দিলীপ, শুভেন্দুকে বাদ দিয়ে শমীক ভট্টাচার্য কেন বঙ্গ বিজেপির সভাপতি? প্রকাশ্যে কারণ

প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান। কেন্দ্রিয় মন্ত্রকের আলোচনার মাধ্যমে শেষপর্যন্ত নির্ধারণ করা হল বঙ্গ বিজেপির একাদশতম রাজ্য সভাপতির নাম। আনুষ্ঠানিক ভাবে শমীক ভট্টাচার্যকে রাজ্য সভাপতি ঘোষণা করে দিল বিজেপি। তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হল সভাপতির শংসাপত্র। নয়া দায়িত্ব পাওয়ার পরই শমীকের নেতৃত্বাধীন নতুন বিজেপির আগামী নিয়ে বার্তা দিলেন। স্থির করেছেন ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের লক্ষ্য।

নয়া সভাপতি হিসেবে উঠে এসেছিল শুভেন্দুর নাম!

তবে বিজেপির অন্দরে অনেকের অনুমান ছিল, বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যে সভাপতি পদে বদল করা হবে না। অর্থাৎ ভোট নির্বাচন পর্যন্ত সুকান্ত মজুমদারকেই সভাপতির পদে রেখে দেওয়া হবে। তবে আরেক দল মনে করছিল যে একান্তই রাজ্যের নয়া সভাপতির দরকার পড়ে তাহলে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুকে সভাপতি করা হবে। কিন্তু বিজেপির দলীয় কাঠামোয় বিরোধী দলনেতা পরিষদীয় রাজনীতির লোক হবেন। সভাপতি হবেন সংগঠনের একজন। শেষে বহু জল্পনা কল্পনার পর অবশেষে নাম উঠে এল শমীক ভট্টাচার্যের।

কেন বেছে নেওয়া হল শমীককে?

যার দরুন রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে যে, বিজেপি কেন দিলিপ ঘোষ, শুভেন্দু অধিকারীকে বাদ দিয়ে শমীক ভট্টাচার্যকে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সভাপতি করল। আর সেই সমীক্ষায় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা তুলে ধরল বেশ কয়েকটি কারণ। যার মধ্যে প্রথম কারণ হল মধ্যবিত্ত শিক্ষিত ভোটারদের আকর্ষণ।

আসলে শমীক ভট্টাচার্য হলেন মধ্যবিত্ত সমাজের একজন বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষিত। যার সঙ্গে সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষের অনেকটাই মিল আছে। সেক্ষেত্রে তাই বিজেপি চায় শহুরে, শিক্ষিত ও মধ্যবিত্ত ভোটারদের আরও বেশি করে আকৃষ্ট করতে মোক্ষম হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে শমীক।

দিলীপকেই বা কেন বেছে নেওয়া হল না?

দ্বিতীয় কারণ হল শুভেন্দু অধিকারী প্রথম দিকে তৃণমূল কংগ্রেসে কাজ করলেও পরে সে বিজেপিতে যোগ দেয়। যতই একজন এইমুহুর্তে দক্ষ দলনেতা হয়ে উঠুক না কেন অনেকেই মনে করেন তিনি তৃণমূল থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে আসলেও, বিরোধীরা তাঁকে দলবদলু বলে আক্রমণ সানায়। তাই কেন্দ্রিয় মন্ত্রক দলের পুরোনো কর্মীর উপরেই ভরসা রেখেছে।

এখন প্রশ্ন উঠতে পারে তাহলে সেক্ষেত্রে দিলীপ ঘোষও দলের পুরোনো কর্মী, সেক্ষেত্রে কেন তাঁকে নয়া রাজ্য সভাপতি করা হল না। আসলে অনেক সময় দেখা যায় দিলীপ ঘোষের আগ্রাসী ও বিতর্কিত মন্তব্যের ফলে দলের ভাবমূর্তি অনেক সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই সেক্ষেত্রে দলের ভাবমূর্তি নরম ও গ্রহণযোগ্য করতে হলে ভরসা শমীক-ই।

শুধু তাই নয়, অনেক সময় পুরাতন এবং নতুন সদস্যদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বিতর্ক লেগেই থাকে, যার দ্রষ্টব্য উদাহরণ হল শুভেন্দু অধিকারী এবং দিলীপ ঘোষ। তাই সেক্ষেত্রে দলের অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামাল দিতে শমীক ভট্টাচার্যের মতো তুলনামূলকভাবে নিরপেক্ষ ও নমনীয় নেতার খুব প্রয়োজন দলের। তাই কেন্দ্রিয় মন্ত্রক ভেবে চিন্তেই এই কাজের দায়িত্ব তুলে দিয়েছে শমীক ভট্টাচার্যের কাঁধে। যাতে দলের মধ্যে ঐক্যবদ্ধতা বজায় থাকে।

আরও পড়ুন: আর ভয় নেই বিদ্যুৎ বন্ধ হওয়ার, আদানির সমস্ত বকেয়া মিটিয়ে দিল বাংলাদেশ

বিধানসভা ভোটে কে হবে বিজেপির মুখ?

এদিকে রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য নয়া রাজ্য সভাপতি হওয়ার পরে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা একটি স্পষ্ট আন্দাজ করে নিয়েছেনে যে হয়ত আগামী বিধানসভা ভোটে এবার বিজেপির ‘মুখ’ হবেন শুভেন্দু অধিকারী। যদিও শমীক অবশ্য বলছেন, ‘‘এই মুহূর্তে কোনও নির্দিষ্ট মুখ বা নির্দিষ্ট ব‍্যক্তির হাতে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ নেই। তবে বাংলার মানুষ নিজেই স্থির করে নিয়েছেন যে লড়াই কার সঙ্গে কার হবে। স্থির করে নিয়েছেন তৃণমূলের বিসর্জন হবে। সুতরাং কে মুখ, কে কোন পদে, সেটা বড় কথা নয়।”

রাজ্য রাজনীতি, বিনোদন থেকে শুরু করে খেলা সংক্রান্ত নানা ধরনের খবরের লেটেস্ট আপডেট পেতে এখনই ফলো করুন আমাদের India Hood Bangla কে।

Leave a Comment