প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: বিগত কয়েকদিন ধরে ভিনরাজ্যে বাংলা ভাষা ও বাঙালি বিরোধিতার একাধিক ঘটনা ঘটতে দেখা গিয়েছে। শুধু তাই নয় আরও অভিযোগ উঠছে যে বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলায় কথা বললেই নাকি তাঁকে ‘বাংলাদেশি’ হিসেবে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যা নিয়ে বেশ ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকি এর প্রতিবাদে রাজপথে মিছিলও বের করেছিলেন তিনি। এমতাবস্থায় ফের আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটার এক বাসিন্দাকে NRC নোটিশ পাঠানো নিয়ে প্রতিবাদী সুর চড়ালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
NRC নোটিশ নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক!
চলতি মাসের প্রথমদিকে কোচবিহারের বাসিন্দা উত্তমকুমার ব্রজবাসী অসম ফরেন ট্রাইব্যুনাল থেকে NRC-র নোটিশ পেয়েছিলেন। এরপরে আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটার বাসিন্দা অঞ্জলি শীল একই নোটিশ পাওয়ায় প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। সেই নোটিশ সোশাল মিডিয়াতেও বেশ ভাইরাল হয়েছে। তাতে আতঙ্কগ্রস্ত ওই পরিবার।
এদিকে সেই চিঠির ভিত্তিতেই ২২ জুলাই সাংবাদিক বৈঠকের মাধ্যমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়েছিলেন যে ফরেনার্স ট্রাইবুনাল থেকে সরাসরি চিঠি এসে পৌঁছেছে আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটায় এক দম্পতির বাড়িতে। যার জেরে অসমের মুখ্যমন্ত্রীকে একাধিক কটুকথাও শোনানো হয়।
অভিযোগ অস্বীকার ফালাকাটার দম্পতির
এদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগের ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই সংবাদমাধ্যমে আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটা পরিবারের তরফে স্পষ্ট জানান হল NRC সংক্রান্ত এমন কোনও চিঠিই নাকি তাঁরা পাননি! যা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক। এদিন ফালাকাটার বধূ অঞ্জলি শীল জানান যে, “যদি আমার নামে সত্যিই কোনো NRC নোটিশ পাঠানো হয়, তা হলে সেটা হয় আমার কাছে আসবে, নয়তো পুলিশের হাতে থাকবে। কিন্তু সেটা সংবাদমাধ্যমের হাতে কীভাবে চলে গেল?”
কেন তাঁদের কাছে পৌঁছল না নোটিশ?
পাশাপাশি অঞ্জলিদেবী আরও জানান, গত মঙ্গলবার অর্থাৎ ২৩ জুলাই আলিপুরদুয়ার থেকে এক সাংবাদিক তাঁকে ফোন করে বলেন যে তাঁর নামে নাকি কোনও নোটিশ এসেছে। তিনি তখনই বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, “আমি তো কোনও চিঠিই পাইনি। আমার নামে নোটিশ এলে সেটা প্রথমে আমার কাছেই আসার কথা। অথচ সেটা গেল কোথায়? মুখ্যমন্ত্রী কবে, কীভাবে পেলেন?”
এদিকে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের হাতে থাকা নথি অনুযায়ী, অসমের কোকরাঝাড় জেলার ফরেনার্স ট্রাইবুনাল থেকে গত ৩ জুলাই নোটিশ জারি হয়েছে। আগামী ১৯ আগস্ট অসমের কোকরাঝাড়ে ফরেনার্স ট্রাইবুনালে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ৭ বছর ধরে চালাচ্ছিল ভুয়ো দূতাবাস! যোগীরাজ্যে গ্রেফতার নকল রাষ্ট্রদূত, কীভাবে ফাঁস?
তৃণমূলকে কটাক্ষ বিজেপির
অঞ্জলি শীলের সেই নোটিসের উপরে কোচবিহার পুলিশ সুপারের অফিসের সিল রয়েছে। জেলা গরমিলের কারণে এই নোটিশ আলিপুরদুয়ারের বদলে কোচবিহার এসপি অফিসে আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে গোটা বিষয়টি শাসকদলের কারসাজি বলে অভিযোগ তুলেছে বিরোধী দল।
বিজেপি বিধায়ক দীপক বর্মন কটাক্ষ করে জানিয়েছেন যে, “নাগরিকত্ব নিয়ে তৃণমূল পরিকল্পিত রাজনীতি করছে, এটা তার জলজ্যান্ত প্রমাণ। যদি নোটিশ আসল হয়, তা হলে সেটা পরিবারের কাছে না গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছল কীভাবে?”