স্ত্রী পরপুরুষের দ্বারা গর্ভবতী হলেও বাচ্চার দায়িত্ব স্বামীরই! পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের

Supreme Court

প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের ফলে জন্ম নেওয়া সন্তানের বৈধ পিতা কে হবেন, তা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দিল সুপ্রিম কোর্ট। সম্প্রতি কেরালার একটি মামলায় এই বিষয়ে নিজের পর্যবেক্ষণ জানিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। স্পষ্ট জানিয়ে দিল যুক্তি, কিন্তু সেই যুক্তিতে অনেকে সমর্থন করতে নারাজ। কারণ এই যুক্তি পুরুষদের কাছে বিশ্বাসঘাতকতার সমান হিসেবে বিবেচিত হয়েছে

সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ

সুপ্রিম কোর্ট ‘ভারতীয় প্রমাণ আইন, ১৮৭২’-এর ১১২ নম্বর ধারার উল্লেখ করে জানায় যে বৈধ বিবাহ বন্ধনের মধ্যে শিশুর জন্ম হলে সন্তানের বৈধ পিতা হবেন স্বামীই, যতই DNA পরীক্ষার ফল ভিন্ন কিছু দেখাক না কেন। আদালতের মতে, শুধুমাত্র বৈজ্ঞানিক প্রমাণের ভিত্তিতে সামাজিক বৈধতাকে বাতিল করা যাবে না। তবে কোনও স্বামী যদি সেই সন্তানের দায়িত্ব নিতে বা নিজের পিতৃত্ব অস্বীকার করতে চান, তাহলে স্বামীকে প্রমাণ করতে হবে তাঁর সঙ্গে স্ত্রী-এর কোনও যোগাযোগ নেই। এই ক্ষেত্রে ‘নো-কন্টাক্ট’-এর সংজ্ঞাও দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

ঠিক কী হয়েছিল?

রিপোর্ট অনুযায়ী, ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল ঘটনার সূত্রপাত কেরালায়। ২০০১ সালে জন্ম হয় মিলান জোসেফের, সেই সময় তাঁর মা, রাজু কুরিয়ান নামের এক ব্যক্তির স্ত্রী ছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। এরপর ২০০৭ সালে মিলানের মা কোচিন পুরসভায় গিয়ে তাঁর সন্তানের পিতার নাম পরিবর্তন করে ইভান রথিনাম রাখতে চান। এবং যুক্তি দিয়ে বলেন ইভান রথিনামই হলেন সন্তানের জৈবিক পিতা। কিন্তু পুরসভা আদালতের অনুমতি ছাড়া এই পরিবর্তন করতে অস্বীকার করে। শেষে তিনি ফার্স্ট অ্যাডিশনাল মুন্সিফ কোর্টে একটি ফৌজদারী মামলা দায়ের করেন এবং দাবি করেন যে রথিনামই মিলানের প্রকৃত পিতা এবং সন্তানের দায়িত্ব তাঁরই নেওয়া উচিত।

মামলার জল গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে

২০০৯ সালে আদালত সমস্ত দিক পর্যবেক্ষণ করে দীর্ঘ টানাপোড়েনের পরে আদালত রায় দেয়, যেহেতু সন্তানের জন্মের সময় তিনি রাজু কুরিয়ানের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ ছিলেন, সেই কারণে মিলন জোসেফের বৈধ পিতা হলেন রাজু কুরিয়ানই। পরবর্তী কালে সাব-জজ কোর্ট এবং ২০১১ সালে কেরালা হাই কোর্ট এই একই রায় বহাল রাখে। ২০১৫ সালে মামলাটি আলাপ্পুঝার ফ্যামিলি কোর্ট পর্যন্ত পৌঁছায়। ২০১৮ সালে কেরালা হাইকোর্ট আবারও জানিয়ে দেয়, পিতৃত্ব ও আইনি বৈধতা পৃথক বিষয় হলেও সন্তানের স্বীকৃতি আইনি স্বামীকেই দেওয়া হবে। এরপর এই মামলা ওঠে সুপ্রিম কোর্টে।

ভারতীয় প্রমাণ আইন, ১৮৭২’-এর ১১২ নম্বর ধারা অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্যকান্ত এবং উজ্জ্বল ভূঁইয়ার বেঞ্চ জানায় যে বৈধ বিবাহ বন্ধনে থাকাকালীন জন্ম নেওয়া সন্তানের বৈধ পিতাও হবেন স্বামীই। এমনকি যদি DNA প্রমাণ অন্য কিছু নির্দেশ করে তাহলেও পিতৃত্বের পরিচয় দেওয়ার সময় সামাজিক বৈধতাকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। যদি কোনও পুরুষ বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের ভিত্তিতে ‘নন-অ্যাক্সেস’ প্রমাণ করতে পারে তবেই শিশুর পিতৃত্ব অস্বীকার করতে পারবেন।”

আরও পড়ুন: জাতীয় সড়কের কারণে অবরুদ্ধ নয়ানজুলি, নিকাশি ব্যবস্থা! জলমগ্ন ডানকুনি

শীর্ষ আদালতের নির্দেশ নিয়ে সমালোচনা

সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে অনেকেই সমালোচনা করে জানিয়েছেন যে, শীর্ষ আদালতের এই সিদ্ধান্ত খানিক একতরফা হয়ে গিয়েছে। এতে পুরুষদের উপর অন্যায় বোঝা একপ্রকার জোর করে চাপানো হচ্ছে। মূলত, এই আইনটি ব্যক্তিগত অধিকার এবং সত্যের উপর বিবাহের পবিত্রতাকে প্রাধান্য দেয় বলে মনে হলেও এটি আসলে পুরুষদের কাছে এক বড় বিশ্বাসঘাতকতা। তবে অনেকেই আবার এই আইনের সমর্থন করেছে। তাঁদের মতে এই আইনের মূল উদ্দেশ্য হল শিশুদের সামাজিক কলঙ্ক থেকে রক্ষা করা এবং এক স্থিতিশীল পারিবারিক কাঠামো নিশ্চিত করা। অর্থাৎ কোনও সন্তানের জন্ম বৃত্তান্ত নিয়ে অকারণে যাতে কোনও অনুসন্ধান বা প্রশ্ন না ওঠে তাই এই নির্দেশ।

Leave a Comment