প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: কিছুদিন আগে ভিন রাজ্যে বাংলা ভাষায় কথা বলার জন্য শ্রমিকদের ওপর নানা অত্যাচারের ঘটনা শিরোনামে উঠে এসেছে। যার জেরে হেনস্থার অভিযোগ করে রাজপথে নেমেছে রাজ্যের শাসকদল। এমনকি বাংলা ভাষা নিয়ে আন্দোলনের ডাকও দিয়েছে তারা। কিন্তু এবার সেই রাজ্যে নিজের ভাষা নিয়ে গর্জে উঠল সাঁওতালি পরীক্ষার্থীরা। পরীক্ষায় মাতৃভাষায় প্রশ্ন না-আসার প্রতিবাদে সাদা খাতা জমা দিয়ে বেরিয়ে এলেন ঝাড়গ্রামের ৪৪ জন সাঁওতালি পরীক্ষার্থী।
ঠিক কী ঘটেছিল?
স্থানীয় সূত্রে খবর, গতকাল অর্থাৎ ১২ আগস্ট মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে দ্বিতীয় বর্ষের D.El.Ed পরীক্ষা। লালগড় এলাকার রামগড় ডিএলএড কলেজের পড়ুয়াদের পরীক্ষার জন্য সিট পড়েছিল ঝাড়গ্রামের ননীবালা বয়েজ হাইস্কুলে। সেখানেই পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন তারা। কিন্তু পরীক্ষা দিতে এসেই হল বিপত্তি, অভিযোগ ওঠে পরীক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, স্বাভাবিকভাবেই তাঁরা পড়াশোনা করেছেন সাঁওতালি ভাষায়, তাই সেক্ষেত্রে তাঁরা আশা করেছিল অলচিকি হরফেই প্রশ্নপত্র আসবে। কিন্তু প্রশ্ন এল শুধু বাংলা ও ইংরেজি ভাষায়। আর তাতেই ক্ষোভ বাড়তে থাকে সকলের। এর পরেও অলচিকি হরফে প্রশ্নপত্র আসবে বলে প্রায় ২ ঘণ্টা অপেক্ষা করেন। কিন্তু তা না হওয়ায় প্রতিবাদ স্বরূপ উপস্থিতির খাতায় সই করে ৪৪ জন বাধ্য হয়ে সাদা খাতা জমা দেন।
প্রতিবাদ আসরে নামেন পরীক্ষার্থীরা
পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে প্রতিবাদে নামেন ৪৪ জন উপস্থিত সাঁওতালি পরীক্ষার্থীরা। তাঁরা ঝাড়গ্রাম পাঁচমাথা মোড়ে জড়ো হন। তাঁদের প্রতিবাদে সামিল হতে সেখানে বিভিন্ন আদিবাসী সংগঠনের প্রতিনিধিরাও পৌঁছে যান। শুরু হয় অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন। পরীক্ষার্থী বুদ্ধদেব সরেন বলেন, ‘আমরা অলচিকি হরফে পড়াশোনা করেছি। বাংলা বা ইংরেজিতে প্রশ্ন বুঝে উত্তর দেওয়া আমাদের পক্ষে অসম্ভব। এটা আমাদের সঙ্গে অন্যায়। তাই প্রতিবাদ জানিয়ে সই করে সাদা খাতা জমা দিয়ে আমরা বেরিয়ে এসেছি।’
বৃহৎ আন্দোলনের হুঁশিয়ারি
এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সাঁওতালি শিক্ষা অধিকার রক্ষা মঞ্চের ঝাড়গ্রাম জেলা আহ্বায়ক সিরজন হাঁসদা বলেন, ‘ সাঁওতালি মিডিয়াম D.El.Ed ছাত্রছাত্রীদের তাঁদের নিজস্ব ভাষায় প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়নি। আমরা এর তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছি। যদি উপযুক্ত পদক্ষেপ করা না হয় তাহলে আগামী দিনে এই ইস্যুতে আমরা বৃহত্তর আন্দোলন শুরু করতে বাধ্য হব।’ অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষাকেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, সম্পূর্ণ ঘটনা তাঁরা ইতিমধ্যেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। কী ভাবে এমন গাফিলতি হল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বেআইনি বেটিং অ্যাপের হয়ে বিজ্ঞাপন! সুরেশ রায়নাকে তলব করল ইডি
প্রসঙ্গত, ২০০৩ সালে সাঁওতালি ভাষা সংবিধানের অষ্টম তফসিলে স্থান পায়। এরপরেই পশ্চিমবঙ্গের স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে সাঁওতালি ভাষায় পঠনপাঠন হয়ে আসছে। কিন্তু সাঁওতালি ভাষায় অলচিকি লিপিতে পঠনপাঠনের পরিকাঠামো নিয়ে এখনও সন্তুষ্ট নন আদিবাসী পণ্ডিতদের একাংশ। সেক্ষেত্রে সাঁওতালদের ভবিষ্যতে শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠে আসছে। যদিও ঝাড়গ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান জয়দীপ হোতা আশ্বাস দিয়েছেন যে আগামী পরীক্ষাগুলি অলচিকি হরফের প্রশ্নপত্রের মাধ্যমেই নেওয়া হবে।