সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে এনার্জি মানেই রাজনৈতিক ক্ষমতার মূল হাতিয়ার। তেল বলুন গ্যাস কিংবা ইউরেনিয়াম, সব কিছুর দাম এখন বিশ্বের অর্থনীতিকে কাঁপাচ্ছে। তবে আপনি কি জানেন, ভারতে এমন এক সম্পদের ভান্ডার লুকিয়ে রয়েছে, যা ভবিষ্যতে শক্তির সংজ্ঞাকে বদলে দিতে পারে? কী সেটি? জানতে হলে চোখ রাখুন আজকের প্রতিবেদনে।
মার্কিন পরীক্ষায় নয়া দিগন্ত
আসলে আমরা বলছি থোরিয়ামের (Thorium) কথা। সম্প্রতি মার্কিন গবেষণা কোম্পানি ক্লিন কোর থোরিয়াম এনার্জি ঘোষণা করেছে, তাঁদের তৈরি প্রথম থোরিয়াম-ভিত্তিক ফুয়েল 45 গিগাওয়াট ডে পার মেট্রিক টন ইউরেনিয়াম লেভেলে পৌঁছে গিয়েছে। আর এই সাফল্য নিউক্লিয়ার এনার্জির ইতিহাসে ইতিবাচক হিসেবেই দেখা হচ্ছে। সবথেকে বড় ব্যাপার এই অগ্রগতির খবর ভারতের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ রিপোর্ট বলছে, ভারতের কাছে বিশ্বের মধ্যে সবথেকে বেশি থোরিয়ামের ভান্ডার মজুদ রয়েছে।
এদিকে এই খবর প্রকাশ্যে আসার পরেই ভারতীয় পরমাণু বিজ্ঞানী এবং প্রাক্তন অ্যাটমিক এনার্জি কমিশনের চেয়ারম্যান অনিল কাকোদকার তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, 45 GWd/MTU পর্যায়ে পৌঁছনো মানেই থোরিয়াম ফুয়েল দিয়ে ছোট আকারের মডিউলার রিঅ্যাক্টর গড়ে তোলার স্বপ্ন এখন বাস্তবায়নের পথে। শুধুমাত্র কিছুদিনের অপেক্ষা..!
This is one the best interviews to date 💪🏽 @anil_kakodkar sat down with @ThePrintIndia to discuss the ANEEL fuel, India’s nuclear & thorium needs, and more. pic.twitter.com/FfT78lN4lC
— Clean Core Thorium Energy (@cleancoreenergy) August 24, 2025
ভারতের মূল লক্ষ্য কী?
এদিকে কেন্দ্র সরকারি ইতিমধ্যেই ঘোষণা করে ফেলেছে যে, 2047 সালের মধ্যে অন্তত 100 গিগাওয়াট নিউক্লিয়ার পাওয়ার উৎপাদন করা হবে। এমনকি সেই পথেই এগোনো হচ্ছে। তবে এর সবথেকে বড় বাঁধা হল ইউরেনিয়ামের সীমিত যোগান। বর্তমানে ভারতকে ইউরেনিয়াম আমদানি করতে হয়, যা যথেষ্ট ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ। অথচ থোরিয়াম মজুদের দিক থেকে ভারত শীর্ষস্থানে।
থোরিয়াম আসলে কী?
জানিয়ে রাখি, থোরিয়াম হল একটি প্রাকৃতিক রেডিওঅ্যাকটিভ ধাতু। 1828 সালে জন্স জ্যাকব বেরজেলিয়াস এই ধাতুটি আবিষ্কার করেন। আর এর নামকরণ করা হয়েছে পুরাণের বজ্রদেবতা থরের নাম করেই। প্রধানত মোনাজাইট বালিতে এই বিরল ধাতু পাওয়া যায়, যা ভারতের উপকূল অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে মজুদ রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা।
বলে দিই, থোরিয়াম সরাসরি বিক্রিয়া ঘটাতে না পারলেও এটি রিয়াক্টরে গিয়ে ইউরেনিয়াম 233-এ রূপান্তরিত হতে পারে। এর ফলে কম রেডিওঅ্যাকটিভ বর্জ্য উৎপন্ন হয়। পাশাপাশি পরিবেশ দূষিত হয় না, আর খনন তুলনামূলকভাবে সস্তা। এমনকি উড়িষ্যার ভুবনেশ্বরের ভাষা অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টার ইতিমধ্যেই ক্ষুদ্র রিয়াক্টর ডিজাইন তৈরি করে ফেলেছে, যা মাত্র 200 গ্রাম থোরিয়াম ব্যবহার করেই টানা 14 বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম।
🚨 INDIA’S NUCLEAR LEAP 🚨
India’s BARC scientists just cracked the code of the future 🔥
👉 A small nuclear reactor that can power an ENTIRE DISTRICT for 14 YEARS using just 200 grams of Thorium.
That’s game-changing.
Cheap. Clean. Scalable. Sustainable.Thorium = India’s… pic.twitter.com/YmHod0oa39
— INDIAN (@hindus47) August 21, 2025
থেকে যাচ্ছে কিছু চ্যালেঞ্জ
তবে প্রযুক্তির আবার চ্যালেঞ্জ থাকবে না, এ কখনো হতে পারে নাকি! সেই সূত্রে থোরিয়ামের সম্ভাবনা ভারতে বিপুল হলেও এর বাণিজ্যিক ব্যবহার অতটাও সহজ নয়। কারণ এটি ব্যবহারের জন্য প্রচুর গবেষণা ও উপযুক্ত উন্নয়ন প্রয়োজন। আর শুধুমাত্র থোরিয়াম দিয়েও রিয়াক্টর চালানো যাবে না। এমনকি আন্তর্জাতিক স্তরে এখনও পর্যন্ত ইউরেনিয়াম নির্ভরশক্তি ব্যবস্থা প্রভাব বিস্তার করে রয়েছে। তাই থোরিয়াম সেরকম জায়গা করতে পারবে না বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ ২ লক্ষ টাকা রাখলেই মিলছে মোটা রিটার্ন, সেরা সুযোগ দিচ্ছে PNB
বিশ্বে কার কাছে কতটা থোরিয়াম রয়েছে?
রিপোর্ট অনুযায়ী জানা যাচ্ছে, ভারতের কাছেই বর্তমানে সবথেকে বেশি পরিমাণে থোরিয়াম মজুদ রয়েছে, বিশেষ করে উপকূল অঞ্চলে। এরপর ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকার মতো দেশে যথেষ্ট মজুদ থাকলেও ভারতের তুলনায় অনেকটাই কম। আর চীন ও পাকিস্তানের মতো দেশে খুব সামান্য পরিমাণে থোরিয়াম রয়েছে। তাই ভারতের সামনে যে প্রবল সম্ভাবনা থাকছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এখন শুধু সঠিক প্রযুক্তি ব্যবহারের পালা…!