আধার কার্ড নাগরিকত্ব প্রমাণ করে না! সুপ্রিম কোর্টে জানিয়ে দিল নির্বাচন কমিশন

বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: এতদিন যা জেনে এসেছেন, এক লহমায় সেই ধারণা বদলে দিল নির্বাচন কমিশন। সাধারণত নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র বলতে সিংহভাগই বোঝেন আধার কার্ড। কিন্তু না, নির্বাচন কমিশন বলছে অন্য কথা। বৃহস্পতিবার বিহারের ভোটার তালিকার নিবিড় সমীক্ষা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে হওয়া মামলার শুনানি চলাকালীন নির্বাচন কমিশন দাবি করে, আধার কার্ড নাগরিকত্ব প্রমাণ করে না।

আধার কার্ড নাগরিকত্বের প্রমাণ পত্র নয়?

বৃহস্পতিবার বিহারের ভোটার তালিকার সমীক্ষা সংক্রান্ত মামলা উঠেছিল সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি শুধাংশু ধুলিয়া ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চে। এদিন শুনানি পর্ব শুরু হতেই ডিক্লারেশন ফর্মে উল্লেখ করতে বলা 11 প্রমাণপত্রের তালিকা থেকে ভোটার কার্ড এবং আধার কার্ড বাদ দেওয়ার বিষয়টিকে কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশনকে কাঠগড়ায় তুলেছিলেন মামলাকারীদের আইনজীবীরা।

এদিন, মামলাকারীদের একের পর এক প্রশ্ন শোনার পর সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা বলে বসেন, আধার কার্ড ভারতীয় জন প্রতিনিরিত্ব আইন অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয় নথি। কিন্তু সবটা জানা সত্ত্বেও কেন নির্বাচন কমিশন তা গ্রহণ করছে না?

বিচারপতিদের এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে, নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদি বোঝান, ভারতীয় আইনের 326 নম্বর ধারা অনুযায়ী এই সংক্রান্ত বিষয়ে কমিশন সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এমন যুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ধুলিয়া বলেন, আর যাই হোক, নাগরিকত্ব একেবারেই নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতার মধ্যে পড়ে না। নাগরিকত্ব আসলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীনে।

শেষ পর্যন্ত কমিশনেই আস্থা রাখে সুপ্রিম কোর্ট

বিহারে ভোটার তালিকার নিবিড় সমীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই প্রশ্ন উঠছিল, এত অল্প সময়ের মধ্যে নির্বাচনের আগে কীভাবে এত সংখ্যক মানুষের তথ্য প্রমাণ এবং নথি যোগাড় করবে কমিশন? শেষ পর্যন্ত, নথি জোগাড় করতে গিয়ে কোনও ভুল হলে তার দায় কে নেবে? সমস্যায় তো ভুগতে হবে সাধারণ মানুষকেই…

এমন সব প্রশ্নের মাঝেই বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের পর্যবেক্ষণ ছিল, এই প্রক্রিয়াটি কমিশনকে আরও আগে শুরু করতে হতো। আসলে তাড়াহুড়োর বসে যদি কোনও ভুল হয়ে যায় সেক্ষেত্রে সমস্যায় পড়বেন সাধারণ মানুষ। যদিও প্রাথমিকভাবে বিচারপতিরা কমিশনকে কিছুটা ঠুকলেও, দ্বিতীয় দফার শুনানি পর্ব শুরু হতেই দীর্ঘ তর্ক বিতর্কের পর শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের কাজেই ভরসা রাখল সুপ্রিম কোর্ট।

অবশ্যই পড়ুন: ব্রাহ্মণ মেয়েদের জন্য ১৬ লাখ টাকা! ধর্মান্তকরণের ব্যবসায় ১০০ কোটির সম্পত্তি ছাঙ্গুর বাবার

এদিন শুনানি একেবারে শেষ পর্বে পৌঁছে আদালত জানায়, বিহারে বিশেষ এবং নিবিড়ভাবে সমীক্ষার কাজ চালানোর জন্য অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। তবে গোটা বিষয়টিই যথেষ্ট জটিল এবং সময় সাপেক্ষ। তাই শেষ পর্যন্ত নির্বাচনকে কমিশনকে সমস্ত পদ্ধতি মেনে কাজ করার নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। যদিও সেসবের মাঝেই নাগরিকত্বের প্রমাণ বা পরিচয়পত্র হিসেবে আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, রেশন কার্ডকে গ্রাহ্য করার পরামর্শ দেওয়া হয় কমিশনকে। এখন দেখার, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র নিয়ে কমিশন-পূর্বের অবস্থানে বহাল থাকে কিনা!

Leave a Comment