প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: দফায় দফায় বৃষ্টির জেরে রীতিমত জলমগ্ন অবস্থা কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায়। যার মধ্যে হাওড়ার অবস্থা আরও খারাপ। বুধবার রাত থেকে বৃষ্টির জেরে হাওড়া পুরসভার ৫০টি ওয়ার্ডের মধ্যে কমপক্ষে ২৫টি ওয়ার্ড ফের জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। রাস্তায় জল জমার পাশাপাশি একাধিক টালির বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে। এমনকি শহরের নিচু এলাকাগুলিতে জল দাঁড়িয়ে গিয়েছে। এমনকি শৌচাগারও জলের তলায় ডুবে থাকায় প্রকৃতির ডাকে ছুটতে হচ্ছে প্রতিবেশীর দোতলা বাড়িতে। চরম সংকটে স্থানীয় বাসিন্দারা।
জমা জলে দূর্বিষহ অবস্থা বাসিন্দাদের
আনন্দবাজারের রিপোর্ট অনুযায়ী, সক্রিয় মৌসুমী অক্ষরেখার জেরে দিন রাত মুষল ধারায় বৃষ্টি হয়েই চলেছে। যার ফলে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক এলাকার পাশাপাশি হাওড়ার টিকিয়াপাড়া, বেলগাছিয়া, দাসনগর, সালকিয়া, ঘুসুড়ি, রামরাজাতলা, কদমতলা, শালিমার-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা জল যন্ত্রণায় ভুগছেন। বাড়িতে এবং গলিতেও জল থৈ থৈ অবস্থা। ইটের উপরে ইট পেতে তার উপরে বসাতে হয়েছে ফ্রিজ, গ্যাস ওভেন। পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে, চলতি বছর সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে, আর তাতেই ভোগান্তি বেড়েছে সালকিয়া, বেলগাছিয়া ভাগাড় ও বালিটিকুরির মতো একাধিক এলাকায়। তবে ওয়ার্ডের ভিত্তিতে খুব খারাপ অবস্থায় রয়েছে ৭, ৮, ৯, ১০ এবং ৫০ নম্বর ওয়ার্ডে।
এলাকার রাস্তা প্রায় দু’ফুট জলের তলায়
হাওড়ার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের দীর্ঘদিনের বাসিন্দা মধুসূদন অধিকারী বললেন, ‘‘ এর আগেও ভারী বর্ষাতে এলাকায় জল জমেছিল এমনকি প্রতি বর্ষায় জমা জলের সমস্যা যেন সাধারণ হয়ে গেছিল। কিন্তু এ বারের মতো পরিস্থিতি যেন প্রথমবার হল। ঘরের ভিতরে হাঁটুজল। ১৫ দিন ধরে সেই জল এক ভাবে দাঁড়িয়ে। এখানে বাড়ি না করে বোধহয় ফুটপাতে থাকলে ভাল হত।’’ অন্যদিকে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন ঘোষপাড়ার বাসিন্দা, ৭০ বছরের অমিয় দে। অ্যাম্বুলেন্স ডাকা হলেও এলাকার রাস্তা প্রায় দু’ফুট জলের নীচে থাকায় গলির ভিতরে ঢুকতে রাজি নয় অ্যাম্বুল্যান্স, টোটোও। শেষে অ্যাম্বুল্যান্সের স্ট্রেচারে চাপিয়ে, জল ঠেলে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন পরিবারের লোকজন।
আরও পড়ুন: বিয়েবাড়িতে মাংস কম, আর তাতেই বন্দুক বের করল নিমন্ত্রিতরা! রায়গঞ্জে হুলস্থুল কাণ্ড
জল জমার আশঙ্কা পুরসভা প্রশাসকের
দিনের পর দিন এই জলযন্ত্রনা মহা সমস্যা সৃষ্টি করে চলেছে। তার উপর প্রতি বছর বর্ষা শেষে হাওড়া শহরজুড়ে ডেঙ্গির প্রকোপ দেখা যায়। তাই এ বারেও মশার বংশবৃদ্ধি রুখতে পুরসভার পক্ষ থেকে নর্দমায় গাপ্পি মাছ ছাড়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই এই অনুষ্ঠানের সূচনা হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত মরা গাপ্পি মাছ আসায় পুরো অনুষ্ঠানটাই বাতিল হয়ে যায়। অন্যদিকে জল জমার প্রসঙ্গে হাওড়া পুরসভার প্রশাসক মন্ডলীর চেয়ারম্যান সুজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘একটানা বৃষ্টির ফলে গঙ্গার জলস্তরও অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। তাই জল নামতে সময় লাগছে। তবে অতিরিক্ত পাম্প চালিয়ে জমা জল বের করে দেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে।”