প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: চলতি বছর গত এপ্রিলে সু্প্রিম কোর্টের নির্দেশে হাইকোর্টের রায়কে বহাল রেখেই চাকরি বাতিল হয়েছে রাজ্যের সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত এবং পোষিত স্কুলের প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীর। ২০১৬ সালের গোটা প্যানেলটাই বাতিল হয়ে যায়। এইভাবে দীর্ঘ বছরের চাকরি হঠাৎ চলে যাওয়ায় অবসাদের মুখে পড়েছে একাধিক কর্মী। আর সেই অবসাদের কারণে এবার ব্রেন স্ট্রোকে মৃত্যু হল এক চাকরিহারা শিক্ষকের! রাজ্যের বিরুদ্ধে ফের গর্জে উঠল বিক্ষোভকারীরা।
ঘটনাটি কী?
উল্লেখ্য, বাকিদের মতোই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরি গিয়েছিল, ২০১৬ SSC তালিকাভুক্ত যোগ্য শিক্ষক ৩৫ বছরের সুবল সোরেনের। ভবিষ্যৎ দুশ্চিন্তার কথা ভেবে ভেবেই দিন কাটত তাঁর। ২০১৬ সালের যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চে সক্রিয় সদস্য হয়ে উঠেছিলেন তিনি। প্রতিদিন ডেবরা থেকে কলকাতার এসে ধামসা মাদল বাজিয়ে প্রতিবাদে সামিল হত সে। এমনকি বিকাশ ভবনের সামনে রাতের পর রাত জেগে প্রতিবাদে সামিল হয়েছিল সে। কিন্তু সেই প্রতিবাদের মাঝেই অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হল এই আদিবাসী শিক্ষকের। আজ অর্থাৎ শুক্রবার কলকাতার বাইপাসের ধারের এক হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে তাঁর।
কান্নায় ভেঙে পড়ে গোটা পরিবার
চাকরিহারা শিক্ষকের মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতালের তরফে জানা গিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরার বাসিন্দা সুবল সোরেন বাড়িতেই গত ১১ আগস্ট ব্রেনস্টোকে আক্রান্ত হন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে ডেবরার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। দিন দুয়েক ধরে বাইপাসের ধারের এক হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল তাঁর। তবে শুক্রবার সকালে মৃত্যু হয় সুবলের। কান্নায় ভেঙে পড়ে গোটা পরিবার। তাঁর শেষ যাত্রা দেখতে চাকরিহারা শিক্ষকরা একে একে এসে পৌঁছেচ্ছেন বাইপাসের বেসরকারি হাসপাতালে। পরিবারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন অনেকে।
আরও পড়ুন: মোট ১২ দিন ধরে চলবে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা! কবে কোন সেমেস্টারের পরীক্ষা? রইল রুটিন
শোকের ছায়া চাকরিহারাদের মধ্যে
এদিন সুবলের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যেও। তাঁদের দাবি, আবার নিয়োগ পরীক্ষা দেওয়ার চাপ নিতে পারেননি সুবল। সেই থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চের অন্যতম নেতা মেহবুব মণ্ডল বলেন, ‘‘সরকার, বিচারব্যবস্থা এবং রাষ্ট্র চক্রান্ত করে হত্যা করেছে সুবলকে। আজকের স্বাধীনতা দিবসে আমরাই পরাধীন। সরকার এবং বিচারব্যবস্থা যদি আমাদের নিয়ে এরকম প্রহসন করে তাহলে আমাদের মৃত্যু মিছিল হবে।’’ তবে শেষ পর্যন্ত প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে যে তাঁর এই মৃত্যুর দায় আসলে কে নেবে? যদিও এই নিয়ে শাসক দলের তরফে কোনো প্রতিক্রিয়া মেলেনি।