প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: ২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগ মামলায় দুর্নীতির কারণে প্রায় ২৬ হাজার চাকরি প্রার্থীর চাকরি চলে যাওয়ায় চিন্তার মুখে পড়েছে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা। এমতাবস্থায় বেশ কয়েকটি স্কুলে প্রায়শই দেখা গিয়েছে ছাত্র আছে কিন্তু পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই, শিক্ষকের অভাবে মাসের পর মাস ক্লাস বন্ধ থাকছে। তবে এবার শুধু ছাত্র নয় কমে আসছে শিক্ষকের সংখ্যাও। শিক্ষার অন্ধকারে ডুবে গিয়েছে আলিপুরদুয়ারের বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠ স্কুল। তাই এর পিছনে আসল কারণ খুঁজতেই এবার ময়দানে নামল স্থানীয় নেচার ক্লাব।
ঘটনাটি কী?
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৬ বছর ধরে ছাত্রছাত্রীহীন অবস্থায় পড়ে রয়েছে আলিপুরদুয়ারের এক সরকারি বিদ্যালয়। নামেই শুধু সরকারি, কিন্তু আদতে অনেকটাই অব্যবস্থার মধ্যে পড়ে রয়েছে এই বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠ, ব্যাহত হয়েছে পঠনপাঠন ব্যবস্থা। শুধু তাই নয় পড়ুয়াদের উপস্থিতির তালিকা দেখলে দেখা যাবে যে মাত্র ৬ থেকে ৭ জনের নাম রয়েছে সেখানে। তাদেরও উপস্থিতির হার একদমই কম। নেই মিড ডে মিলের সঠিক ব্যবস্থা, যার দরুন স্কুলে যেতে চায় না অনেক পড়ুয়ারাই। দীর্ঘদিন ধরে এই অব্যবস্থার শিকার সরকারি বিদ্যালয়। এদিকে এই স্কুল থেকে প্রায় ১০০ মিটার দূরত্বে অবস্থিত একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ে উপচে পড়েছে ছাত্র ছাত্রীদের ভিড়। কিন্তু কেন এমন বৈষম্য তা জানতে এবার শিক্ষা বাঁচানোর লড়াইয়ে নামল নেচার ক্লাব।
স্কুলের পঠনপাঠন ব্যবস্থা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন
বছরের পর বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে আলিপুরদুয়ারের বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠ। কিন্তু কেন এত বছর ধরে পড়ুয়া শূন্য অবস্থায় রয়েছে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তা জানতে নেচার ক্লাবের সহ সম্পাদক অরিজিৎ মালাকার নিজে এই বিদ্যালয়ের পরিদর্শনের জন্য যান। সেখানে প্রধান শিক্ষক বাবুলাল দেবনাথ এবং সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে এই পরিত্যক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেন। সেই সূত্রেই জানা যায় এই বিদ্যালয়ে সরকারী সাহায্য খুবই কম পাওয়া যায়, শুধু তাই নয় আগে যেখানে মিড ডে মিলের ব্যবস্থা ছিল ১০০ জন শিশুর জন্য সেখানে এখন সেই ব্যবস্থাও উঠে গিয়েছে। পাশপাশি স্কুলের পঠন ব্যবস্থাও সঠিক নয়, শিক্ষকদের উপস্থিতি খুবই কম চোখে পরে।
আরও পড়ুন: টোটো চুরি করাই কাজ, কেদারনাথ যাওয়ার আগে হাওড়া স্টেশনে গ্রেফতার বিজেপি নেতা
পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক সমিতির আলিপুরদুয়ার জেলা সভাপতি এই পরিত্যক্ত সরকারি বিদ্যালয় নিয়ে বেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন যেখানে বর্তমানে রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে এক চরম অরাজকতা চলছে সেখানে এমন ধরনের ঘটনা সত্যি উদ্বেগ জনক। শীঘ্রই এই ঘটনা নিয়ে চরম সিদ্ধান্তের পথে হাঁটতে চলেছে প্রশাসন। শুধু তাই নয় তাদের বিশ্বাস আগামী শিক্ষাবর্ষেই পুনরায় প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
প্রসঙ্গত এইমুহুর্তে রাজ্যে শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠে এসেছে। অনেক জায়গায় শোনা যাচ্ছে সরকারি বিদ্যালয়গুলো বন্ধ হয়ে গিয়ে তার জায়গায় ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, যার ফলে নিম্ন মধ্যবিত্তরা এক মহা সমস্যায় পড়েছে। এবার দেখার পালা এই বিষয়ে প্রশাসন কতটা ব্যবস্থা নেয়।