প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: চলতি বছর এপ্রিলে ২০১৬ সালের SSC নিয়োগ প্রক্রিয়াকে ‘প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি’ বলে অভিহিত করা হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। যার জেরে সুপ্রিম কোর্ট বাধ্য হয়ে গোটা প্যানেল বাতিল করে দিয়েছে। রাতারাতি চাকরি থেকে বাদ পড়েছেন প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক, অশিক্ষক কর্মী। আর তাতেই নতুন করে পরীক্ষা নিয়ে তাঁদের নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। এবার সেই নির্দেশ খানিক শিথিল করল সুপ্রিম কোর্ট। আর তাতে অনেকটাই স্বস্তি পেল ‘যোগ্য’ চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ।
সুপ্রিমকোর্টে মামলা ‘যোগ্য’ চাকরিপ্রার্থীদের
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুদিন আগে রাজ্য সরকার নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল। যেখানে বলা হয়েছিল আগামী ৭ ও ১৪ সেপ্টেম্বর পরীক্ষার দিন। তার মধ্যে নিজেদের যোগ্য হিসেবে দাবি করা শিক্ষিকাদের সুপ্রিম কোর্ট ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৫ পর্যন্ত স্কুলে পড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল পরীক্ষার্থীদের মধ্যে। সেই কারণে সেপ্টেম্বরের ৭ ও ১৪ তারিখের পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার জন্য সুপ্রিমকোর্টে আবেদন জানিয়েছিলেন ‘যোগ্য’ চাকরিপ্রার্থীরা।
পরীক্ষা নিয়ে বড় স্বস্তি!
সংবাদ প্রতিদিনের রিপোর্ট অনুযায়ী আজ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার, পরীক্ষার সংক্রান্ত ব্যাপারে ‘যোগ্য’ চাকরিপ্রার্থীদের করা মামলা ওঠে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জয় কুমার ও বিচারপতি সতীশচন্দ্র শর্মার ডিভিশন বেঞ্চে। আর সেখানেই মেলে সবুজ সংকেত। এদিন ডিভিশন বেঞ্চের তরফে জানানো হয় যে, রাজ্য সরকার যদি পরীক্ষা পিছিয়ে দিতে চায়, সেটা করতেই পারে। পরীক্ষা পিছোনো বা না–পিছোনোর বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে কমিশনের উপর নির্ভর করছে।
অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জয় কুমার ও সতীশচন্দ্র শর্মার বেঞ্চ স্কুল সার্ভিস কমিশনকে কার্যত তুলোধোনা করেছে। স্কুল সার্ভিস কমিশনের আইনজীবীর উদ্দেশে বিচারপতি বলেন, ”আপনারা যোগ্যদের বাদ দিয়ে অযোগ্যদের বাঁচাতে চাইছেন, এটা অত্যন্ত হতাশাজনক। আমরা আগেই বলেছি, কোনওভাবেই কোনও অযোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হবে না। যারা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুলে পড়াচ্ছেন যোগ্য হিসেবে, তাঁদের সবাইকে পরীক্ষার অনুমোদন দিতে হবে। ”
ফর্ম ফিলাপের ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশ
এদিন চাকরিরত শিক্ষকদের ফর্ম ফিল আপ করার জন্য সাতদিন অতিরিক্ত সময় দেওয়া হবে। এছাড়াও শীর্ষ আদালতের তরফে জানানো হয়েছে যে ফর্ম ফিল আপের ক্ষেত্রে যাঁরা ৪৫ শতাংশ নম্বরের যোগ্যতার মানদণ্ড পূরণ করছেন এবং পূর্ববর্তী প্যানেলে ছিলেন, তাঁদের সুযোগ যেন বাধ্যতামূলক করা হয়। আর এই নির্দেশে সকলের মনে প্রশ্ন উঠছে কেন এই সিদ্ধান্ত। এই রায় সামনে আসার পর থেকেই শিক্ষাজগতে তৈরি হয়েছে প্রবল কৌতূহল ও জল্পনা। জানা যাচ্ছে, NCERT-এর নয়া নিয়ম অনুযায়ী, স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে ৫০ শতাংশ নম্বর পেলে তবেই এই পরীক্ষায় বসা যাবে। আর সেই নিয়মটি সরকারের নয়া বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই সেই কারণেই ‘যোগ্য’ প্রার্থীদের আবেদন, ৫০ শতাংশ নয়, ৪৫ শতাংশ নম্বরেই পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হোক বলে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
আরও পড়ুন: মহিলা নয়, ৪ বছর ধরে লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা পাচ্ছেন পুরুষ! অবাক কাণ্ড বাদুড়িয়ায়
এদিকে সুপ্রিম কোর্টের তরফ থেকে একটি নোটিসও জারি করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে এই সংক্রান্ত সমস্ত পক্ষকে নিজেদের মতামত জানাতে হবে আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে। এমতাবস্থায় ফর্ম ফিলাপের এই নয়া নিয়মের ক্ষেত্রে আশা করা যাচ্ছে এই তালিকায় নতুন করে আরও কিছু প্রার্থী যুক্ত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় প্রযুক্তিগত ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় নতুন করে পরিবর্তন আসতে চলেছে।