পুলিশ থেকে পুলিশের স্ত্রী সবাই কার কথায় নাচছে?

Police Wives Protest
Police Wives Protest

১২ই আগস্ট হঠাৎ করেই ধুন্ধুমার হয়ে উঠল কলকাতার প্রেস ক্লাব। পুলিশ পত্নী ভার্সেস সাংবাদিকদের তর্কাতর্কির (Police Wives Protest) এক বিরল ঘটনার সাক্ষী হয়ে থাকল রাজ্যবাসী। ঠিক কি এমন হল যার জন্য ঘটা করে সাংবাদিক বৈঠক ডাকলেন পুলিশদের স্ত্রীরা? কেনই বা শুভেন্দুর বিরুদ্ধে গলা ফাটালেন তারা? সাংবাদিকরা কি এমন প্রশ্ন করলেন যার ফলে বৈঠক ছেড়ে চলে গেলেন উর্দিধারীদের স্ত্রীরা।

আজ সব তথ্য এক এক করে ডিকোড করবে India Hood।

২০২৪ সালের ৯ই আগস্ট। এক ভয়াবহ, নির্মম রাতের সাক্ষী থেকেছে শহর কলকাতা। কিন্তু বছর ঘুরলেও বিচার পায়নি আর.জি.কর কাণ্ডে প্রয়াত চিকিৎসক। তাই ঠিক এক বছর পর বিচার চেয়ে ‘নবান্ন অভিযান’ কর্মসূচীর ডাক দেন প্রয়াত চিকিৎসকের মা-বাবা। কর্মসূচীর দিন ঠিক করেছিলেন মেয়ের মৃত্যুর দিন, অর্থাৎ ৯ই আগস্ট।

কিন্তু, এই ঘটনায় সাড়া দেয়নি রাজ্যের শাসক দল, চিকিৎসক, সিপিআইএম এবং কংগ্রেস। তবে, এই অভিযানকে সম্পূর্ণ রূপে সমর্থন করে এগিয়ে আসে বিজেপি।

ঘটনার ভয়াবহতা কল্পনা করে হাইকোর্টে নবান্ন অভিযান ঠেকানোর আবেদন জানায় রাজ্য সরকার। তবে, হাইকোর্ট এই অভিযানে কোন নিষেধাজ্ঞা জারি না করায় রাস্তায় বিশাল পুলিশ বাহিনী নামায় শাসকদল। অভিযান ঠেকাতে জাহাজের কন্টেনার থেকে শুরু করে গার্ড রেল, ব্যারিকেড – সমস্ত কিছু দিয়ে তৈরি করা হয় নিরাপত্তা বলয়।

এরপর ২০২৫ সালের ৯ই আগস্ট, বেলা বাড়ার সাথে সাথে রাস্তায় নামে মানুষের ঢল। পুলিশ আটকালে বাড়ে ধ্বস্তাধস্তি, উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। ওই মিছিলে এক দিকে আহত হন নির্যাতিতার মা, তাঁর কপালে চোট লেগে ফুলে যায়, ধস্তাধ্বস্তিতে আঘাত লাগে পিঠেও, অভিযোগের আঙুল ওঠে পুলিশের দিকে। অন্যদিকে ওই অভিযানে জখম হন বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মীও।

নবান্ন অভিযানে শুভেন্দু অধিকারীর আক্রমণ

ওই মিছিলে একাধিক বিজেপি বিধায়ক, নেতা ও কর্মীদের নিয়ে যোগ দেন শুভেন্দু অধিকারী। যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অশোক দিন্দা, সজল ঘোষ, অর্জুন সিং, অগ্নিমিত্রা পাল, কৌস্তভ বাগচি। শুভেন্দু অধিকারী সহ একাধিক নেতাদের পুলিশ পার্ক স্ট্রিট মোড়ে আঁটকে দিলে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন বিরোধী দলনেতা। নবান্ন অভিযান কর্মসূচীর শেষে পার্ক স্ট্রিটে দাঁড়িয়ে কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে তীব্র আক্রমণ করেন শুভেন্দু অধিকারী। সেদিন ঠিক কি বলেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী?

দেখে নিন সেই ভিডিও – https://www.facebook.com/share/v/14Fsb68ZVZc/

নবান্ন অভিযানে নির্যাতিতার মায়ের ওপর পুলিশের যে আক্রমণ চলে, তার বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে সারা বাংলার মানুষ। সোশ্যাল মিডিয়া হোক বা টিভি চ্যানেল, সব জায়গায় বাংলার পুলিশকে ধিক্কার জানাতে শুরু করে সাধারণ মানুষ।

পুলিশ পত্নীদের সাংবাদিক বৈঠক

এর পরেই ১২ই আগস্ট হঠাৎ কলকাতা প্রেস ক্লাবে একটি সাংবাদিক বৈঠকের ডাক দেন ‘পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ আবাসিক মহিলা বৃন্দ’ এবং ‘কলকাতা পুলিশ আবাসিক মহিলা বৃন্দ’-এর সদস্যারা। ওই বৈঠকে শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্যের সমালোচনা করেন কর্মরত পুলিশ আধিকারিক ও কর্মীদের স্ত্রীরা। পাশাপাশি তারা সরব হন রাজ্যের পুলিশ কর্মী ও তাদের পরিবারের বিরুদ্ধে নানা রকম কু-মন্তব্যের বিরদ্ধেও। তবে, এই বৈঠকে নির্যাতিতার মায়ের প্রতি কোন সমবেদনা জানায়নি তারা।

ওই বৈঠকে মূলত বক্তব্য রাখেন কলকাতা পুলিশের ASI-এর স্ত্রী সালমা সুলতানা। তিনি ঠিক কী বলেছিলেন ওইদিন?

দেখে নিন ভিডিও – https://www.facebook.com/watch/live/?ref=watch_permalink&v=747762671312165

শুধুমাত্র বিরোধী দলনেতার ওপর এই ধরনের বিরোধিতা দেখেই কিছু সাংবাদিক ওই পুলিশ কর্মীদের স্ত্রীদের সরাসরি জিজ্ঞাসা করেন তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল ও বোলপুর থানার IC লিটন হালদারের ঘটনা সম্পর্কে। তারা প্রশ্ন করেন কেন অনুব্রতর বেলায় এমন প্রতিবাদ করেননি তারা?

কিন্তু হঠাৎ করে অনুব্রতর নাম উঠে এল কেন?

আজ থেকে মাস দুয়েক আগে একটি অডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়, যেখানে শোনা যায় অনুব্রত মণ্ডলের কিছু মন্তব্য। আর সেই মন্তব্য তিনি করেছিলেন বোলপুর থানার IC লিটন হালদারের প্রয়াত মা ও বউকে নিয়ে। ঠিক কি ছিল সেই অডিওতে?

শুনে নিন ফোন কলের সেই রেকর্ডিং – https://www.youtube.com/watch?v=Lvr-KRBM2OE

শুধু তাই নয়, বিভিন্ন সময়ে পুলিশকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমও। কিন্তু কখনোই অনুব্রত মণ্ডল, কিংবা মুখ্যমন্ত্রী, কিংবা কলকাতার মেয়রের প্রতি প্রতিবাদ জানিয়ে প্রেস কনফারেন্স করতে দেখা যায়নি পুলিশ পত্নীদের। তাই এই প্রশ্ন করতেই খোঁচে যান তারা।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সালমা সুলতানা বলেন, ‘‘তখনও আমরা সাংবাদিক বৈঠক করে অনুব্রত মণ্ডলের মন্তব্যের নিন্দা করেছিলাম। কসবা থানায় আমরা লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিলাম।’’

এমন জবাবে পাল্টা প্রশ্ন ওঠে, অনুব্রত বোলপুর থানার আইসিকে কটু কথা বললেন আর সেই অভিযোগ কলকাতা পুলিশের অধীন কসবা থানায় কেন জানানো হল? পুলিশ অফিসারকে আক্রমণ করার পর দলের কাছে দায়সারা ক্ষমা চেয়ে পার পেয়ে গেছেন তিনি। তাঁকে মাত্র একদিনই পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাঁর ফোনও বাজেয়াপ্ত করা হয়নি। সেক্ষেত্রে এরকম প্রতিবাদ দেখা যায়নি কেন?”

যদিও সমস্ত প্রশ্নের সুদূত্তর দিতে পারেননি কেউই।

সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নবাণে হঠাৎ করেই তাল কাটে শহরের রক্ষাকর্তাদের সহধর্মিণীদের। ২৫ মিনিট পর এই সংবাদ সম্মেলন শেষ করে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মিছিল করেন পুলিশ পত্নীরা।

তবে বিরোধী দল নেতাকে নিয়ে বারংবার এমন অভিযোগ করার পর, এবার তিন পুলিশ স্ত্রীকে আইনি নোটিশ পাঠালেন শুভেন্দু অধিকারী। বললেন, বিরোধী দলনেতার পদের অসম্মান করা হয়েছে। তাই, অভিযোগ না ফেরালে মানহানির মামলা করবেন তিনি।

এছাড়া, বিজেপি নেতা সহ সিপিআইএম নেতারা পর্যন্ত এই ঘটনাকে “সম্পূর্ণরূপে স্ক্রিপ্টেড” বলে আখ্যা দেন। কেউ কেউ আবার বলেছেন “এটি পুরোটাই তৃণমূলের প্ল্যান”। অনেকের মতে, তৃণমূলের ঢাল হয়ে আগে রাস্তায় নামত পুলিশ, আর এবার রাস্তায় পুলিশদের স্ত্রী!

আপনাদের কি মনে হয় তবে কি সত্যি এবার তৃণমূলের প্রতিনিধি হয়ে কাজ করছেন পুলিশের স্ত্রীরা?

Leave a Comment