বিশ্বের সবচেয়ে দামী চোখের জল! এক ফোঁটায় নিস্ক্রিয় হবে ২৬ সাপের বিষ, কোন প্রাণীর?

সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: চোখের জলকে আমরা সাধারণভাবে দুঃখ প্রকাশের চিহ্ন হিসেবেই ভেবে থাকি। তবে আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন যে, চোখের জল হতে পারে মানুষের প্রাণ বাঁচানোর ওষুধ? হ্যাঁ, তাও যদি হয় উঠের চোখের জল, তাহলে কেমন হবে? 

শুনতে অবাক লাগলো এক্কেবারে সত্যি। কারণ উটের চোখের জলে এখন পৃথিবীর সবথেকে দামি জিনিসের মধ্যে একটি। হ্যাঁ, এক ফোটা চোখের জলই নাকি 26টি বিষাক্ত সাপের বিষ নির্মূল করে দিতে পারে! ভাবতে পারছেন?

রাজস্থানের মরুভূমি থেকেই প্রাণ বাঁচানোর ঔষধ

আসলে আমরা সকলেই জানি, মরুভূমির জাহাজ উট! তবে রাজস্থানের বালির ঢিবির মধ্য দিয়ে চলতে থাকা এই উট এবার চিকিৎসা বিজ্ঞানের যুগান্তকারী সম্পদ নিয়ে এসেছে। সম্প্রতি গবেষকরা জানাচ্ছেন, উঠের চোখের জল এবং রক্তের মধ্যে থাকা অ্যান্টিবডি সাপের বিষের বিরুদ্ধে মারাত্মক বিষক্রিয়া হিসেবে কাজ করতে পারে। ফলে মানুষের প্রাণ বাঁচানোর জন্য এটি হতে পারে একেবারে মুক্তোর খনি!

কীভাবে কাজ করে এই উটের চোখের জল?

গবেষকরা প্রথমে বিশেষ প্রজাতির বিষধর সাপ স-স্কেল্ড ভাইপারের বিষ দিয়ে উটকে ইমিউনাইজ করেছিলেন। এরপর তারা দেখেন, উটের রক্ত এবং চোখের জল থেকে সংগৃহীত অ্যান্টিবডিগুলি সাপের বিষের বিরুদ্ধে ভয়ংকর প্রভাব ফেলছে। যেমন রক্তক্ষরণ, রক্ত জমাট বাঁধা এবং এমনকি অ্যান্টিভেনম হিসেবেও কাজ করছে। হ্যাঁ, এই অ্যান্টিবডিগুলি ঘোড়ার রক্ত থেকে তৈরি প্রচলিত অ্যান্টিভেনমের তুলনায় কম খরচে উৎপাদন করা যাচ্ছে এবং সেগুলির থেকেও অনেক বেশি কার্যকর। 

কেন এত দামি এই চোখের জল?

আসলে ভারতে প্রতিবছর প্রায় 58 হাজার মানুষ সাপের কামড়ে মারা যায় বলে রিপোর্ট জানাচ্ছে। এমনকি 1.4 লক্ষ মানুষ স্থায়ীভাবে পঙ্গুও হয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রেই সঠিক সময় চিকিৎসা না পাওয়া, পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিভেনমের অভাবে রোগীর মৃত্যু ঘটে। আর এহেন পরিস্থিতিতে উটের চোখের জল হতে পারে জীবন বাঁচানোর ঔষধ।

কারণ, নতুন প্রজন্মের অ্যান্টিভেনম গ্রামাঞ্চলের রোগীদের জন্য এখন সস্তা ও সহজলভ্য সমাধান হয়ে উঠতে পারে। এছাড়া গবেষকরা বলছেন, উট পালকদের জন্যও এটি হতে পারে নতুন আয়ের উৎস। কারণ প্রতিটি উট থেকে গড়ে মাসে 5000 থেকে 10,000 টাকা পর্যন্ত তার মালিকরা আয় করতে পারবেন।

আরও পড়ুনঃ বদলে গেল ৬৪ বছরের পুরনো নিয়ম, OBC নিয়ে বিরাট রায় সুপ্রিম কোর্টের

কারা করেছে এই গবেষণা?

সূত্রের খবর, এই গবেষণাটি ন্যাশনাল রিসার্চ সেন্টার অন ক্যামেলের বিজ্ঞানীরা করেছেন। তাদের এই আবিষ্কারকে কেন্দ্র করে এখন বহু ফার্মা কোম্পানি এই প্রযুক্তিকে বাস্তবে রূপ দিতে আগ্রহী হচ্ছে। এমনকি প্রচুর ক্ষতিপূরণ দিয়ে স্থানীয় উট চাষিদের কাছ থেকে এখন চোখের জল ও রক্তও সংগ্রহ করা হচ্ছে।  এখন দেখার বিজ্ঞানের সত্যিই জয় হয় কিনা।

Leave a Comment