ভিন রাজ্যে বাঙালি হেনস্থায় গর্জে উঠলেন নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন

Amartya Sen

প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: বিগত কয়েকদিন ধরে খবরের শিরোনামে বারবার উঠে আসছে বাংলা এবং বাঙালিদের ওপর ভিন রাজ্যে অত্যাচার। যাকে ঘিরে রীতিমত তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। এই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিবাদ করার পাশাপাশি এবার ভিন্‌রাজ্যে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর হেনস্থার অভিযোগ নিয়ে মুখ খুললেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। ভারতীয় সংবিধান থেকে শুরু করে চর্যাপদ নিয়ে তুলে ধরলেন একাধিক বিষয়।

শান্তিনিকেতনে ফিরলেন অমর্ত্য সেন

স্থানীয় সংবাদের রিপোর্ট অনুযায়ী, গতকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার শান্তিনিকেতনে নিজের বাড়ি ‘প্রতীচী’তে ফিরেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড.অমর্ত্য সেন। সঙ্গে ছিলেন কন্যা নন্দনা দেবসেন। অর্থনীতিবিদকে ফুলের স্তবক দিয়ে এদিন স্বাগত জানান বোলপুর মহকুমাশাসক অয়ন নাথ ও বোলপুরের এসডিপিও রিকি আগরওয়াল-সহ অন্যান্য আধিকারিকরা। এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি কোথাও বলেন অমর্ত্য সেন। সেখানেই ওঠে বাংলা ও বাঙালির উপর ভিনরাজ্যে নির্যাতনের প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, ভারতবর্ষের নাগরিকদের অধিকার রয়েছে আনন্দ করে থাকার। সেগুলো আমাদের মানতেই হবে। কোনও ভারতীয় যদি ওড়িশা থেকে রাজস্থানে গিয়ে অবহেলিত হন, তা হলেও আমাদের আপত্তি থাকার কারণ থাকবে।’’

সংবিধান নিয়ে কী বললেন নোবেলজয়ী?

বিদেশ থেকে নিজের বাংলার মাটিতে ফিরে ভারতরত্ন অর্থনীতিবিদ ও বঙ্গসন্তান অমর্ত্য সেন এদিন সাংবাদিকদের বলেন যে, “সংবিধানেও বলা রয়েছে, একজন ভারতীয় নাগরিকের গোটা দেশের উপরেই অধিকার রয়েছে। সেখানে আঞ্চলিক অধিকারের কথা কোথাও বলা নেই। বাঙালিদের উপর যদি অত্যাচার হয়, অবহেলা হয়, যথেষ্ট আপত্তির কারণ থাকবে। অবহেলিত হলে তা নিশ্চয়ই বন্ধ করতে হবে।” এছাড়াও তিনি আরও বলেন যে, ‘‘শুধু বাঙালি বলে নয়, কোনও অঞ্চলের লোক অন্য জায়গায় হেনস্থা হচ্ছেন সেটায় আমাদের আপত্তি থাকবে। তাঁরা বাঙালি হোন, পাঞ্জাবি হোন, মারোয়াড়ি হোন। আপত্তি করার কারণ থাকবে।’’

নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেনের মত, সকল মানুষকে সম্মান দেওয়া উচিত। তাঁর কথায়, ‘‘বাংলা ভাষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাচীন শতাব্দী থেকে চর্যাপদ দিয়ে যে ভাষাটার জন্ম হল সেই ভাষার মূল্য স্বীকার করতেই হবে। তাঁর মাধ্যমে নানা কাব্য লেখা হল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম-সহ মনীষীদের সৃষ্টিকর্ম – এগুলোর মূল্য দিতেই হবে। একটা ভাষার যে মূল্য পাওয়া উচিত, সে মূল্য পান না। উল্টে তার উপর একটা বড় রকম অবহেলা হয়, সেটা নিশ্চয়ই বন্ধ করতে হবে।”

আরও পড়ুন: স্টক লিস্টের সাথে মজুত সামগ্রীর বিস্তর ফারাক! বাংলার ৪ রেশন ডিলারকে চরম শাস্তি

উল্লেখ্য, গত সোমবার, ২৮ জুলাই, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বোলপুর থেকেই বাংলা ভাষার উপর ‘সন্ত্রাসে’র প্রতিবাদে পদযাত্রার মাধ্যমে ‘ভাষা আন্দোলন’ এর সূচনা করেছিলেন। হাতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামের ছবির পাশাপাশি ছিল বাংলার বর্ণমালা নিয়ে সে ছিল এক দীর্ঘ পদযাত্রা। এমতাবস্থায় এবার সেই আন্দোলনে সশরীরে অমর্ত্য সেন নিজে উপস্থিত না থাকতে পারলেও তিনি এই আন্দোলনকে একপ্রকার সমর্থন করছেন বটে।

Leave a Comment