মোদীর জমানায় গবাদি পশুর মাংস রপ্তানিতে দ্বিতীয় ভারত!

India Beef Export
India Beef Export

বিশ্ববাজারে আরও একটি মাইলফলক অর্জন করার পাশাপাশি নিজেদের অবস্থান আরও মজবুত করল ভারত। আমাদের দেশ কয়েকদিন আগেই বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মোবাইল রপ্তানিকারক হওয়ার পাশাপাশি এবার আরও একটি ক্ষেত্রে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক হয়ে উঠছে। আর জানলে অবাক হবেন সেই ক্ষেত্র হল গবাদি পশুর মাংস (India Beef Export)!

কি অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন আমাদের দেশে যেখানে একাধিক স্থানে গরুর মাংস খাওয়া নিষেধ, সেখানে গবাদি পশুর মাংস রপ্তানিতেই আমাদের দেশ দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক! চলুন আজ আপনাদের সামনে আমরা তুলে ধরবো এমনই একটি রিপোর্ট যা জানলে আপনারও অবাক হয়ে যাবেন!

বর্তমানে সারা বিশ্বে সঠিক দামে, উন্নত মানের গবাদি পশুর মাংসের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে ভারতের নাম উল্লেখযোগ্যভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। ক্রমবর্ধমান উৎপাদন ক্ষমতা, সরকারি সহায়তা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকায় নিজেদের বাজার সম্প্রসারণের কারণে এই রফতানির পরিমাণ দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে।

গবাদি পশুর মাংস রপ্তানিতে ভারত দ্বিতীয়ঃ রিপোর্ট

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের (USDA) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে ভারত গবাদি পশুর মাংস, বিশেষ করে ক্যারাবিফ অর্থাৎ মহিষের মাংস উৎপাদন এবং রপ্তানি বৃদ্ধি করবে বলে আশা করা মিলিয়ন মেট্রিক টন হচ্ছে। USDA-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ভারতে গবাদি পশুর মাংস উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৪.৫৭ মিলিয়ন মেট্রিক টন এবং এখান থেকে অন্য দেশে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১.৫৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন। কিন্তু ২০২৫ সালে ভারতে গবাদি পশুর মাংসের উৎপাদন সংখ্যা বেড়ে ৪.৬৪ মিলিয়ন মেট্রিক টন এবং গবাদি পশুর মাংস উৎপাদনের পরিমাণ বেড়ে ১.৬৪ মিলিয়ন মেট্রিক টন হতে পারে।

গবাদি পশুর মধ্যে বেশিরভাগটাই হাঁস-মুরগি, ছাগল, ভেড়া এবং সবথেকে বেশি মহিষের মাংস রয়েছে, যাকে ক্যারাবিফ বলা হয়।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৫ সালে ভারতে গরু, ষাঁড় এবং মহিষের সংখ্যা বিশ্বের অন্যান্য দেশকে ছাড়িয়ে যাবে। এই সংখ্যা হতে পারে আনুমানিক ৩০৭.৫ মিলিয়ন।

২০২৪ সালে ভারতের গবাদি পশুর মাংস থেকে আয়

আপনি জানলে অবাক হবেন, ২০২৪ সালে ভারত সারা বিশ্বের মধ্যে মোট ১১১ কোটি কিলো গবাদি পশুর মাংস রফতানি করেছে, যার মূল্য প্রায় ৩১,৫০০ কোটি টাকা।

দেশের কোন রাজ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয়?

আমাদের দেশের মধ্যে উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র ও অন্ধ্রপ্রদেশ ভারতের বার্ষিক গবাদি পশু এবং মহিষ উৎপাদনের প্রধান কেন্দ্র। এছাড়াও, তেলেঙ্গানা, বিহার, রাজস্থান এবং গুজরাট উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। এই সমস্ত জায়গার আধুনিক প্রক্রিয়াকরণ কারখানা, কোল্ড চেইন প্রযুক্তি এবং বন্দরভিত্তিক দ্রুত রপ্তানি অবকাঠামোর ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক লাভ পাওয়া গিয়েছে।

ভারত থেকে কোন দেশে সবথেকে বেশি রফতানি হয়?

বর্তমানে ভারতের ক্যারাবিফ রপ্তানি ৬০টিরও বেশি দেশে পৌঁছেছে। তবে ভারত থেকে গবাদি পশুর মাংস রপ্তানিতে শীর্ষ দেশগুলির মধ্যে রয়েছে ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মিশর, ইরাক এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহী।

গবাদি পশুর মাংস রপ্তানিতে শীর্ষে কারা?

বিভিন্ন রিপোর্ট অনুযায়ী, সারা বিশ্বে এই মুহূর্তে গবাদি পশুর মাংস বিশেষ করে গরুর মাংস রপ্তানিতে শীর্ষে রয়েছে ব্রাজিল। যার মূল্য প্রায় ৯.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২৩ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। তবে, গবাদি পশুর মাংস হিসাবে বিশেষত ক্যারাবিফ বা মহিষের মাংস রপ্তানি করে ভারত। যার মূল্য আমরা আগেই জানিয়েছি প্রায় ৩.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থাৎ প্রায় ৩১,৫০০ কোটি টাকা। এরপরেই রয়েছে আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়া।

তবে, সাম্প্রতিক তালিকাটা একটু পাল্টেছে। বর্তমানে শীর্ষ গবাদি পশুর মাংস রপ্তানিতে ব্রাজিল একে থাকলেও, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে অস্ট্রেলিয়া এবং আমেরিকা। যার ফলে চতুর্থ স্থানে রয়েছে ভারত। বর্তমানে বৈশ্বিক গবাদি পশুর মাংসের বাণিজ্যে প্রায় ২০% সরবরাহ ভারত করছে।

এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক কিছু রিপোর্ট অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় আমাদের দেশেও গবাদি পশুর মাংস গ্রহণ অনেকটাই বাড়বে। এর একটি কারণ হল এই মাংসের দাম অত্যন্ত কম, এবং প্রোটিনে ভরপুর। রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের অভ্যন্তরে মুদ্রাস্ফীতির কারণে ২০২৪ সালে গবাদি পশুর মাংস গ্রহণ ৩ মিলিয়ন মেট্রিক টন থেকে বেড়ে ৩.০৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ভারত থেকে অন্যান্য দেশে গবাদি পশুর মাংস, বিশেষ করে ক্যারাবিফ রপ্তানির এই সাফল্য দেশে যে শুধু বৈদেশিক বাণিজ্য বাড়াবে তা নয়, বরং অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানো বাড়াবে। এই ক্ষেত্রে ব্রাজিল সহ অন্যান্য দেশকে টেক্কা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ভারত সরকার জাতীয় প্রাণিসম্পদ মিশনের মাধ্যমে যোগ্য সংস্থাগুলিকে ভর্তুকি প্রদান এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কসাইখানা স্থাপন ও আধুনিকীকরণে সহায়তা করার জন্য অনুদান প্রদান করছে।

Leave a Comment