প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে ফের হাইকোর্টে জোর ধাক্কা খেল SSC বা স্কুল সার্ভিস কমিশন। আগামী ৭ দিনের মধ্যে যোগ্য প্রার্থীকে চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ বাকিদের মতো চাকরি চলে গিয়েছিল নবম-দশমের এক শিক্ষিকার। এদিকে সে যোগ্য প্রার্থী হওয়া সত্ত্বেও এবং আপার প্রাইমারির মাধ্যমে স্কুলে চাকরি পাওয়ার পরেও যোগদান করতে দেরি হওয়ায় SSC কাজে যোগ দিতে দেয়নি। আর সেই সুবাদেই এবার হাইকোর্টে উঠল মামলা।
ঘটনাটি কী?
প্রাপ্ত রিপোর্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, নদিয়ার একটি স্কুলে নাহিদা সুলতানা নামে একজন নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষিকা ছিলেন। এরপর SSC-র তরফে ২০১৬ সালে আপার প্রাইমারির যে নিয়োগ প্রক্রিয়া হয়েছিল সেখানে মেধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর তিনি গত বছর ডিসেম্বর মাসে শিক্ষকতা করার চাকরিটি পান। কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী আপার প্রাইমারিতে পঞ্চম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত নিয়োগ নিশ্চিত হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে স্কুলে যোগদান করতে হয় নির্বাচিত শিক্ষক বা শিক্ষিকাকে।
সেইসময় ওই শিক্ষিকা নাহিদা সুলতানা তখন নদিয়ার স্কুলে নবম-দশম শ্রেণীতে কর্মরত থাকায় দক্ষিণ দিনাজপুরের লাঙ্গুলি ২ বানেশ্বরী জুনিয়র হাইস্কুলে যোগ দেওয়ার জন্য কমিশনের থেকে সময় চেয়ে নিয়েছিলেন। এমতাবস্থায় গত এপ্রিলে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২০০১৬ এর প্যানেল বাতিল হওয়ার কারণে চাকরি হারান নাহিদা। যদিও সেই নির্দেশে শীর্ষ আদালত জানিয়েছিল যে, যোগ্যরা এর আগে যদি অন্য কোনও সরকারি চাকরি করে থাকে তাহলে সেখানে ফিরে যেতে পারেন।
SSC-র কাছে আবেদন শিক্ষিকার
এদিকে নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ায় নাহিদা সুলতানাকে আপার প্রাইমারির চাকরি দিতে চাইছিল না SSC। নিয়োগ-প্রক্রিয়াও থমকে গিয়েছিল তাঁর। এসএসসির কাছে মামলাকারি আবেদন করেন আপার প্রাইমারি স্কুলে অনুমোদন পত্রের সময়সীমা বাড়িয়ে তাকে পুনরায় কাজে যোগদানের সুযোগ দেওয়া হোক।
তবে এসএসসি কমিশন এই বিষয়ে কর্ণপাত না করায় শেষে বাধ্য হয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় নাহিদা। গতকাল অর্থাৎ শুক্রবার, হাইকোর্টের বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্যের বেঞ্চে ওঠে সেই মামলা।
মামলাকারীর দাবি
এদিন মামলাকারীর আইনজীবী দাবি করেন যে SSC কাজে যোগদানের সময়সীমা বাড়াতে পারবে তখনই যখন চাকরিপ্রার্থীর করা আবেদনে বিশেষ কারণ থাকবে। সেক্ষেত্রে নাহিদা নিয়ম মেনেই আবেদন করলে SSC সেই আবেদনে কোন সাড়া দেয়নি। এমনকি কমিশনের ভুলে একজন যোগ্য প্রার্থী হয়েও তার নবম-দশম শ্রেণীর চাকরিও চলে গেছে।
পাল্টা দাবি তোলে SSC-র আইনজীবী। তিনি বলেন, যেহেতু সে নিজের ইচ্ছেতে কাজে যোগ দেয়নি, তাই তার সময় বাড়ানো যাবে না। সময়সীমা কাকে বাড়ানো হবে তার চূড়ান্ত ক্ষমতা শুধুমাত্র SSC-র রয়েছে।
আরও পড়ুন: কসবার পর এবার কলকাতার IIM কলেজ! ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার এক ছাত্র
বড় রায় হাইকোর্টের
সবশেষে উভয়পক্ষের বক্তব্য শোনার পর বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্য মামলাকারীর পক্ষে রায় প্রদান করে। বিচারপতি স্পষ্ট জানিয়ে দেয় যে, SSC কমিশনকে শীঘ্রই নাহিদা সুলতানার চাকরি ফিরিয়ে দিতে হবে। এবং চাকরিতে যোগদানের সময়সীমায় বাড়ানোর কথাও বলেন বিচারপতি। সময় সীমা বাড়ানোর ৭ দিনের মধ্যে স্কুল কর্তৃপক্ষ যেন ওই শিক্ষাকে নিয়োগপত্র তুলে দেন সেকথাও স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয় আদালতের তরফ থেকে।