বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: আমেরিকার বাড়বাড়ন্ত সত্বেও জাতীয় নিরাপত্তা এবং জাতীয় স্বার্থ থেকে একফোঁটাও সরে আসবে না কেন্দ্র। ডোনাল্ড ট্রাম্পের 25 শতাংশের চড়া শুল্ক আরোপের পর প্রতিক্রিয়ায় সে কথা স্পষ্ট করে দিয়েছিল ভারত।
ইতিহাসের পাতা উল্টে দেখলে জানা যাবে, বহুবার ভারতের কঠিন পরিস্থিতিতে বেঁকে বসেছে আমেরিকা। সে, গম সরবরাহ বন্ধের হুমকি হোক কিংবা, পোখরান পারমানবিক পরীক্ষার পর আমেরিকান নিষেধাজ্ঞা, কোনও ক্ষেত্রেই মার্কিন নেতাদের সামনে মাথা ঝোঁকাননি ভারতীয়রা। কাজেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক চাপে ভারত যে পুরনো অবস্থান থেকে সরে আসবে না সে কথা বলাই যায়।
গম সরবরাহ বন্ধের হুমকি দিয়েছিল আমেরিকা
সালটা 1965। চিনের সাথে দীর্ঘ যুদ্ধের পর ভারতে তৈরি হয়েছিল খাদ্য সংকট। সেই সময় দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন লাল বাহাদুর শাস্ত্রী। সে বছর বর্ষার আশায় হাপিত্যেশ করে বসেছিলেন দেশবাসী। তবে বাদলের দেখা মেলেনি। যার জেরে গোটা দেশ দূরে দেখা দেয় দুর্ভিক্ষ। দুমুঠো খাবারের অভাবে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে থাকেন দেশের বহু মানুষ।
আর ঠিক সেই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে, ভারতে হামলা চালায় পাকিস্তান। 1965 সালের 5 আগস্ট, 30 হাজার পাকিস্তানি সেনা নিয়ন্ত্রণ রেখার পেরিয়ে কাশ্মীরে প্রবেশ করে। যুদ্ধে জড়ায় ভারতীয় সেনাবাহিনীও। ঠিক সেই বছরই PL-480 স্কিমের অধীনে ভারতকে গম সরবরাহ করত আমেরিকা।
তবে, পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ ভয়াবহ রূপ নেওয়ায়, আচমকা বেঁকে বসে মার্কিন প্রশাসন। সে বছর পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ বন্ধ করার দাবি তুলে তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রপতি লিণ্ডন জনসন প্রাক্তন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রীকে সরাসরি হুমকি দিয়েছিলেন। আমেরিকার তরফে বলা হয়েছিল, যুদ্ধ থেকে সরে না দাঁড়ালে গম পাঠানো বন্ধ করে দেবে তারা।
তবে সেই হুমকি সত্ত্বেও পুরনো অবস্থান থেকে সরে দাঁড়ায়নি ভারত। পাল্টা লাল বাহাদুর শাস্ত্রী স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, চাইলে গম পাঠানো বন্ধ করে দিন। তবে দেশের স্বার্থে অবস্থানে এক চুলও নড়চড় হবে না। পরবর্তীতে আমেরিকা থেকে নিজেই গম আমদানি করতে অস্বীকার করেছিলেন শাস্ত্রীজি।
1974 সালের নিষেধাজ্ঞা
1974 সালে মাননীয়া ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছিল ভারত। আর ঠিক সেই আবহে রেগে একেবারে অগ্নি শর্মা হয়ে উঠেছিল আমেরিকা। পোখরান-1 পারমাণবিক পরীক্ষার পর আচমকা আমেরিকা, ভারতে পারমাণবিক জ্বালানি সরবরাহ, প্রযুক্তিগত সহযোগিতা এবং অর্থনৈতিক সহযোগীতার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
আমেরিকার একমাত্র লক্ষ্য ছিল, ভারতকে পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোদ চুক্তির আওতায় নিয়ে আসা এবং দিল্লির পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করা। তবে সে বছরও আমেরিকার চাপের মুখে নতি স্বীকার করেনি ভারত। এছাড়াও 1998 সালে পোখরান পারমানবিক অস্ত্র পরীক্ষার পরও ভারতের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল আমেরিকা, তবে সেবারও কাজের কাজ হয়নি!
অবশ্যই পড়ুন: রাহানে অতীত, টিম ইন্ডিয়ার এই সুপারস্টারকে অধিনায়ক করতে পারে KKR!
উল্লেখ্য, সম্প্রতি ট্রুথ সোশালে, আমেরিকার সাথে কম বাণিজ্য এবং রাশিয়ার সাথে অধিক ঘনিষ্ঠতার বিষয়টিকে সামনে এনে ভারতের ওপর 25 শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছিলেন ট্রাম্প। যা মূলত আজ অর্থাৎ 1 আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। তবে এরই মাঝে, আমেরিকার কাস্টমস ও সীমান্ত সুরক্ষা বিভাগকে অতিরিক্ত সময় পাইয়ে দিতে পুরনো সিদ্ধান্ত এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছেন ট্রাম্প। কাজেই, আগামী 7 আগস্ট থেকে ভারত সহ অন্যান্য দেশে কার্যকর হবে আমেরিকার এই শুল্ক। (সোর্স: উইকিপিডিয়া)