প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: গত বছর প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় যুব তৃণমূলের নেতা কুন্তল ঘোষ গ্রেফতার হওয়ার পরেই প্রাক্তন তৃণমূল নেতা বিভাস অধিকারীর নাম উঠে এসেছিল। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার নজরে ছিলেন তিনি। তবে মাঝে কেটে গিয়েছে বেশ কয়েক মাস। কিন্তু সম্প্রতি ফের খবরের শিরোনামে উঠে এল অনুব্রত ঘনিষ্ঠ বীরভূমের বিভাস অধিকারীর নাম। নয়ডায়, ভুয়ো থানা খুলে প্রতারণাচক্র চালাচ্ছিলেন তিনি। আর সেই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই পুত্র সহ গ্রেফতার হলেন তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি। আর তাতেই উঠে এল একের পর এক বিভাসের কীর্তি’।
৪৫০ বিঘা জমির উপর বানানো হয়েছে আশ্রম
নলহাটি ২ নম্বর ব্লকের প্রাক্তন তৃণমূল সভাপতি ছিলেন বিভাস অধিকারী। ক্ষমতায় থাকাকালীন জমি বিবাদের একাধিক অভিযোগ উঠে এসেছিল তার বিরুদ্ধে। টিভি ৯ বাংলার রিপোর্ট অনুযায়ী, নলহাটিতে রয়েছে বিভাসের আশ্রম। প্রায় ৪৫০ বিঘা জমির উপর বানানো হয়েছে আশ্রম। আর সেই আশ্রমকে ঢাল করে জমি হাতিয়ে নেওয়া অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, খুব কম দাম দিয়ে জোর করে জমি কেনা হয়েছে। অনেকের অভিযোগ, জমি নিয়ে নেওয়ার পর টাকাও দেওয়া হয়নি তাঁদের। যদিও বিভাস অধিকারীর ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না অনেকেই। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল এই আশ্রমেই নাকি সালিশি সভা বসাতেন তিনি। যেখানে তিনিই ওসি ছিলেন আবার তিনিই বিচারক ছিলেন।
আশ্রমে চলত ভুয়ো স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা
তদন্তের মাধ্যমে জন্য গিয়েছে মূলত পৈতৃক জমি সংক্রান্ত সমস্যার বিচারের জন্য স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে তলব করত বিভাসের লোকেরা। তবে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অফিসে নয়, ডাক পড়ত নলহাটিতে বিভাসের আশ্রমে। ঠিক যেভাবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা তদন্তের স্বার্থে কাউকে তলব করে, সেভাবেই সব নথি-সহ তলব করা হত। আবার ED, CBI এর মত হাজিরা এড়ালে পাল্টা মামলা করার হুশিয়ারি দেওয়া হত চিঠিতে। তবে সেক্ষেত্রে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জমি সমস্যার সমাধানের নামে আসলে টাকা হাতানো উদ্দেশ্য ছিল বিভাসের, তাই এই কারবার।
আরও পড়ুন: ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’-এ বিপত্তি! রাস্তা কেটে দু’ভাগ করে প্রতিবাদ স্থানীয়দের
কলকাতাতেও ছক কষেছিল বিভাস
এদিকে, বিভাসের জাল থানার কর্মকাণ্ড কলকাতা শহরেও ছড়িয়ে পড়েছিল বলে অনুমান করা হচ্ছে। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, জুলাই মাসের শেষে বেলেঘাটায় একটি ফ্ল্যাটের বাইরে সাইনবোর্ড চোখে পড়েছিল স্থানীয়দের, যেখানে বিভাসকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশনের সদস্য বলে দাবি করা হয়। থানায় এই খবর জানানো হলে সে সময় পুলিশ গিয়ে সেই সাইনবোর্ড খুলে দেয়। কিন্তু সেই সময় বিভাসের লোকজন জানিয়েছিলেন, ওই ফ্ল্যাটে এনজিও চালানো হয়। কিন্তু এনজিওর কোনও নথি তাঁরা দেখাতে পারেননি বলে অভিযোগ। তাই সেক্ষেত্রে তদন্তকারীদের একটি সূত্র মনে করছে, ওই সাইনবোর্ড লাগিয়ে কলকাতাতেও হয়ত ভুয়ো থানা খোলার চেষ্টা করছিলেন বিভাস।