৮০,০০০ যৌন ছবি-ভিডিও! সাথে ১০০ কোটি টাকার তোলাবাজি! শুনলে অবাক হবেন সম্প্রতি উন্মোচন হয়েছে এমনই একটি ঘটনা, যার সাথে যুক্ত রয়েছেন বেশ কয়েকজন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী। যে সন্ন্যাসীদের দেখে ভক্তি-জ্ঞানের কথা শুনতেন সবাই, আজ তাদের কর্মকাণ্ড দেখে চোখ কপালে উঠেছে সাধারণ মানুষের। কিন্তু, এই ঘটনার সূত্রপাত কীভাবে? কীভাবেই পর্দা ফাঁস হল? সত্য উদ্ঘাটন করবে India Hood।
কী ঘটেছে?
ঘটনার সূত্রপাত ২০২৫ সালের জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে। হঠাৎ করেই থাইল্যান্ডের ব্যাংককে (Thailand Monk Scandal) অবস্থিত একটি বৌদ্ধমঠ থেকে নিখোঁজ হয়ে যান একজন প্রবীণ বৌদ্ধ সন্ন্যাসী, যার নাম ফ্রা থেপ ওয়াজিরাপামোক। তদন্তে নেমে অনুসন্ধানকারীরা জানতে পারেন, যৌন সম্পর্কের কারণে ব্ল্যাকমেল করে একজন মহিলা ওই সন্ন্যাসীর থেকে জোর পূর্বক টাকা আদায় করার পর ওই সন্ন্যাসী মঠ ছেড়ে চলে যান।
এরপর আরও বিস্তারিত তদন্তে নামে ব্যাংকক ও থাইল্যান্ড পুলিশ। ২০২৫ সালের জুলাই মাসের শুরুর দিকে অনুসন্ধান করার সময়ে ৪২ বছর বয়সী উইলাওয়ান এমসাওয়াত ওরফে ‘সিকা গলফ’-এর বাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। তল্লাশির পরে ওই মহিলাকে গ্রেফতার করা হয়। ওই মহিলার দুই সন্তান রয়েছে।
তল্লাশির সময় ওই মহিলার একটি ফোন ও একাধিক ইলেকট্রনিক ডিভাইস বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, যেখানে প্রায় ৮০,০০০ এরও বেশি ছবি এবং ভিডিও খুঁজে পাওয়া গিয়েছে।
এরপর ১৫ জুলাই, একটি সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানিয়েছে, “মিসেস গল্ফ” নামে পরিচিত ওই মহিলা কমপক্ষে নয়জন বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর সাথে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হতেন, এবং সেই ঘটনা মোবাইলে রেকর্ড করে রাখতেন। এরপর গত তিন বছরে ধরে ওই মহিলা রেকর্ড করা ওই ছবি এবং ভিডিও ব্যবহার করে ওই সন্ন্যাসীদের ব্ল্যাকমেল করে তাদের থেকে প্রায় ৩৮৫ মিলিয়ন বাহট অর্থাৎ ভারতীয় কারেন্সি অনুযায়ী প্রায় ১০৫ কোটি টাকা আদায় করেছিলেন। তদন্তকারীরা ওই মহিলার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে, মঠের অ্যাকাউন্ট থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা ট্রান্সফার করার লেনদেনের প্রমাণ পেয়েছেন।
এরপর, ফ্রা থেপ ওয়াজিরাপামোক নামক নিখোঁজ হওয়া ওই বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর খোঁজ করার উদ্দেশ্যে ওই মহিলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে, “২০২৪ সালের মে মাসে গলফ নামক ওই মহিলার সাথে “সম্পর্কে” ছিলেন নিখোঁজ হওয়া ওই সন্ন্যাসী। কিছু সময় পরে অভিযুক্ত ওই মহিলা, সন্ন্যাসীর সন্তানের সাথে গর্ভবতী হওয়ার দাবি করেন, এবং সন্তানের ভরণপোষণের জন্য সাত মিলিয়ন বাহট অর্থাৎ প্রায় ২ কোটি টাকা দাবি করেন।
এরপর পুলিশ ধারণা করেছে, যে অন্যান্য সন্ন্যাসীদের থেকেও ওই মহিলা ব্ল্যাকমেল করে একইভাবে টাকা আদায় করেছে। পুলিশ জানিয়েছে যে, সন্ন্যাসীদের থেকে উত্তোলন করা টাকার, বেশিরভাগ অংশ অনলাইন জুয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। ওই মহিলার বিরুদ্ধে তোলাবাজি, অর্থ পাচার এবং চুরির মতো একাধিক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পাশাপাশি ওই সন্ন্যাসীদের বিরুদ্ধেও তদন্ত শুরু করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত ওই মহিলা এবং সন্ন্যাসীরা মাদক পাচারের সাথেও যুক্ত।
সন্ন্যাসীরা এত টাকা কোথা থেকে পেল?
এই বিষয়ে ব্র্যাড মিল্কি নামে একজন জানিয়েছেন, “মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ এবং সন্ন্যাসীদের ভাতা দেওয়ার উদ্দেশ্যে এই মঠগুলি জাতীয় প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি, একাধিক বেসরকারি এবং সরকারি টাকা অনুদান হিসাবে পেট। যেহেতু এর মধ্যে অধিকাংশ টাকাই থাই জনগণের করের টাকা, ফলে মানুষ এই ঘটনায় মর্মাহত হওয়ার পাশাপাশি ক্ষিপ্র হয়ে উঠেছে।
এছাড়াও, “সন্ন্যাসীদের দুর্ব্যবহার” সম্পর্কে রিপোর্ট করার জন্য পুলিশ একটি হটলাইনও খুলেছে। জানা গিয়েছে, ওই সন্ন্যাসীদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ পর্যালোচনা করার জন্য, থাই বৌদ্ধধর্মের নিয়ন্ত্রক সংস্থা – সংঘ সুপ্রিম কাউন্সিল একটি বিশেষ কমিটি গঠন করবে। সরকারের তরফ থেকে ওই সন্ন্যাসীদের, সন্ন্যাসী বিধি লঙ্ঘন করার জন্য জরিমানা এবং জেল সহ আরও কঠোর শাস্তির আবেদন জানানো হয়েছে। এরপর থাইল্যান্ডের রাজা ভাজিরালংকর্ন, ৮১ জন সন্ন্যাসীকে সর্বোচ্চ উপাধি প্রদানের উদ্দেশ্যে জারি করা রাজকীয় আদেশ প্রত্যাহার করে নেন। তবে, এই ঘটনা এখন কোন দিকে মোড় নেবে সেই দিকেই তাকিয়ে বৌদ্ধ সমাজ সহ গোটা বিশ্ব।