SSC, SSC, SSC! রাজ্য সরকার হোক কিংবা কেন্দ্রীয় সরকার, SSC-র নামে সাধারণ মানুষের সাথে প্রহসন যেন শেষ হওয়ার নাম নিচ্ছে না। পশ্চিমবঙ্গে চলে গিয়েছে ২৬০০০ শিক্ষকের চাকরি! স্কুল সার্ভিস সিলেকশনের নামে শুধুমাত্র বঞ্চনার (SSC Scam) শিকার ওই সমস্ত শিক্ষকরা। আর এবার কেন্দ্রীয় সরকারের স্টাফ সিলেকশন কমিশন ফেজ ১৩-র পরীক্ষা দিতে গিয়ে বঞ্চনার শিকার সারা দেশের কয়েক লক্ষ পরীক্ষার্থী।
কারোর অভিযোগ, বাড়ি থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রের দূরত্ব ১০০০ কিমি! কারোর দাবি, পরীক্ষা শুরু হওয়ার আধ ঘণ্টা আগেই চলে আসছে প্রশ্ন! কেউ আবার বলছে, হঠাৎ করেই কিছু কিছু জায়গায় পরীক্ষা বাতিল করে দেওয়া হয়েছে অজানা কোন কারণে। কিন্তু, ১০০০ কিমি পথ অতিক্রান্ত করে, সঠিক সময়ে প্রশ্ন পেয়ে পরীক্ষা দিতে বসেছেন যারা, তাদের মধ্যে অনেকেই দেখছেন কাজ করছে না কম্পিউটার সিস্টেম, হ্যাং হওয়ার পাশাপাশি ক্র্যাশ হয়ে যাচ্ছে পরীক্ষার সার্ভার। এই নিয়ে পরীক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানালে খেতে হয়েছে পুলিশের মার!
কিন্তু, কেন এই অনিয়ম? কি রয়েছে এর পিছনের কারণ? নতুন কোন স্ক্যাম? আজ সমস্ত তথ্য প্রকাশ করবো আমরা India Hood-এর এই প্রতিবেদনে।
স্টাফ সিলেকশন কমিশন ফেজ ১৩-র এই পরীক্ষার মাধ্যমে সাধারণত সারা দেশের বিভিন্ন সরকারি দফতর এবং মন্ত্রয়ালয়ের জন্য গ্রুপ বি এবং গ্রুপ সি পদপ্রার্থীদের নির্বাচন করা হয়। চলতি বছরে এই পরীক্ষা ২৪ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কী কী অভিযোগ উঠেছে SSC-র বিরুদ্ধে?
১। যেখানে অন্য বছর পরীক্ষার চার দিন আগে অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া হয়, সেখানে পরীক্ষার দুই দিন আগে পর্যন্ত অ্যাডমিট কার্ড পায়নি অনেকে। অনেক পরীক্ষার্থী পেয়েছেন ফাঁকা অ্যাডমিট কার্ড।
২। একাধিক পরীক্ষা কেন্দ্রে দেখা যায় বায়োমেট্রিক সমস্যা।
৩। কোথাও ১৫-১৬ মিনিটের জন্য বন্ধ ছিল কম্পিউটারের স্ক্রিন, আবার কোথাও সম্পূর্ণরূপে ক্র্যাশ হয়ে যাচ্ছিল সিস্টেম। কোথাও মাউস কাজ করছিল না, আবার কোথাও ভালো করে লোড হচ্ছিল না প্রশ্নপত্র।
৪। অনেক সেন্টারে প্রযুক্তিগত ও প্রশাসনিক কারণ দেখিয়ে বাতিল করে দেওয়া হয় সম্পূর্ণ পরীক্ষা।
৫। অনেকের দাবী, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ফেজের প্রশ্ন ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ একই ছিল।
৬। পরীক্ষাকেন্দ্র নিয়ে উঠেছে একগুচ্ছ অভিযোগ। নিয়ম অনুযায়ী, SSC পরীক্ষার ফর্ম ফিল আপ করার সময় পছন্দের ৩ টি শহর নির্বাচন করতে বলা হয়, এবং সেই ভিত্তিতে একটি স্থান দেওয়া হয়। কিন্তু এবার পরীক্ষার্থীদের পছন্দ উপেক্ষা করে পরীক্ষা কেন্দ্র দেওয়া হয়েছে ৫০০ থেকে ১০০০ কখনও বা ২০০০ কিমি দূরে। এছাড়াও, পরীক্ষাকেন্দ্রের অবস্থান, পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি, ইনভিজিলেটরদের ব্যবহার নিয়েও উঠেছে একাধিক প্রশ্ন, রয়েছে একাধিক অভিযোগ।
কে দায়ী?
এই সমস্ত কিছুর জন্য দায়ী করা হয়েছে পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা Eduquity Career Technologies-কে।
এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, পরীক্ষা করানোর জন্য SSC-র নিজস্ব কোন সফটওয়্যার নেই, যার ফলে অন্যান্য কোম্পানির শরণাপন্ন হতে হয়। ওই কোম্পানিই পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে শুরু করে বায়োমেট্রিক সমস্ত কিছুর দায়িত্ব পালন করে।
২০১৮-১৯ সাল থেকে কম্পিউটার ভিত্তিক পরীক্ষা নেওয়া চালু করে SSC। তখন থেকে ২০২৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত এই পরীক্ষার জন্য TCS অর্থাৎ টাটা কনসাল্টেন্সি সার্ভিসের সাথে চুক্তি ছিল। কিন্তু ২০২৫ সালের ফেজ ১৩ পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে পরীক্ষা কারা নেবে সেই উদ্দেশ্যে মান সম্পন্ন ও কম খরচে পরীক্ষা করানোর দর দেওয়ায় Eduquity-কে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়।
জানলে অবাক হবেন, ২০২০ সালে সেন্ট্রাল ডায়রেক্টরেট জেনারেল অফ ট্রেনিংয়ের তরফ থেকে এই Eduquity-কে যে কোন পরীক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য বলে ঘোষণা করা হয়েছিল।
কিন্তু তার পরে, শুধু SSC নয়, ২০২২ সালের মার্চ মাসে মধ্যপ্রদেশ টিচার এলিজেবিলিটি টেস্ট, ২০২৩ সালের মার্চ মাসে, মহারাষ্ট্রের একটি কমন এন্ট্রান্স পরীক্ষা, জুন মাসে মধ্যপ্রদেশের পাটওয়ারি পরীক্ষা, ডিসেম্বর মাসে মধ্যপ্রদেশ এমপ্লয়িজ সিলেকশন বোর্ডের পরীক্ষা নেওয়ার দায়ভার দেওয়া হয় Eduquity-কে। তবে, প্রতিবারেই জালিয়াতি, এবং প্রশ্ন লিক হওয়ার মতো অভিযোগ উঠেছে। একবার তো মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান নিয়োগ বন্ধ রেখে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
এখন প্রশ্ন এত অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও এই কোম্পানিকে পরীক্ষা ভার দেওয়ার দায়িত্ব কেন দেওয়া হল? উত্তর পাওয়া যায়নি।
তবে, SSC-র চেয়ারম্যান এস. গোপালাকৃষ্ণণ একটি সাক্ষাৎকারকালে এই সমস্ত অভিযোগের উত্তরে জানিয়েছেন, এগুলি কোনটিই কাম্য নয়, এবং সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন এমন প্রত্যেকে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবেন। পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন প্রতিটি সম্যসার সমাধান করা হচ্ছে অতি দ্রুততার সাথে।