সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: সকালের আলো তখন আবছা, ঠিকঠাক দেখা যাচ্ছে না চারিদিক! হাওড়ার ব্যস্ত রাস্তা ধীরে ধীরে জেগে উঠছে! আর ঠিক সে সময় একটি পুরনো বাস নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ছেন এক মহিলা! হ্যাঁ, বাসের এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে সেই মহিলা কন্ডাক্টরের কন্ঠে শোনা যায়, ধর্মতলা ধর্মতলা!
আসলে তিনি আর কেউ নন। তিনি হলেন ডলি রানা (Dolly Rana), বয়স 58। পরনে শাড়ি, কাঁধে কন্ডাক্টরের ব্যাগ আর হাতে টিকিট, এভাবেই চলছে লেডি কন্ডাক্টরের জীবন। কিন্তু এই পরিচয়ের আড়ালেই লুকিয়ে রয়েছে জীবনের এক কঠিন গল্প! সেটাই জানাবো আজকের এই প্রতিবেদনে।
বাবার স্বপ্নই পূরণ করছে মেয়ে…
ডলির বাবা চাইতেন যে, নিজের একটি বাস থাকবে। তবে খুব বড় কিছু নয়, শুধু পরিশ্রম করে সম্মানের সঙ্গেই বাঁচতে চাইতেন তিনি। কিন্তু স্বপ্ন পূরণের আগেই তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। আর ডলি তাঁর বাবার সেই স্বপ্নকেই পূরণ করতে রাস্তায় নেমেছে। হ্যাঁ, ব্যাঙ্কের থেকে ঋণ নিয়ে কিনে ফেলেন একটি বাস।
তিনি ভেবেছিলেন, বাস চালু করলেই রোজগার হবে, আর ভালোভাবে সংসার চলবে। তবে বাস্তবে পরিস্থিতি অন্য কথা বলছে। কারণ ঋণের বোঝা আর খরচের চাপে দিনের পর দিন দেয়ালে পিঠ থেকে যাচ্ছিল তাঁর। অনেকেই বলছিল, বাসটি বিক্রি করে দাও, এটা মেয়েদের কাজ নয়। তবে ডলি ভেঙ্গে পড়েননি। বরং, নিজেই কন্ডাক্টরের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন।
শাড়ি পড়েই নেমে পড়েন রাস্তায়
প্রতিদিন রোদ-ঝড়-জল-বৃষ্টি উপেক্ষা করে শাড়ি পরেই কন্ডাক্টরের ব্যাগ নিয়ে রাস্তায় নেমে পরেন ডলি। কেউ দেখে অবাক হয়ে যায়, আবার কাউকে বলতে শোনা যায়, মেয়ে হয়ে বাসের কন্ডাক্টর! তবুও তিনি থেমে থাকেননি। কারণ, ডলি শুধুমাত্র তার বাবার স্বপ্নই পূরণ করতে চায়। বাসে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটা থেকে শুরু করে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলা, এমনকি সময় মতো গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া, সবই করেন তিনি।
তবে সময় যত গড়িয়েছে, ডলির লড়াইও ততো বেড়েছে। পুরনো বাসটা নষ্ট হতে শুরু করে, আর মেরামতের খরচ দিনের পর দিন বাড়ে। অন্যদিকে হাওড়ার রাস্তায় ই-রিক্সার দাপট দিনের পর দিন বাড়ার ফলে ছোট রুটে যাত্রীদের সংখ্যা অনেকটাই কমেছে। ফলে রোজগার কমতে থাকে এবং ঋণের চাপ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তবে ডলি হার মানেননি।
আরও পড়ুনঃ বান্ধবীকে IPS বানাতে নয়! গরুকে রাষ্ট্রীয় মাতার পরিচয় দিতে ১২১ লিটার গঙ্গা জল নিয়ে যাত্রা
এক ফোন কলই বদলে দিল ডলির ভবিষ্যৎ
সম্প্রতি একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে ডলি নিজের সমস্যার কথা বলেছেন। তিনি বলেন যে, আমি নতুন একটি রুট চাই, যেটা একটু ভালো চলে। আর সেই ভিডিও পৌঁছে যায় রাজ্যের পরিবহন দপ্তরের কাছে। এরপর স্টেট বাস সেক্রেটারির তরফ থেকে সরাসরি ফোন আসে ডলির কাছে। আর জানানো হয় যে, তার নতুন রুটের অনুমোদন হয়ে গিয়েছে। ফলত, এক ফোনেই জীবন বদলে যায় ডলির। এখন বেশ স্বাচ্ছন্দেই দিন কাটাচ্ছেন এই 58 বছরের দুঃসাহসিক মহিলা।