‘ব্রিটিশদের ভয়ে জার্মানি পালিয়েছিলেন নেতাজি!’ দাবি কেরলের পাঠ্যবইয়ে

Kerala

প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: ভারতবর্ষ স্বাধীন করার তাগিদে যে সমস্ত ভারতীয় সংগ্রামী ব্রিটিশদের ঘুম ওড়ানোর দায়িত্বে ছিলেন তাঁদের মধ্যে প্রথম সারিতে ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। যাঁকে ছাড়া বীর সংগ্রামীদের তালিকা তৈরি করা দুষ্কর। কিন্তু এবার তাঁকে নিয়েই উঠল বিকৃত তথ্য। ‘ব্রিটিশদের ভয়ে জার্মানিতে পালিয়ে গিয়েছিলেন নেতাজি!’ এই দাবি কেরল পুস্তকে উঠে আসতেই শুরু হল জোর সমালোচনা, এমনকি ঐতিহাসিক ভুল বলেও ক্ষমা চাইল কেরল সরকার।

সমালোচনার মুখে পড়েছে কেরলের শিক্ষা দফতর

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু সারা জীবনই তীব্র দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদের আদর্শে অনুপ্রাণিত ছিলেন। এক জন হিন্দু হিসেবে রামকৃষ্ণদেব ও স্বামী বিবেকানন্দের মন্ত্রশিষ্য ছিলেন তিনি। অন্যদিকে তেমনই রাজনৈতিক দর্শনের দিক থেকে শিষ্য ছিলেন ধর্মনিরপেক্ষ ভারতপথের প্রধান এক দিশারি দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের। চিত্তরঞ্জনের মতোই নেতাজি সুভাষের জীবনে ধর্মান্ধতা ও মৌলবাদের স্থান ছিল না কোনও। আর সেখানে দাঁড়িয়ে গোটা দেশ যখন এই বাঙালি বীরের সাহসিকতার প্রশংসায় পঞ্চমুখ, সেখানে তাঁর নামেই উঠল এবার বিরাট কলঙ্ক ছড়াল কেরল! যেখানে নেতাজির সম্বন্ধে অন্যান্য অনেক তথ্যের সঙ্গে বলা হয়েছে যে ব্রিটিশদের ভয় পেয়ে নাকি দেশ ছেড়ে জার্মানি চলে গিয়েছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। আর তাতেই প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছে কেরলের শিক্ষা দফতরের স্টেট কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং বিভাগ।

নেতাজিকে নিয়ে বিকৃত তথ্য

জানা গিয়েছে, কেরলের শিক্ষা দফতর থেকে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর জন্য একটি হ্যান্ডবুক বিতরণ করা হয়েছিল শিক্ষকদের হাতে। সেই বইতে একটি জায়গায় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু সম্বন্ধে লেখা ছিল। আর সেখানেই উল্লেখ করা হয়েছিল নেতাজির জার্মানিতে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা, আর এই বই হাতে পাওয়ার পর পড়তে গিয়ে খটকা লাগে শিক্ষকদেরই। সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা বিষয়টি শিক্ষা দফতরকে জানান। কেরলের শিক্ষা দফতর বইগুলি খতিয়ে দেখার পর সেগুলি ফেরত নিয়ে নেয়। তারপর ব্রিটিশদের ভয় পেয়ে দেশ ছেড়েছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু এই লাইনটি পরিবর্তন করে ঐতিহাসিক ভুলের অজুহাত দিয়ে নতুন করে বই পাঠানো হয় শিক্ষকদের কাছে। কিন্তু তবুও বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের জল অনেক দূর গড়িয়েছে।

আরও পড়ুন: BLA-দের তথ্য নিয়ে কমিশনের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে তৃণমূল! দ্রুত শুনানির আর্জি খারিজ বিচারপতির

কী বলছেন কেরলের শিক্ষামন্ত্রী?

কেরলের শিক্ষামন্ত্রী এবং CPIM নেতা ভি শিবানকুট্টি নেতাজী সুভাষচন্দ্রের সম্পর্কিত এই ভুয়ো তথ্য প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন যে, “পাঠ্যপুস্তকের খসড়ায় কিছু ঐতিহাসিক ভুল উঠে এসেছে। বিষয়টি নজরে আসতেই দ্রুত সংশোধন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কেরল সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের এই অবস্থানের সাথে একমত নয় যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ইতিহাস বিকৃত করবে। তাই এই চরম ভুলের কারণে শাস্তিস্বরূপ SCERT বা স্টেট কাউন্সিল অফ এডুকেশন রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং-কে নির্দিষ্ট পাঠ্যপুস্তক কমিটির সদস্যদের বহিষ্কার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” তবে গোটা ঘটনার প্রতিবাদ করতে মাঠে নেমেছে ABVP।

Leave a Comment