রাজ্যের কর্তৃত্ব আর ফলবে না মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তরে! নবান্নে চিঠি কমিশনের

প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: বছর ঘুরলেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগেই ভোট ময়দানে সাধারণ মানুষের কাছে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে যেন উঠে পড়ে লেগেছে সমস্ত রাজনৈতিক দল। ইতিমধ্যেই ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে তৃণমূল সুপ্রিমো তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে বিজেপি হটানোর যুদ্ধ শুরু করার বার্তা দিয়েছে। আর এই আবহে যখন ভোট প্রায় দোরগোড়ায় এসে গিয়েছে সেখানে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরকে স্বতন্ত্র করার নির্দেশ দিল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। রাজ্যের মুখ্য সচিবকে পাঠানো হল চিঠি।

বিহারের পর এবার বাংলা টার্গেট!

রিপোর্ট অনুযায়ী, এই মুহূর্তে বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ করছে নির্বাচন কমিশন। যাকে বলা হচ্ছে ‘স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন’ বা SIR। অবৈধ অনুপ্রবেশকারী-সহ অযোগ্য ভোটারদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে কমিশন। সেই নিয়ে ইতিমধ্যে রাজ্য রাজনীতিতে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

এদিকে বিতর্কের মধ্যেই বাংলায় বিরাট পদক্ষেপ নির্বাচন কমিশনের। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তরকে রাজ্য সরকারের অধীন থেকে স্বতন্ত্র করতে চেয়ে মুখ্য সচিবকে চিঠি দিল জাতীয় নির্বাচন কমিশন।

CEO-কে স্বাধীন দপ্তর করার নির্দেশ!

বর্তমানে সিইও দপ্তরের আর্থিক বিষয় থেকে কর্মী নিয়োগ সবটাই রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের অধীনে রয়েছে। এখন যিনি রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক, তিনি আ্যডিশনাল চিফ সেক্রেটারি স্বরাষ্ট্র এবং পাহাড় বিষয়ক দপ্তরেরও দায়িত্বে রয়েছেন। তবে এখন থেকে স্বাধীন দপ্তর হিসাবে কাজ করবে CEO দপ্তর। অর্থাৎ রাজ্যের সিইও পদাধিকারবলে অতিরিক্ত মুখ্যসচিব পর্যায়ের আধিকারিক হলেও তিনি মুখ্যসচিব বা অন্য কোনও প্রিন্সিপাল সচিব পর্যায়ের আমলার নিয়ন্ত্রণে থাকবেন না।

কী বলা হয়েছে চিঠিতে?

এ ছাড়াও, কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের অধস্তন সচিব এম আশুতোষ রাজ্যের মুখ্যসচিবকে পাঠানো চিঠিতে, পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে উপ, অতিরিক্ত এবং যুগ্ম সিইও-র চারটি পদ পূরণ করার বার্তা দেওয়া হয়েছে। কারণ, বর্তমান ব্যবস্থায় CEO দপ্তরের প্রয়োজনীয় স্বশাসনের ক্ষমতা নেই। পাশাপাশি, রাজ্যের সঙ্গে সম্পর্কহীন সিইও দফতর গড়া এবং পৃথক প্রশিক্ষণ পরিকাঠামোর কথা বলা হয়েছে চিঠিতে।

আসলে ১৯৫০ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী, কোনও রাজ্যের CEO দপ্তর সংশ্লিষ্ট রাজ্যের অর্থ বা স্বরাষ্ট্র দফতরের অধীনে থাকে না। এটি একটি স্বতন্ত্র সাংবিধানিক সংস্থা, যা ভারতের নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে কাজ করে। সেক্ষেত্রে নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তরের মূল কাজ হল রাজ্যস্তরে বিধানসভা, লোকসভা, রাজ্যসভা ও বিধান পরিষদ নির্বাচন সংক্রান্ত সমস্ত কাজকর্ম পরিচালনা করে। পাশাপাশি ভোটার তালিকা প্রস্তুত ও সংশোধন করা, নির্বাচন পরিচালনা করা এবং নির্বাচন সংক্রান্ত অন্যান্য কার্যাবলি সম্পন্ন করা।

আরও পড়ুন: ২১ জুলাইয়ে মমতার কাছে যেতে বাধা, তারপরই ফেসবুকে পোস্ট অনুব্রতর, কেষ্ট লিখলেন …

চিঠি নিয়ে একাধিক মতবিরোধ

এদিকে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের এই পদক্ষেপে শাসকদল এবং বিরোধী দলের মধ্যে নানা মতবিরোধ তৈরি হয়েছে। তৃণমূলের অভিযোগ, কমিশনের এই পদক্ষেপ আসলে ঘুরপথে এনআরসির চেষ্টা। বেছে বেছে বিরোধী ভোটারদের এবং সংখ্যালঘুদের ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।

অন্যদিকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী গত সপ্তাহে CEO-র দপ্তরে গিয়ে দাবি জানিয়ে এসেছিল যে, অবিলম্বে যেন বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালানো হয়। এছাড়াও তাঁর দাবি, অনুপ্রবেশের ফলে রাজ্যের কয়েকটি জেলার জনবিন্যাসের চরিত্র বদলে গিয়েছে। তাঁর সঠিক দাওয়াই দরকার।

Leave a Comment