India Hood Decode: আহমেদাবাদের বিমান দুর্ঘটনার জন্য দায়ী কে? কিছু অজানা তথ্য

Air India Plane Crash
Air India Plane Crash

মাত্র ৩২ সেকেন্ড। মুহূর্তের মধ্যে শেষ হয়ে যায় ২৬০টি তরতাজা প্রাণ। আহমেদাবাদের প্লেন ক্র্যাশের (Air India Plane Crash) এই ঘটনা সকলেরই জানা। কিন্তু যে ঘটনা এখনও অবধি লুকিয়ে রাখা হয়েছে আপনাদের কাছে, সেটাই তুলে ধরেবো আমরা। আজ আমরা এই প্রতিবেদনে তুলে ধরবো এমন কিছু সত্য, এমন কিছু তথ্য, যা নাড়িয়ে দেবে আপনার বিশ্বাসের ভিত্তি, হারিয়ে দেবে মনুষ্যত্বের ওপর আপনার ভরসা।

ঘটনা ও প্রেক্ষাপটঃ

দিনটা ২০২৫ সালের ১২ই জুন, বৃহস্পতিবার। সকাল থেকেই পরিষ্কার আকাশ। ভারতের আহমেদাবাদের সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে লন্ডন গ্যাটউইক বিমানবন্দরে যাত্রা করার জন্য প্রস্তুত এয়ার ইন্ডিয়ার AI-171। বিমানটি বোয়িং কোম্পানির তৈরি করা বোয়িং 787 ড্রিমলাইনার এয়ারক্র্যাফট।

ঠিক ১২ ঘণ্টা আগে প্যারিস থেকে দিল্লিতে আসে এই বিমানটি। তারপর সকাল ১১টা ১৭ মিনিটে এই বিমানটি দিল্লি থেকে আহমেদাবাদে এসে পৌঁছায়।

এরপর ওই ফ্লাইটের একজন ক্রু সদস্য ওই বিমান নিয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে তিনি জানান, বিমানের পিছনে থাকা দুটি সমান্তরাল স্টেবিলাইজারের পরিমাপ করার জন্য যে সেন্সর থাকে তা সঠিকভাবে কাজ করছে না। এরপর এয়ার ইন্ডিয়ার ডিউটি এয়ারক্র্যাফট মেন্টেনেন্স ইঞ্জিনিয়ার তা ঠিক করে।

অন্যদিকে, ওই বিমানে দিল্লি থেকে আহমেদাবাদ আসা আকাশ বৎস নামের একজন যাত্রী, বিমানের একাধিক ত্রুটি লক্ষ্য করেন, এবং সেই সমস্ত কিছু ভিডিও করে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করেন। তাঁর অভিযোগ অনুযায়ী, প্লেনের উইং ফ্ল্যাপ্স অস্বাভাবিকভাবে ওপর-নীচে হচ্ছিল, প্লেনের এসি ঠিকঠাকভাবে কাজ করছিল না। প্লেনের টিভি কিংবা রিমোট কোনটাই ঠিকঠাক কাজ করছিল না। কিন্তু, ওই ক্রু সদস্য বা অন্য কেউ এই সমস্ত অভিযোগ জানায়নি। কেন?

আপনাদের এখানে মন হতেই পারে এত ঘন ঘন সময়সূচী একটি বিমানের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। কিন্তু এক্ষেত্রে আপনাদের জানিয়ে রাখি যে এটি যে কোন বিমান যাত্রার জন্য খুবই সাধারণ একটি ঘটনা। এই জন্যই প্রতিটি যাত্রার পর প্রতিটি বিমানের যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়, তার সমস্যা আছে কিনা জানার জন্য।

এরপর বিমানে মোট ২৪২ জন চড়েন, যার মধ্যে ছিল ২৩০ জন যাত্রী, ১০ জন ক্রু সদস্য এবং ২ জন পাইলট।

এরপর বিমানটি ওড়ার আগে পর্যন্ত বিমানে ৫৪,২০০ কিলো জ্বালানি সহ বিমানের সর্বমোট ওজন ছিল ২ লক্ষ ১৩ হাজার ৪০১ কিলো। যা সর্বোচ্চ ওজনের চেয়ে প্রায় ৫০০০ কেজি কম ছিল।

এরপর ১২টা ১০ মিনিটে গ্রিন সিগন্যাল দেওয়া হয়। বিমানটি নির্ধারিত সময়ের কিছুটা পরে, দুপুর ১টা বেজে ৩৮ মিনিট ৩৯ সেকেন্ডে টেক-অফ করে। ১টা বেজে ৩৮ মিনিট ৪২ সেকেন্ডে এই বিমানটি ১৮০ নটের সর্বোচ্চ গতি লাভ করে। এরপর দুটি ফুয়েল কন্ট্রোল স্যুইচ আচমকাই রান পজিশন থেকে ফুয়েল কাট-অফ পজিশনে চলে আসে। যার ১০ সেকেন্ড পরে ১টা বেজে ৩৮ মিনিট ৫২ সেকেন্ডে পাইলট পুনরায় প্রথম ইঞ্জিনের ফুয়েল কন্ট্রোল স্যুইচ কাট অফ থেকে রান পজিশনে নিয়ে আসে, আর ঠিক ৪ সেকেন্ড পর দ্বিতীয় ইঞ্জিনের ফুয়েল কন্ট্রোল স্যুইচ কাট অফ থেকে রান পজিশনে নিয়ে আসে। দুটি ইঞ্জিনে জ্বালানি যাওয়া শুরুর কিছুক্ষণ পরেই চলতে থাকতে প্রথম ইঞ্জিন, কিন্তু সমস্যা দেখা যায় দ্বিতীয় ইঞ্জিনে। এতক্ষণে বিমান মাটি থেকে ৬২৫ মিটারের সর্বোচ্চ উঁচুতে পৌঁছে গিয়েছিল। ১টা বেজে ৩৯ মিনিট ০৫ সেকেন্ডে পাইলট, এয়ার ট্রাফিককে কল করে ৩ বার মে ডে-র কল দেয়। এয়ার ট্র্যাফিক সাড়া দিলেও, ততক্ষণে প্লেনটি দেড় কিলোমিটার দূরে মেঘনানি নগরের বি জে মেডিকেল কলেজে গিয়ে ক্র্যাশ হয়। ১টা বেজে ৩৯ মিনিট ১১ সেকেন্ডে, ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার কাজ করা বন্ধ করে দেয়।

সেই সময় মেডিকেল কলেজের একাধিক প্রশিক্ষণরত শিক্ষার্থী এবং চিকিৎসকরা মধ্যাহ্নভোজের জন্য ক্যান্টিনে উপস্থিত ছিলেন। বিমানের ২৪১ জন যাত্রী সহ শেষ পর্যন্ত ২৬০ জনের মৃত্যু হয়। কেবলমাত্র একজন ব্রিটিশ নাগরিক বিশ্বাস কুমার রমেশ ভাগ্যের খেলায় প্রাণে বেঁচে যায়।

এবার আসা যাক ওই বিমানের পাইলটদের সম্পর্কে,

এই বিমানে পাইলট হিসাবে নিযুক্ত করা হয়েছিল ৫৬ বছর বয়সী, মুম্বাই-নিবাসী ক্যাপ্টেন সুমিত সাভারওয়াল, যার ১৫০০০ ঘণ্টার বেশি ফ্লাইং এক্সপেরিয়েন্স রয়েছে।

অন্যদিকে ৩২ বছর বয়সী কো-পাইলট ক্লাইভ কুন্দ্রার ৩৪০০ ঘণ্টার বেশি ফ্লাইং এক্সপেরিয়েন্স ছিল।

তবে, এই বিমানের ক্ষেত্রে যিনি মূল পাইলট, তিনি ছিলেন পর্যবেক্ষক পাইলটের ভুমিকায় এবং কো-পাইলট ছিলেন বিমানের মূল চালক। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, উভয় পাইলটই যাত্রার আগের দিন মুম্বাই থেকে আহমেদাবাদে এসেছিলেন, অর্থাৎ তারা পর্যাপ্ত বিশ্রাম পেয়েছিলেন। এবং  ব্রেদালাইজার টেস্ট অনুযায়ী নেশাগ্রস্ত ছিলেন না।

তদন্ত ও প্রিলিমিনারি রিপোর্টঃ

স্বাভাবিকভাবে, যে কোন প্লেন দুর্ঘটনার পর ৩০ দিনের মধ্যে একটি প্রিলিমিনারি বা প্রাথমিক রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। এই ক্ষেত্রেও ১১ই জুলাই, এয়ারক্রাফট অ্যাকসিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো অর্থাৎ AAIB-এর তরফ থেকে ১৫ পাতার একটি প্রাথমিক রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়।

তবে এখনও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত সম্পন্ন হয়নি। সধারণত বিমান দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে দেশের সরকার সেই তদন্ত করে, কিন্তু এক্ষেত্রে যেহেতু ক্র্যাশ হওয়া বিমানটি আমেরিকার সংস্থা দ্বারা নির্মিত ছিল, তাই লন্ডন এবং আমেরিকার ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড অর্থাৎ NTSB-ও এই তদন্তে সহায়তা করছে।

তদন্তের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে প্ল্যানে থাকা ব্ল্যাক বক্স। ব্ল্যাক বক্স সাধারণত দুটি রেকর্ডার নিয়ে সংগঠিত। একটি ককপিট ভয়েস রেকর্ডার, যা পাইলটদের ভয়েস রেকর্ড করে। এবং, দ্বিতীয়টি ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার, যা বিমানের উচ্চতা, গতি, ইঞ্জিনের পারফরম্যান্স রেকর্ড করে।

কী জানা যাচ্ছে প্রত্যক্ষদর্শী এবং প্রিলিমিনারি রিপোর্ট থেকে?

প্রথমত, এই দুর্ঘটনায়, যে ভিডিও চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে বিমান ওড়ার পরেও বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ার অর্থাৎ চাকা বন্ধ হয়নি। কিন্তু, নিয়ম অনুযায়ী, প্লেন রানওয়ে ছাড়া পরেই ধীরে ধীরে তা বন্ধ হয়ে যায়। সঠিকভাবে খোলেনি বিমানের ফ্ল্যাপসও, অর্থাৎ ডানা। যা নিয়ে অভিযোগ করেছিলেন ওই বিমানেরই ঠিক আগের যাত্রী আকাশ বৎস।

দ্বিতীয়ত, রিপোর্ট অনুযায়ী, এই বিমানের দুটি ইঞ্জিন ছিল, এবং দুটি ইঞ্জিনের আলাদা আলাদা ফুয়েল কন্ট্রোল স্যুইচ ছিল। আর ওই দিন দুটি স্যুইচই এক সেকেন্ডের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। অর্থাৎ, মাঝ আকাশে বিমান ওড়ার পরেই ফুয়েল কাট-অফ বন্ধ হয়ে যায়, ফলে ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, এবং সর্বোপরি ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়।

তৃতীয়ত, এই দুর্ঘটনার ভাইরাল হওয়া বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ারের সাথে র‍্যাম এয়ার টার্বাইন অর্থাৎ RAT চালু ছিল। নিয়ম অনুযায়ী, প্লেনের দুটি ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেলে RAT চালু হয়ে যায়। RAT চালু হলে হাওয়ায় টার্বাইন জোরে ঘুরে ইলেক্ট্রিসিটি তৈরি করে, যা বিমানকে আকাশে উড়তে সাহায্য করে। এতে খুব বেশি শক্তি উৎপাদন না হলেও, অন্তত খুব দরকারী সমস্ত মেশিনগুলি কাজ করা শুরু করে। এখানেও ১টা বেজে ৩৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডে RAT শুরু হয়েছিল, কিন্তু উচ্চতা কম থাকায় যথেষ্ট পাওয়ার জেনারেট হয়নি।

এই RAT কেবলমাত্র তিনটি কারণে চালু হয়, একটি ইলেকট্রিক্যাল বিপর্যয়, দ্বিতীয়টি হাইড্রোলিক বিপর্যয়, এবং তৃতীয়টি দুটি ইঞ্জিন বিপর্যয়।

চতুর্থত, প্রিলিমিনারি রিপোর্টে পাইলটদের দু লাইন কথোপকথন যোগ করা হয়েছে। ফুয়েল স্যুইচ বন্ধ হওয়ার পর একজন পাইলট আর একজনকে জিজ্ঞাসা করে, “তুমি ফুয়েল স্যুইচ কাট অফ করলে কেন?” উত্তরে দ্বিতীয় পাইলট বলেন, “আমি এমনটা করিনি।“ রিপোর্টে এর আগে বা পরে আর কোনও কথোপকথন দেওয়া হয়নি। আদেও আর কোন কথা হয়েছে কিনা তাও জানানো হয়নি। এছাড়াও, ওই রিপোর্টে কোথাও বলা নেই যে পাইলটরা জেনে বুঝে স্যুইচ অফ করেছিল! পাশাপাশি কোন পাইলট, কোন কথা বলেছে তাও জানা যায়নি।

অন্যান্য রিপোর্ট ও বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যাঃ

প্রথমত, দুটি ইঞ্জিন খারাপ হওয়ার কথা একাধিক রিপোর্ট এবং বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। যার স্বপক্ষে দুটি প্রমাণ দেওয়া হয়েছে – ১। পাইলটরা এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলকে ক্র্যাশের আগে জানিয়েছিল, থ্রাস্ট নট অ্যাচিভড। অর্থাৎ থ্রাস্ট অর্জন হয়নি। প্লেন ওড়ার সময়ে হাওয়াকে প্রচণ্ড গতিতে ইঞ্জিনের মাধ্যমে পিছনে ঠেলে বিমান সামনের দিকে এগিয়ে যায়। আর এই হাওয়া ঠেলে বের করাকেই থ্রাস্ট বলে। থ্রাস্ট না পাওয়া ইঞ্জিন বিভ্রাটের সিগন্যাল।

২।পাশাপাশি ল্যান্ডিং গিয়ার না তোলাও ইঞ্জিন বিভ্রাটের সিগন্যাল।

দ্বিতীয়ত, একাধিক বিশেষজ্ঞ দুটি ইঞ্জিন বিভ্রাটের আরও একাধিক কারণ জানিয়েছেন, যার মধ্যে একটি রয়েছে – ফুয়েল কন্টামিনেশন। অর্থাৎ তেলের মধ্যে জল, মাটি, ধাতু, ব্যাকটেরিয়া সহ অন্যান্য নানা রকমের বর্জ্য মিশে যাওয়া। এছাড়া, যদি জেট ফুয়েলের সাথে ডিজেল এক্সহস্ট ফ্লুইড মিশে যায়, যা গাড়িতে ব্যবহার করা হয়, সেই ক্ষেত্রেও ফুয়েল কন্টামিনেশন হতে পারে। অর্থাৎ ফুয়েল ভালো করে টেস্ট করা হয়নি। আর বিমানের জ্বালানির টেস্ট খুবই গুরুত্ব সহকারে সর্বদা করা দরকার।

যদি ফুয়েল কন্টামিনেশনের ঘটনা হয় তবে জানতে হবে আহমেদাবাদের এই এয়ারপোর্টে তিনটি সংস্থা তেল সরবরাহ করে, যার মধ্যে রয়েছে ইন্ডিয়ান অয়েল, ভারত পেট্রোলিয়াম এবং রিলায়েন্স।

তৃতীয়ত, প্রমাণ হিসাবে অনেক বিশেষজ্ঞ এই বিমানের ইঞ্জিন বিভ্রাটের কারণ হিসাবে ইলেক্ট্রিক্যাল বিভ্রাটের কথা জানিয়েছেন। সমস্ত বিমানে এমারজেন্সি ক্ষেত্রে বিকল্প অক্সিলারি পাওয়ার ইউনিট থাকে। যা বিদ্যুৎ সরবারাহের কাজ করে। কিন্তু ওই ইউনিট শুরু হতে ৯০ সেকেন্ড সময় লাগে। ওই দুর্ঘটনার দিন ৩২ সেকেন্ডের মধ্যে দুর্ঘটনাটি ঘটে।

চতুর্থত, অনেকেই ম্যানুফ্যাকচারিং ডিফেক্ট, নাহলে দেখাশোনার ব্যর্থতাকে দায়ী করেছে। ম্যানুফ্যাকচারিং ডিফেক্ট হলে সেই ক্ষেত্রে দায় বর্তায় বোয়িংয়ের ওপর। দেখাশোনার ব্যর্থতা হলে সেই দায় বর্তায় এয়ার ইন্ডিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস লিমিটেডের ওপর। এয়ার ইন্ডিয়া মূলত টাটার কোম্পানি হলেও, এয়ার ইন্ডিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস লিমিটেড একটি সরকারি কোম্পানি।

পঞ্চমত, ২০১৪ সালে এয়ার ইন্ডিয়ায় কর্মরত একজন জানিয়েছেন, যারা বিমান তদারকির কাজ করেন তাদের ৩৬ ঘন্টা ডিউটি দিতে হয়, সময়মতো দেওয়া হয় না বেতন, হয়না সঠিক খাওয়া-দাওয়া, ঘুম। একটা বিমান সম্পূর্ণ পরীক্ষা করতে কম করে লাগে ২-৩ ঘন্টা। এই কাজের জন্য একটি তৃতীয় শ্রেণীর কর্মসংস্থান ট্রেনিং প্রদান করে। সেই ট্রেনিংয়ে ৭ দিন ধরে ২৫ জনের কাজ করবে ১০ জন, কিন্তু পারিশ্রমিক পাবেন ৩ ভাগের ১ ভাগ। তাহলে প্রচন্ড গরমে ইঞ্জিনের তাপ সহ্য করে সঠিকভাবে টেকনিক্যাল কাজকর্ম সারবেন কী করে?

ষষ্ঠত, পাইলটদের দু’লাইন কথোপকথন প্রকাশ করার পরে অনেকেই পাইলটের মানসিকভাবে বিরক্ত থাকার এবং জেনে বুঝে স্যুইচ অফ কররার তত্ত্ব দিয়েছেন। অনেকেই আত্মহত্যা করার জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়ার যুক্তি দিয়েছেন।

অনেকেই যুক্তি দিয়েছেন, পাইলট এমন প্রশ্ন কেন করল যে, “তুমি কেন ফুয়েল স্যুইচ কাট অফ করলে?” কারণ যদি ভুল বশত কিছু হয়, তবে প্রশ্ন হওয়া উচিত ছিল – “স্যুইচ কাট অফ হল কি করে?” বা “ইঞ্জিন বন্ধ হল কেন?” তাহলে কি জেনে বুঝেই কেউ স্যুইচ অফ করল?

কিন্তু, অন্য পক্ষ থেকে আর এক পাইলট যে “না” বলেছে, সেটা যুক্তি দেওয়ার সময় বিবেচনা করেনি কেউই।

সপ্তমত, ফুয়েল কন্ট্রোল স্যুইচ কি ভুল করে অফ হতে পারে? কিংবা পাইলটরা কি এক সেকেন্ডের মধ্যে দুটি স্যুইচ অফ করতে পারে? এর উত্তরও পাওয়া যাবে এই স্যুইচের কাজের ধরন ব্যাখ্যা করলেই –

এটি কোন সাধারণ স্যুইচ নয়, যা যখন ইচ্ছা অন-অফ করা যায়। এতে একটি স্টপ লক মেকানিজম থাকে। যার ফলে, আপনাকে অফ বা অন করার আগে এটিকে আগে অন বা অফ পজিশন থেকে তুলে অন্য পজিশনে নিয়ে যেতে হবে। যা ভুল করে হাত লেগে হবে না। আর এখানে দুটো স্যুইচ অফ হয়েছে একসাথে। যা কোন রকমভাবেই ভুল করে হতে পারে না।

এছাড়াও এই স্যুইচ ব্যবহারের ক্ষেত্রে পাইলটদের জন্য কিছু কড়া বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে। প্লেন মাটিতে থাকলে, তবেই এই স্যুইচ অন-অফ করা যায়। অর্থাৎ, ওঠার সময় ইঞ্জিন স্টার্ট করার জন্য, এবং ল্যান্ডিংয়ের পর ইঞ্জিন বন্ধ করার জন্য। আকাশে ওড়ার সময় এই স্যুইচ সব সময় অন থাকে। কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে আকাশে ওড়ার সময় এটি অফ করলেও, কিছুক্ষণ পর অন করে দিতে হয়।

বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে, যেমন ইঞ্জিন বিভ্রাট বা ক্ষতি হলে আগুন লাগার ভয় থেকে নিরাপত্তার জন্য ফুয়েল সাপ্লাই অফ করে দেওয়া হয়। কিংবা প্লেনের ইঞ্জিনের কার্যক্ষমতা ঠিক করার জন্য এটিকে রিস্টার্ট বাটন হিসাবে ব্যবহার করা হয়।

এই প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্সের ইন্সপেকশন এবং ফ্লাইট সেফটি ডিরেক্টর জেনারেল এয়ার মার্শাল সঞ্জীব কাপুর জানিয়েছেন, “এক সেকেন্ডের মধ্যে ম্যানুয়ালিভাবে দুটি ইঞ্জিনের ফুয়েল কন্ট্রোল স্যুইচ অফ করা যায় না।“ এমনকি তিনি টুইট করে সমস্ত সিজন পাইলটকে এক সেকেন্ডের মধ্যে ফুয়েল কন্ট্রোল স্যুইচ অফ করার চ্যালেঞ্জ জানান।

অষ্টমত, একাধিক বিশেষজ্ঞ দুটি ইঞ্জিন বিপর্যয়ের তথ্যকে সমর্থন করে জানিয়েছেন, ক্র্যাশ হওয়া বিমানটি ৬২৫ মিটারের সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছেছিল। কিন্তু, ৬০০ মিটার উঁচুতে কোন বিমান উঠে গেলে, ড্রিমলাইনার-এর মতো বিমান একটি ইঞ্জিনেও যাত্রা সম্পন্ন করতে পারে। কিন্তু তেমনটা হয়নি। অর্থাৎ দুটি ইঞ্জিনেই সমস্যা হয়েছিল।

নবমত, অনেকেই প্রিলিমিনারি রিপোর্ট মেনে পাইলটদের ভুল ধরলেও, অনেক বিশেষজ্ঞ এই তথ্য নাকচ করে জানিয়েছেন। কোন রকম বিভ্রাট হলেই বিমানে এত ধরনের সতর্কতা দেওয়া হয়, যা অবজ্ঞা কোন পাইলট করতে পারে না।

দশমত, অনেকে যেখানে পাইলটদের দোষ দিয়েছেন, কিংবা দোষ দিয়েছেন এক সেকেন্ডের মধ্যে দুটি ফুয়েল কন্ট্রোল স্যুইচ অফ করার অভিযোগ, সেই অভিযোগ সম্পর্কে একজন পাইলট দাবী করেছেন, বোয়িং কোম্পানির ওই প্লেনের ফ্লাইট ক্রু ট্রেনিং ম্যানুয়াল অনুযায়ী, ডুয়াল ইঞ্জিন ব্যর্থ বা স্টোলের ক্ষেত্রে, উচ্চতা এবং গতি নির্বিশেষে তৎক্ষণাৎ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। এই পদক্ষেপ হিসাবে নোটে লেখা আছে, ডুয়াল ইঞ্জিন ব্যর্থতার ক্ষেত্রে দুটি ফুয়েল কন্ট্রোল স্যুইচকে অন অফ করলে, ইঞ্জিন পুনরায় চালু হয়ে যাবে। তাই এক্ষেত্রে যদি মেনে নেওয়া হয়, যে পাইলটরা জেনে বুঝে ওই ফুয়েল কন্ট্রোল স্যুইচ অফ করেছে, তা ম্যানুয়াল মেনে করেছে, কিন্তু প্রিলিমিনারি রিপোর্টে তা উল্লেখ করা হয়নি, বরং তাদের খলনায়ক বানানো হয়েছে।

বোয়িংয়ের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক অভিযোগ

এই প্রথম নয়, বোয়িং বিমান নিয়ে আগেও একাধিক ম্যানুফ্যাকচারিং ডিফেক্টের উদাহরণ দেখা গিয়েছে, দেখা গিয়েছে ব্যাটারি গরম হওয়ার ঘটনা। যার ফলে ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে এই বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারের যাত্রা  বিশ্বব্যাপী ব্যান করে দেওয়া হয়েছিল। এমনকি নরওয়ের তরফ থেকে ড্রিমলাইনারের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপে বিমানের যান্ত্রিক গলযোগ এবং ইঞ্জিনের সমস্যার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল।

সময়টা ২০২১ সালের নভেম্বর মাস। লন্ডন থেকে হায়দ্রাবাদ যাত্রা করার সময় ওই একই বিমানে সমস্যা দেখা গিয়েছিল। সেই সমস্যা ছিল ফুয়েল লিক হওয়ার। ওই প্লেনটিকে তড়িঘড়ি তুরস্কে অবতরণ করতে দেওয়া হয়।

বোয়িংয়ের কর্মীদের অভিযোগ

আল জাজিরা, বোয়িং নিয়ে একাধিক তদন্ত করেছে, এবং সেই নিয়ে একাধিক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি একাধিক কোয়ালিটি ম্যানেজার সহ টেকনিশিয়ানরা বোয়িং নিয়ে একাধিক অভিযোগ করেন যা আল জাজিরা সহ বিভিন্ন প্রতিবেদন হিসাবে উঠে আসে।

বোয়িংয়ের যে ফ্যাক্টরিতে বিমান তৈরি করা হত, সেখানেকার কর্মীদের মধ্যে একজনকে ক্যামেরা দিয়ে পাঠায় আল জাজিরা। সে আন্ডারকভার হিসাবে গিয়ে, বিমান তৈরির সাথে যুক্ত ১৫ জনকে জিজ্ঞাসা করে, “আপনারা এই প্লেনে উঠতে চান কিনা?” তাদের মধ্যে ১০ জন উঠবেন না বলে জানিয়ে ছিলেন। কর্মীরা অভিযোগ জানিয়ে বলেছিলেন, “ড্রিমলাইনার-এর মধ্যে খারাপ যন্ত্রাংশ লাগানো হয়েছে। এবং এই বিষয়গুলি রিপোর্ট না করার জন্য কর্মীদের ওপর চাপও দেওয়া হয়। এমনকি এই সংস্থার একজন কোয়ালিটি ম্যানেজার নিজের স্ত্রীকে ড্রিমলাইনার-এ চড়বেন না বলে জানিয়েছিলেন।

২০১২ থেকে ২০১৪ সাল নাগাদ খারাপ যন্ত্রাংশ দিয়ে নির্মিত বিমানের মধ্যে ১১টি বিমান ভারতকে সরবরাহ করা হয়েছিল, যার মধ্যে ৬টি এয়ার ইন্ডিয়াকে দেওয়া হয়েছিল, এবং তার মধ্যে তিনটির অবস্থা অত্যন্ত গুরুতর ছিল। অন্যান্য বিমানগুলির অবস্থাও অত্যন্ত খারাপ ছিল। যার পর ওই সময়ে সংস্থার একজন কোয়ালিটি ম্যানেজার সিন্থিয়া কিচেনসের রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছিল। আপনি জানলে অবাক হবেন, সম্প্রতি ক্র্যাশ হওয়া বিমানটি ২০১৪ সালের ৩১শে জানুয়ারি দেওয়া হয়েছিল।

অনেক দিন চিন্তাগ্রস্ত থাকার পর সিন্থিয়া নিজের বসকে এই বিষয়ে জানান। সিন্থিয়ার বস তাকে আশ্বস্ত করে জানায়, “চিন্তা করার কিছু নেই এই সমস্ত বিমান উন্নয়নশীল দেশে পাঠানো হবে। আমাদের দেশে থাকবে না।“ এই উত্তর শুনে আরও অবাক হয় সিন্থিয়া।

এই সংস্থায় ৩০ বছর ধরে কাজ করা জন বার্নেট নামক একজন কোয়ালিটি ম্যানেজার অভিযোগ জানিয়ে বলেন, “এই কোম্পানি থেকে এখনও সেই বিমান তৈরি হয়নি, যা আকাশে ওড়ার যোগ্য।“ এই অভিযোগ করার কিছুদিন পরে তিনি নিজের মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেন।

আল জাজিরার একটি তদন্ত অনুযায়ী, আমেরিকার ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অর্থাৎ FAA-এর তরফ থেকে ড্রিমলাইনার বিমানের লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি ঠিক ভাবে পরীক্ষা করা হয় না। কারণ, এমন ঘটনা আগেও ঘটেছে, যেখানে FAA, ড্রিমলাইনার-এর ব্যাটারি অনুমোদন করার ৯ দিনের মধ্যে দুবার ব্যাটারি বিপর্যয় ঘটেছে।

FAA -র মাইক হোয়াইটেকার জানান, বোয়িংয়ের উচিত লাভের থেকে নিরাপত্তায় মনোযোগ দেওয়া।

২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে বোয়িংয়ের নতুন একটি ৭৩৭ ম্যাক্স বিমান ইন্দোনেশিয়ায়, এবং ২০১৯ সালের মার্চ মাসে বোয়িংয়ের আর একটি নতুন বিমান ৭৩৭ ম্যাক্স ইথিওপিয়ায় দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়। দুটি দুর্ঘটনা মিলিয়ে মোট ৩৪৬ জন লোক মারা গিয়েছিলেন। মামলার নিষ্পত্তি করার জন্য আমেরিকার জাস্টিস ডিপার্টমেন্টকে বোয়িংয়ের তরফ থেকে ১.১ বিলিয়ন ডলার দেওয়া হয়।

বোয়িং বিমানের ফুয়েল কন্ট্রোল স্যুইচের ডিজাইনের গাফিলতি এবং যান্ত্রিক গোলযোগ সম্পর্কে ২০১৮ সালের ১৭ই ডিসেম্বর আমেরিকার FAA-র একটি একটি বুলটিন প্রকাশিত হয়। সেই বুলেটিন অনুযায়ী, বোয়িং ৭৩৭ বিমানের অপারেটররা অভিযোগ জানিয়ে বলেছেন, বিমানের ফুয়েল কন্ট্রোল স্যুইচ না তুলেই, অন অফ করা যাচ্ছে। অর্থাৎ লকিং ফিচার্স কাজ করছে না। এর মধ্যে বোয়িং ৭৮৭-এও ওই একই ধরনের স্যুইচ লাগানো ছিল। এমনকি, FAA তখনই সমস্ত বিমান মালিকদের এই প্লেনের ফ্যুয়েল কন্ট্রোল স্যুইচ তদারকির নির্দেশ দেয়।

২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে বোয়িংয়ের একজন ইঞ্জিনিয়ার স্যাম সালেহপুর FAA-কে অভিযোগ জানিয়ে বলে, ড্রিমলাইনার ভুলভাবে বিমানের যন্ত্রাংশ জোড়ে, যার ফলে আকাশে যখন তখন সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে বিমান। এছাড়া কম খরচের জন্য সংস্থা ভিন্ন জায়গা থেকে বিমানের যন্ত্রাংশ বানায়, যার ফলে একটির সাথে অন্য যন্ত্র মেলে না। এই বিষয়ে কর্মীদের জানানো হলেও তারা প্রত্যেকেই সেই অভিযোগ এড়িয়ে যায়।

তবে, ড্রিম লাইনারের তরফ থেকে এই সমস্ত অভিযোগ সম্পর্কে জানানো হয়, যদি এতই অভিযোগ থাকে, তবে এখনও অবধি কোন বিমান ক্র্যাশ করেনি কেন?

এই প্রসঙ্গে উত্তর দিয়েছিলেন, সংস্থায় ৩০ বছর ধরে কাজ করা কোয়ালিটি ম্যানেজার জন বার্নেট। তিনি জানান, একটি বিমান যতই ভুলভাবে বানানো হোক তা ক্র্যাশ হতে ১১ থেকে ১২ বছর সময় লাগে। আর আপনি এটাও শুনলে অবাক হবেন যে এই বিমানটি ১১ বছরের পুরানো।

টাটার ভূমিকা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন

এয়ার ইন্ডিয়া সংস্থার বিরুদ্ধেও একাধিক প্রশ্ন তোলা উচিত বলে মনে করেন অনেকেই। কারণ FAA-র তরফ থেকে সমস্ত বিমান মালিকদের প্লেনের ফ্যুয়েল কন্ট্রোল স্যুইচ তদারকির যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, সেই তদারকি এয়ার ইন্ডিয়া করেনি। কারণ হিসাবে সংস্থা জানিয়েছিল যে এটি কোন আবশ্যক নিয়ম ছিল না। এটি একটি পরামর্শ প্রস্তাবনা ছিল। আমাদের কোন প্রয়োজনীয়তা ছিল না।  যার ফলে এয়ার ইন্ডিয়ার গাফিলতির কথাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না!

প্লেনের একাধিক চালক জানিয়েছে, তারা প্লেন ওড়ানোর সময় ককপিটে বিশ্রাম নিতে পারে না। যার ফলে ২০২৪ সালের মে মাসে ৩০০ জন ক্রু সদস্য একসাথে সিক লিভ নিয়েছিলেন। আর ফোন স্যুইচ অফ করে দিয়েছিলেন। যা সেই সময় শোরগোল ফেলে দিয়েছিল।

২০২৩ সালের জুলাই মাসে DGCA-র তরফ থেকে বিভিন্ন বিমানের ১৩টি র‍্যান্ডম পয়েন্ট পরীক্ষা করা হয়। সেখানে দেখা যায় যে এয়ার ইন্ডিয়ার তরফ থেকে এই অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পয়েন্টগুলি কখনও পরীক্ষা করা হয়নি। কিন্তু এয়ার ইন্ডিয়া ক্রমাগত অডিট করার ফেক রিপোর্ট জমা দিচ্ছিল। এই নিয়েও কখনও তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

এছাড়া জানা গিয়েছে, এই প্লেনের শেষ কম্প্রিহেন্সিভ চেক ২০২৩ সালের জুন মাসে অর্থাৎ ২ বছর আগে করা হয়েছিল। ২০২৫ সালের মার্চ মাসে শেষ বারের মতো ক্র্যাশ হওয়া এই বিমানের ডানদিকের ইঞ্জিন মেরামত করা হয়েছিল। আর এপ্রিল মাসে বাম দিকের ইঞ্জিন পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল।

সরকারের পদক্ষেপ

প্রিলিমিনারি রিপোর্ট নিয়ে একজন পাইলট দাবী করেছেন এই রিপোর্টে কোন সমস্যা আছে, কারণ তাতে না আছে কোন ফাইল নম্বর, না আছে কোন ডিপার্টমেন্ট বা কর্তৃপক্ষের পক্ষের সই। কিন্তু তা সত্বেও, সরকারে তরফ থেকে ১৭ই জুলাই জনগণ, এবাং মিডিয়ার উদ্দেশ্যে একটি আবেদন প্রকাশ করা হয়, যেখানে অফিসারের সই আছে, কিন্তু প্রিলিমিনারি রিপোর্টে কোন সই নেই।

অন্যদিকে এয়ারলাইন পাইলটস অ্যাসোসিয়েশন পাইলটদের রেকর্ড করা সম্পূর্ণ কথোপকথন প্রকাশ করার অনুরোধ জানিয়েছে।

এমনকি এই ঘটনার ঠিক কয়েক সপ্তাহ আগে ২০২৫ সালের ১৫ ই মে, লন্ডনের সিভিল এভিয়েশন অথোরিটি এবং FAA-এর তরফ থেকে একটি নোটিশ জারি করা হয়েছে, যেখানে ফ্যুয়েল শাট অফ ভালভের আবশ্যিক পর্যালোচনার নির্দেশ দেওয়া হয়। তাই এখানেও প্রশ্ন থেকেই যায় সরকারের তরফ থেকে কী তাহলে এই নির্দেশিকা আবশ্যিক করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি?

তবে দুর্ঘটনার এক মাস পরেই, ১৪ই জুলাই তড়িঘড়ি DGCA-র তরফ থেকে বোয়িংয়ের সমস্ত বিমানের ফুয়েল স্যুইচ পর্যবেক্ষণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। যার পরেই প্রশ্ন উঠছে, যদি ভুল পাইলটদের থাকে তাহলে এখন কেন তড়িঘড়ি এই স্যুইচ চেক করা হচ্ছে?

এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, প্রিলিমিনারি রিপোর্টে পাইলটদের ওপর সরাসরি এই দুর্ঘটনার দায় চাপানো হয়নি। এই রিপোর্টে পাইলটদের অসম্পূর্ণ কথোপকথন প্রকাশ করার জন্য অনেকে এমনটার ইঙ্গিত দিচ্ছেন।

আবার অনেকেই ২০২২ সালের মার্চ মাসে চিনে বোয়িং ৭৩৭ বিমান দুর্ঘটনার প্রসঙ্গ তুলেছেন। সেই দুর্ঘটনায় বিমানের অদ্ভুত লম্বালম্বি পতন দেখা যায়। কিন্তু তিন বছর কেটে গেলেও, জাতীয় সুরক্ষার দায় দিয়ে এই ঘটনার কারণ সরকার প্রকাশ করেনি। আমাদের দেশেও এমনটা হবে না তো?

Leave a Comment