শ্বেতা মিত্রঃ উত্তরে হিমালয়, দক্ষিণে সাগর। বাংলার প্রাকৃতিক বৈচিত্রের জুড়ি মেলা ভার। পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যেক জেলার বিশেষত্ব রয়েছে, ঘুরতে যাওয়ার জন্য রয়েছে প্রচুর জায়গা। এ রাজ্যের এমন একাধিক জায়গা রয়েছে যেগুলো ‘ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’-এর সম্মান। এই প্রতিবেদনে এমনই ৩ হেরিটেজ সাইটের সঙ্গে পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হবে যেগুলো বাড়ির কাছেই। দিন কয়েকের ছুটি নিয়ে অনায়াসে ঘুরে আসতে পারবেন বাংলার এই তিন ভ্রমণস্থল থেকে।
দার্জিলিংয়ের টয় ট্রেন
শুরু করা যাক উত্তর থেকে, ক্রমে আমার নেমে আসবো দক্ষিণে। দার্জিলিং যাননি এমন বঙ্গবাসীর দেখা পাওয়া খুবই কঠিন। দার্জিলিং-এর টয় ট্রেনের রয়েছে হেরিটেজের তকমা। এখন দার্জিলিং যাওয়া খুবই সহজ। কিন্তু আগে এই পাহাড়ে যাওয়া ছিল এক বিষম কাজ। সাহেবরা তৈরি করেন দার্জিলিং শহরকে। শহর না হয় তৈরি হল, কিন্তু সমতল থেকে ওতো উঁচুতে যাওয়া হবে কী করে? বসানো হল রেল লাইন। চিরাচরিত রেল লাইনের থেকে এই লাইন অনেক ছোটো। ১৮৮১ সালে শুরু হল টয় ট্রেন পরিষেবা। ১৮৮১ থেকে এখন ২০২৪, এত বছর পরেও টয় ট্রেনের জনপ্রিয়তা এতটুকু কমেনি, বরং সময়ের সঙ্গে বেড়েছে। শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং টয় ট্রেনের যাত্রাপথ। পাহাড়ের রূপ-লাবণ্য আরও ভাল করে পর্যবেক্ষণ করার জন্য টয় ট্রেন হতে পারে ভ্রমণের আদর্শ মাধ্যম। অলস গতিতে চলতে চলতে পৌঁছে যাবেন দার্জিলিং। মেঘে-কুয়াশায় টয় ট্রেনের ধোঁয়ায় মনে পড়ে যেতে পারে পুরোনো সে দিনের কথা। ১৯৯৯-এর ২ ডিসেম্বর ইউনেস্কো দার্জিলিং থেকে ঘুম-এর মধ্যে চলা জয় রাইডকে ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’-এর তকমা দিয়েছিল।
শান্তিনিকেতন
এক সময় ছিল অনুর্বর, ঊষর প্রায় জমি। নাম ছিল ভুবনডাঙ্গা। ভুবনডাঙার জমিতে কোনও কিছু চাষ করে ছিল দুষ্কর। এই জায়গাটায় ক্রমে উঠে আসে বিশ্ব মানচিত্রে। নাম দেওয়া হয় শান্তিনিকেতন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বহু স্মৃতিবিজড়িত সেই শান্তিনিকেতন, যেখানে এসে পৌঁছেছিল নোবেল প্রাপ্তির সংবাদ। ২০২৩ সালে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছিল শান্তিনিকেতন। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, সোনাঝুরির হাট, সোনাঝুরি জঙ্গল, কোপাই নদী… এখানে দর্শনীয় স্থানের অভাব নেই। চাইলে আরও একটু এগিয়ে চলে যেতে পারেন সুরুলের দিকে।
সুন্দরবন
প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় সুন্দরবনের অবদান লিখে শেষ করা যাবে না। সুন্দরী গাছ থেকে এই জায়গার নাম করা হয়েছে সুন্দরবন। শুধুমাত্র প্রকৃতির টানে এখানে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসেন উৎসাহী, ভ্রমণপিপাসুরা। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের দেখা মিলবে এখানেই। সেই সঙ্গে রয়েছে কুমির, কত রকমের পাখি, গাছপালা। নদী বক্ষে ভ্রমণ করতে করতে আচমকা নৌকা হয়তো ঢুকে পড়বে কোনও ঝাড়িতে। দু’দিকে শুধু গাছ আর গাছ। হয়তো দেখবেন কাদামাটির ওপর শুয়ে রয়েছে কুমির, বোনের গভীরে চলে গিয়েছে বাঘের পায়ের ছাপ