রতিষ্ঠিত হয় Rotomac। প্রথমে Rotomac পেনের দাম ছিল সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যেই। তাই এই কোম্পানির পেন খুব তাড়াতাড়ি সবার পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নেয়। সেই সঙ্গে Rotomac পেনের বিজ্ঞাপনের ‘Likhte Likhte Love Ho Jaye’ কথাটি এখনো অনেকের মনে বিঁধে রয়েছে। কম সময়ে দেশজুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় Rotomac।
দেশবিদেশে ব্যবসা করেছিল Rotomac
Rotomac শুধুমাত্র ভারতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি, বরং আন্তর্জাতিক পর্যায়েও ব্যবসা করেছিল এই কোম্পানি। এশিয়ার অন্যান্য দেশ এবং ইউরোপের কয়েকটি দেশে Rotomac পেন জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।কোম্পানির সফল ব্যবসা শুধু পেন বা লেখার সামগ্রীতেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বিক্রম কোঠারি এবং তাঁর পরিবার অন্যান্য শিল্প ক্ষেত্রেও তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের চেষ্টা করেন। এই কারণে ব্যাঙ্ক থেকে বড় অঙ্কের টাকা ঋণ নিয়ে তাঁরা বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগ শুরু করেন।
যেভাবে ঋণের দায়ে ডুবে গেল Rotomac
Rotomac পেন কোম্পানির পতনের মূল কারণ ছিল অর্থনৈতিক দুর্নীতি ও ঋণ কেলেঙ্কারি। ২০১৮ সালে Rotomac Global Pvt. Ltd.-এর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের সঙ্গে প্রায় ৩,৬৯৫ কোটি টাকার ঋণ কেলেঙ্কারি প্রকাশিত হয়। ইন্ডিয়া টুডে-র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কোম্পানি বেশ কিছু ব্যাঙ্কের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছিল কিন্তু সেই ঋণ শোধ করতে পারেনি। এটা অভিযোগ করা হয়েছিল যে বিক্রম কোঠারি এবং তাঁর পরিবার ঋণ নেওয়ার পরে বিভিন্ন জায়গায় বিনিয়োগ করেন। সেখানে লোকসান হওয়ার কারণে ঋণের বোঝা বাড়তে থাকে।
গ্রেপ্তার হয়ে জেল যেতে হয়েছিল Rotomac কর্ণধার বিক্রম কোঠারিকে
২০১৮ সালে ED এবং CBI বিক্রম কোঠারি এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। এরপর তাঁদের সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং বিক্রম কোঠারিকে গ্রেফতার করা হয়। বিচারের পর জেলবাস করতে হয়েছিল তাঁকে। তবে জেলে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় কারণে জামিন মঞ্জুর হয়। বাড়ি ফিরে ২০২২ সালে বিক্রম কোঠারি মারা যান। এর মাঝে Rotomac কোম্পানির স্বত্ব ২০২০ সালে মাত্র ৩.৫ কোটি টাকায় বিক্রি হয়ে যায়।