বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: বন্ধু বলে চেঁচিয়েও ভারতের উপর জোর-জুলুম খাটাচ্ছেন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভারত যাতে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি না করে, সেজন্য বহুবার নরমে গরমে নয়া দিল্লিকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল ওয়াশিংটন ডিসি।
তবে শেষ পর্যন্ত, ধমকে কাজ না হওয়ায়, রাশিয়া থেকে তেল কেনার অপরাধে ভারতের উপর চড়া শুল্ক চাপিয়েছেন ট্রাম্প। এ কারণে অবশ্য নিজের দেশের নাগরিকদের কাছেই সমালোচিত হচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তবে তাতে তাঁর যায় আসে কি?
সম্প্রতি, ডোনাল্ড ট্রাম্পের একসময়ের সঙ্গী জন বোল্টনও আমেরিকার এমন গাজোয়ারি নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন। তাঁর দাবি ছিল, ভারতের উপর এমন আচরণের বড় মূল্য চোকাতে হবে ওয়াশিংটনকে। এবার কার্যত একই পথে হেঁটে ভারতের উপর হওয়া ট্রাম্প প্রশাসনের অমানবিক আচরণকে নিশানায় এনে সতর্ক করলেন জাতিসংঘে নিযুক্ত প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি। নিকির মতে, আমেরিকার উচিত যত দ্রুত সম্ভব ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নত করা।
আমেরিকাকে নিকির সতর্কবার্তা
শুল্কযুদ্ধের কারণে আমেরিকার সাথে ভারতের সম্পর্ক এখন কোন খাতে বইবে তা নিশ্চিত নয়। আর ঠিক সেই আবহে নিউজউইকের এক রিপোর্টে হ্যালি বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন রাশিয়ার তেল ও শুল্ক বিরোধের কারণে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে এবং বিশ্বের দুটি বৃহত্তম গণতন্ত্রের মধ্যে ফাটল ধরাতে পারে না। আমেরিকার এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য ভুলে যাওয়া উচিত।
এরপরই নিকি বলেন, চিনের মোকাবিলা করতে হলে ভারতকে প্রয়োজন আমেরিকার! ভারতের মতো একজন মিত্রকে একেবারেই হারিয়ে ফেলা উচিত হবে না। এদিন ভারতের উপর হওয়ার ট্রাম্প প্রশাসনের অমানবিক আচরণকে নিশানায় এনে জাতিসংঘে নিযুক্ত প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, এশিয়ার একমাত্র দেশ ভারত, যাদের চিনের আধিপত্য মোকাবিলা করার ক্ষমতা রয়েছে। তাই এমন কৌশলগত মিত্রর সাথে সম্পর্ক স্থগিত রাখা আগামী দিনে আমেরিকার জন্য কৌশলগত সংকটে পরিণত হতে পারে।
এদিন ভারত-আমেরিকা সম্পর্ক নিয়ে কথা বলতে গিয়ে নিকি ট্রাম্প প্রশাসনকে সতর্ক করতে গিয়ে আরও বলেন, ভারত ওয়াশিংটনের জন্য বন্ধুর চেয়েও বেশি কিছু। এরপরই যুক্তি দিয়ে হ্যালি বোঝান, অর্থনীতি ও নিরাপত্তার লক্ষ্যে ভারত অপরিহার্য। আমেরিকা এই মুহূর্তে তাদের উৎপাদন ইউনিটগুলি চিন থেকে সরিয়ে নিতে চায়। আমি মনে করি, ভারত ছাড়া ওয়াশিংটনকে এই সুযোগ আর কেউ পাইয়ে দিতে পারবে না। হ্যালির সংযোজন, চিনের পোশাক, স্মার্টফোন, সোলার প্যানেলের মতো প্রয়োজনীয় দ্রব্য তৈরির ক্ষমতা রয়েছে ভারতের।
অবশ্যই পড়ুন: বাবার স্বপ্ন পূরণ করলেন মেয়ে, কুস্তিতে বিশ্বজয়ী ১৯ বছরের তপস্যা
ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনে পুতিনকে যুদ্ধে অর্থায়ন করছে, আমেরিকার এমন মনোভাবে সমর্থন জানালেও ট্রাম্প প্রশাসনকে একেবারে কড়া সতর্কবার্তা দিয়েছেন নিকি। প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য ছিল, আমেরিকার কখনই এটা ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে, নয়া দিল্লির সাথে তাদের সম্পর্কের সাধারণ লক্ষ্য রয়েছে। চিনের মুখোমুখি হতে হলে ভারতের মতো একজন বন্ধুকে কখনই দূরে ঠেলে দিতে পারবে না আমেরিকা!
এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠকের দাবি জানিয়ে হ্যালি প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি রোনাল্ড রিগ্যানের একটি বিবৃতি উল্লেখ করেছিলেন। যেখানে বলা হয়েছিল, নয়া দিল্লি কোনও কোনও ক্ষেত্রে ভিন্ন পথে যেতে পারে, কিন্তু তাদের গন্তব্য সর্বদা একই থাকা উচিত। সব মিলিয়ে, ভারতের উপর ট্রাম্পের খামখেয়ালী মনোভাব ও অগ্রহণযোগ্য আচরণ একেবারেই মেনে নিতে পারছেন না হ্যালি। তাই তো বাঁচতে হলে ট্রাম্পকে ভারতের সাথে সম্পর্ক ঠিক করে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।