বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: যতবার অন্যায় হয়েছে মুখ বুজে তা সহ্য না করে প্রতিবাদ জানিয়েছে ভারত। চলতি বছরেও সেই অভ্যাস ভুলে যায়নি নয়া দিল্লি। সম্প্রতি ভারতের ওপর 25 শতাংশ শুল্ক চাপিয়ে ধাক্কা দিয়েছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তবে তাতেও সন্তুষ্ট নন তিনি! সোমবার রাতে ফের রাশিয়া থেকে তেল কেনার অপরাধে ভারতের উপর আরও শুল্ক চাপানোর কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট। সোমবারই আমেরিকার সেই হুঁশিয়ারিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক। সেই সাথে, জাতীয় স্বার্থ রক্ষার্থে সব রকম পদক্ষেপ নেওয়ারও আশ্বাস দেয় নয়া দিল্লি।
ট্রাম্পের হুঁশিয়ারির পাল্টা প্রতিক্রিয়া ভারতের
সোমবার রাতে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ট্রুথ সোশালে জানিয়েছিলেন, ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনে তা খোলা বাজারে বিক্রি করছে। আর এই অপরাধে ভারতের ওপর আরও চড়া শুল্ক বসবে! এদিন ট্রাম্পের এমন হুঁশিয়ারির পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক সাফ জানিয়ে দেয়, বন্ধু রাশিয়া থেকে তেল কেনার কারণে দিল্লিকে বারবার নিশানায় আনছে আমেরিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
এই ঘটনা শুধুই অনায্য নয় বরং সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক লিখিত বিবৃতিতে জানায়, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকেই ভ্লাদিমির পুতিনের দেশ থেকে তেল কেনার কারণে ভারতকে নিশানা করা হচ্ছে বারবার। কারণ হিসেবে বিদেশ মন্ত্রক উল্লেখ করে, সংঘাতের পরই যাবতীয় প্রয়োজনীয় দ্রব্য ইউরোপে চলে যাচ্ছিল বলেই রাশিয়া থেকে তেল আমদানি শুরু করে ভারত। আর ঠিক সেই সময়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি অব্যাহত রেখে বিশ্ব জ্বালানি বাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে উৎসাহ দিয়েছিল আমেরিকাই!
অবশ্যই পড়ুন: সঙ্কটে ভারতীয় ফুটবল! হঠাৎ সুনীল ছেত্রীদের বেতন বন্ধ করে দিল বেঙ্গালুরু
এরপরই বিরোধীপক্ষকে সরাসরি নিশানা করে বিদেশ মন্ত্রকের দাবি, ভারতের বিরুদ্ধে যারা সমালোচনা করছে, তারা নিজেরাই রাশিয়ার সাথে বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। তবে শুধু মুখে বলেই থেমে থাকেনি বিদেশ মন্ত্রক। উপযুক্ত তথ্য সামনে এনে পুরনো পরিসংখ্যান দেখিয়ে বিদেশ মন্ত্রক জানায়, গত বছর অর্থাৎ 2024 সালে রাশিয়ার সাথে 67,500 কোটি ইউরোর বাণিজ্য করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। যেখানে 2023 সালে এই বাণিজ্যের পরিমাণটা ছিল মাত্র 17,200 কোটি ইউরোতে। অর্থাৎ ভারতের থেকেও রাশিয়ার সাথে বেশি বাণিজ্য হচ্ছে তাদেরই।
এছাড়াও ইউরোপের তরফে প্রাকৃতিক গ্যাসের মতো নানান জ্বালানির ক্ষেত্রে রাশিয়া থেকে আমদানির পরিমাণ দেখিয়ে গোটা চিত্রটা স্পষ্ট করে দেয় বিদেশ মন্ত্রক। সবশেষে লিখিত বিবৃতিতে বিদেশ মন্ত্রক জানায়, দিনের পর দিন ভারতের ওপর এমন আক্রমণ, কখনই ঠিক নয়। এই ঘটনা শুধুই অনায্য নয় বরং পুরোপুরি অযৌক্তিকও। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতোই জাতীয় স্বার্থ এবং অর্থনৈতিক রক্ষা করার স্বার্থে সব রকম পদক্ষেপ করা হবে বলেই জানায় ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রণালয়।