মমতাকে মিথ্যাবাদীর তকমা! সাজনু পারভিনকে সামনে এনে কড়া জবাব দিল তৃণমূল

প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: বিগত কয়েকদিন ধরে ভিন রাজ্যে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর অত্যাচারকে ঘিরে একাধিক অভিযোগ উঠে আসছে খবরের শিরোনামে। সম্প্রতি বাঙালি বলে দিল্লির এক শ্রমিকের পরিবারের উপর অত্যাচারকে ঘিরে উঠে এসেছে একাধিক অভিযোগ! শিশুকেও মারধর করা হয়েছে বলে একটু ভিডিও মাধ্যমে অভিযোগ তোলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সেই ভিডিয়ো ভুয়ো বলে অভিযোগ নস্যাৎ করে দেয় দিল্লি পুলিশ এবং বিরোধী দল। এবার সেই অভিযোগের বড়সড় প্রমাণ দিল তৃণমূল।

সাংবাদিকদের মুখোমুখি মালদহের সাজনু পারভিন

আজ অর্থাৎ বুধবার দিল্লিতে অত্যাচারিত মালদহে বাসিন্দা সাজনু পারভিনকে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ ও কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। এই বৈঠকে ওই মহিলা দিল্লিতে তাঁদের ওপর পুলিশ কীভাবে অত্যাচার চালায় সেই ঘটনার বর্ণনা দেন। সাজনু পারভিন এদিন বলেন, “আমার কাছে আধার কার্ড দেখতে চাওয়া হয়। এরপর জিজ্ঞেস করে স্বামী কোথায়? আমি বলি, বর কাজে গেছে, দোকানে কাজ করে। এরপর দিল্লি পুলিশ বলে, তোমরা বাংলাদেশি, পালাবে না এখান থেকে। আমরা বলি, মালদায় থাকি কী করে বাংলাদেশি হই? পশ্চিমবঙ্গ মানেই তো বাংলাদেশি। ওরা বলে বাংলা ভাষা বলো, তার মানেই বাংলাদেশি। আমি বলি তাহলে কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বাংলাদেশি? তাঁরা বলেন, এসব পরে দেখা যাবে। এরপর আধার কার্ড নিয়ে চলে যায়।”

২৫ হাজার টাকা চায় দিল্লি পুলিশ

সাংবাদিক বৈঠকে এদিন দিল্লি পুলিশের নামে সাজনু পারভিন আরও গুরুতর অভিযোগ আনেন। তিনি বলেন, “পরেরদিন আবার ৪ জন পুলিশ আসে। তার মধ্যে দুজন মহিলা ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে যেতে বলা হয়। এরপর জোর করে একটি জায়গায় নিয়ে গিয়ে আমার এবং সন্তানের উপর অত্যাচার শুরু করে। আমাকে থাপ্পড় মারার পাশাপাশি জয় শ্রীরাম বলার জন্য জোর করে। আমি বললাম আমি মুসলমান। কীভাবে জয় শ্রীরাম বলব? তখন আমার পেটে লাথি মেরেছিল। ফেলে দিয়েছিল ছেলেকে। কানে এমন মেরেছিল যে কান থেকে রক্ত পড়ছিল।” এও অভিযোগ তোলা হয় যে তাঁদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য দিল্লি পুলিশ ২৫ হাজার টাকা দাবি করে। তড়িঘড়ি স্বামীকে জানানোর পর শাশুড়ি টাকা নিয়ে পৌঁছয়। এরপর আমাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।”

কিছুদিন আগে মালদহের পরিবারের এই অভিযোগকে সাজানো নাটক বলে দাবি করেছিলেন বিরোধীরা। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদার এবং দিল্লি পুলিশও সকলেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মিথ্যাবাদী বলেছিলেন এবং সবটাই নির্বাচনে ভোট পাওয়ার হাতিয়ার হিসেবে কটাক্ষ করেছিলেন। এর সঙ্গে মালদহের পরিবারের রাজনৈতিক কোনো যোগসূত্র আছে কিনা তা জানতে চাওয়া হয়, সেই সময় সাজনুর শ্বশুর দাবি করেন, “কোনও নাটক নয়। আমাদের পরিবারে কেউ রাজনীতি করে না। বাপি খান আমাদের আত্মীয়। বিরোধীদের দাবি, এই বাপি খানের কথাতেই চাঁচলের পরিবার দিল্লি পুলিশের নামে এই অভিযোগ আনে।”

পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরে আসার অনুরোধ ফিরহাদের

মালদহের পরিবারের সঙ্গে সামনাসামনি সমস্ত তথ্য উঠে আসার পর গোটা ঘটনা প্রসঙ্গে এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মিথ্যে প্রমাণ করার এই অভিযোগকে গুরুতর চক্রান্ত বলে অভিযোগ করেন ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, “দিল্লি পুলিশ বারবার অন্যায় ধামাচাপা দিতে চেয়েছিল মমতাকিন্তু সেটা সম্পূর্ণ বৃথা হয়ে গেল। আমরা চাই আর যে যে পরিযায়ী শ্রমিক বাইরে আছেন, তারা যেন ফিরে আসুক, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেশন কার্ড করে দেবে। বাংলার সম্মানের জন্য আমাদের যতদূর যেতে হয় যাব। সংখ্যালঘু শুধু নয় রাজবংশী, মতুয়াদের ওপরেও অত্যাচার হচ্ছে। বাচ্চাকেও ছাড়ছে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো বলেছেন, আমাদের কাছে একটা রুটি থাকলেও অর্ধেক করে খাব।”

আরও পড়ুন: আরজি কর কাণ্ডে চাঞ্চল্যকর মোড়, আরেকজনের নাম ফাঁস করলেন সন্দীপ ঘোষের আইনজীবী

উল্লেখ্য, দিল্লিতে মালদহের পরিবারের উপর এই আক্রমণকে ঘিরে দিল্লি পুলিশ দাবি করেছিল যে এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। এমনকি পূর্ব দিল্লি পুলিশের ডিসিপি অভিষেক ধানিয়া বলেছিলেন, “ভিডিয়োর ভিত্তিতে তদন্তে নামে দিল্লি পুলিশ। নানা প্রযুক্তিগত পরীক্ষাও করা হয়েছে। সেই ভিত্তিতেই একাধিক প্রমাণ সংগ্রহ করেছে তদন্তকারী দল। এছাড়াও পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায় মালদহের এক নেতার নির্দেশে ওই ভিডিয়ো বানানো হয়েছিল। এই ভিডিয়ো সম্পূর্ণ ভাবে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেও দাবি করেন পুলিশ আধিকারিক। ”

Leave a Comment