একাধিক পেশায় যুক্ত! কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরীর আইনজীবীর লাইসেন্স বাতিল করল হাইকোর্ট

প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: শেষ পর্যন্ত লাইসেন্স বাতিল হল মালদার হেভিওয়েট তৃণমূল নেতা ওরফে আইনজীবী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী! আইনজীবী হওয়ার পাশাপাশি একাধিক পদে যুক্ত থাকায় এবার চরম শাস্তি পেতে হল তাঁকে। জানা গিয়েছে, গত শুক্রবার এ লাইসেন্স বাতিল নিয়ে বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের এজলাসে স্পষ্ট জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ বার কাউন্সিল অ্যাসোসিয়েশন। অর্থাৎ রাজ্যের আইনজীবীর তালিকা থেকে আপাতত কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীর নাম বাতিল করা হয়েছে ৷

মামলার সূত্রপাত

ঘটনা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২২ সালে পশ্চিমবঙ্গ বার কাউন্সিলে কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন মালদার অন্যতম আইনজীবী সঞ্জয় কুমার শর্মা ৷ তিনি দাবি করেছিলেন যে, নিয়ম অনুযায়ী একজন আইনজীবী অন্য কোনও পেশায় যুক্ত থাকতে পারেন না ৷

কিন্তু দেখা গিয়েছে কৃষ্ণেন্দুবাবু আইনজীবি থাকার পাশাপাশি একদিকে তিনি একজন ব্যবসায়ী ও অন্যদিকে তিনি একজন প্রোমোটার৷ পাশাপাশি আইনজীবি শুভেন্দুনারায়ণ চৌধুরীও একাধিক পেশার সঙ্গে যুক্ত, তাই আইন অনুযায়ী এই দুই আইনজীবীর লাইসেন্স বাতিল করার মামলা রুজু করা হয়।

মামলা নিষ্পত্তির নির্দেশ

পরে জানা গিয়েছে কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী এবং শুভেন্দুনারায়ণ চৌধুরী এঁরা দুজনেই পুলিশ বা প্রশাসন থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য ওকালতি করেন ৷ কিন্তু এনিয়ে পশ্চিমবঙ্গ বার কাউন্সিলেও অভিযোগ জানান সঞ্জয় কুমার শর্মা।

কিন্তু সেই সময় গোটা বিষয়টি লুকিয়ে রাখা হয়। এরপর ২০২৩ সালে কলকাতা হাইকোর্টে রিট ফাইল করেন তিনি ৷ গতবছর সেই মামলার শুনানিতে বিচারপতি পশ্চিমবঙ্গ বার কাউন্সিলের সভাপতিকে দু’মাসের মধ্যে এই মামলা নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেন ৷

হাইকোর্টে আদালত অবমাননার মামলা

কিন্তু সেক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পরেও বার কাউন্সিলের সভাপতি এই মামলার শুনানি না করে বিষয়টিকে ফের ধামাচাপা দিয়ে ফেলেন। যার দরুন ফের চলতি বছর তাই সঞ্জয় কুমার শর্মা পশ্চিমবঙ্গ বার কাউন্সিলের সভাপতির বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করে ৷ তখন সেই মামলার ভিত্তিতে বিচারপতি বার কাউন্সিলের সভাপতিকে আদালতে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং একই সঙ্গে তিনি ১১ জুলাইয়ের মধ্যে এই মামলার অর্ডার পাস করতে বলেছিলেন৷

কী বলছেন আইনজীবী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী?

আর এবার সঞ্জয় কুমার শর্মা দাবি করেছেন যে বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য নাকি সেই অর্ডারের ভিত্তিতে হাইকোর্ট আইনজীবী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীর লাইসেন্স বাতিল করে দিয়েছে। যদিও সেই কপি এখনও মামলাকারী আইনজীবী সঞ্জয় কুমার শর্মার কাছে এসে পৌঁছায়নি। তবে এই লাইসেন্স বাতিল নিয়ে উল্টো সুর তুললেন আইনজীবী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী ৷

তিনি বলেন, “আমাদের কিছু পৈতৃক সম্পত্তি রয়েছে ৷ সেই সম্পত্তির বিভিন্ন বিষয়ে এখন আমরা পরিবারের সবাই ঐক্যমত হয়েছি। এদিকে সেসব কাগজকে হাতিয়ার করে অভিযোগ তোলা হয়েছে, আমি নাকি ব্যবসা করছি ৷ তবে সঞ্জয় শর্মার সেই চেষ্টা সফল হয়নি ৷ আদালত এখনও আমার বার কাউন্সিলের এনরোলমেন্ট বাতিল করেনি ৷”

আরও পড়ুন: ৩৫০ স্কুলে নেই একটাও পড়ুয়া! রিপোর্ট দেখে চিন্তায় রাজ্য সরকার

আসল বিষয়টি কী তা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ বার কাউন্সিলের সভাপতি অশোক দেবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনও প্রতিক্রিয়া করতে চাননি ৷ তবে তিনি শুধু বলেন, “আদালতের বিষয় আদালতেই বলব ৷ আদালতের বাইরে কিছু বলতে চাই না ৷”

এদিকে আদালতের তরফে জানানো হয়েছে, আগামী ৪ আগস্ট এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে ৷ সেদিন পশ্চিমবঙ্গ বার কাউন্সিলের সভাপতিকে সশরীরে আদালতে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি ভট্টাচার্য ৷

Leave a Comment