আজ গণেশ চতুর্থী। বিঘ্নহর্তা গণেশের আরাধনায় মেতে উঠবে সারা দেশ। দেশবাসীর মুখে মুখে উচ্চারিত হবে একটাই রব, “গণপতি বাপ্পা মোরিয়া”। তবে, একথা অনস্বীকার্য যে আমাদের দেশে গণপতি বাপ্পার আরাধনা সবথেকে বেশি দেখা যায় মুম্বইতে। বলা যায়, পশ্চিমবঙ্গে যতটা আড়ম্বরের সাথে রাস্তার অলিতে গলিতে মা দুর্গার আরাধনা করা হয়, তেমনটাই মুম্বইয়ের অলিতে গলিতে ঘটা করে আরাধনা করা হয় গণপতি বাপ্পার। আর আজ আমরা মুম্বইয়ের এমনই একটি গণেশ পূজা নিয়ে আলোচনা করবো, যারা এই বছর নিজেদের মূর্তির কারণে সারা দেশে আলোড়ন তুলেছেন, শুধু তাই নয় গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডেও নাম রয়েছে তাঁদের।
লালবাগের রাজা তেজুকায়াচের পুজো
হ্যাঁ, আমরা কথা বলছি, মুম্বইয়ের লালবাগের গলিতে, রাজা তেজুকায়াচের পুজো (Raja Tejukayacha) সম্পর্কে। যেখানে শহরের অন্যতম প্রশংসিত মূর্তিটই ইতিমধ্যেই রাজকীয় যোদ্ধা অবতারে ভক্তি ও স্থায়িত্বের এক অতুলনীয় প্রতীক হিসাবে নিজের ভঙ্গিতে মূর্তমান।
এই বছর রাজা তেজুকায়াচের পুজোর মূর্তি তৈরি করেছেন প্রবীণ শিল্পী ভাস্কর রাজন জাড। পরিবারের চতুর্থ প্রজন্মের ভাস্কর, রাজন জানিয়েছেন, “এই বছরের গণেশ মূর্তিটি ২২ ফুট লম্বা, এবং এটি কাগজ এবং সম্পূর্ণরূপে অন্যান্য পরিবেশ-বান্ধব উপকরণ দিয়ে তৈরি। এবারের এই বিশাল মূর্তি ভক্তি ও শ্রদ্ধার পাশাপাশি পরিবেশগত দায়িত্ব সম্পর্কে একটি শক্তিশালী বার্তা প্রদান করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।“
তবে এই প্রথম নয়, রাজা তেজুকায়াচা গত কয়ে বছর ধরেই ধারাবাহিকভাবে পরিবেশ-সচেতন দৃষ্টিভঙ্গির প্রচার করে আসছে। ২০১৯ সাল থেকে, এই পূজা কমিটি কাগজ, আঠা, গুঁড়ো এবং নারকেলের খোসা ব্যবহার করে অর্থাৎ সম্পূর্ণরূপে প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে প্রতিমা তৈরি করে আসছে। রঙ করার সময়ও ব্যবহার করা হয় সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক বিভিন্ন উপাদান, যা এটিকে সম্পূর্ণরূপে পরিবেশ-বান্ধব করে তোলে।
২০১৯ সালে, প্রথমবারের মতো রাজা তেজুকায়াচা বিশ্বের বৃহত্তম পরিবেশবান্ধব গণপতি হিসেবে সারা বিশ্বে স্বীকৃতি পায়। বিশ্বের বৃহত্তম পরিবেশ-বান্ধব গণেশ মূর্তি হিসেবে স্থান করে নেয় গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে। আর তখন থেকেই রাজন এবং তার ছেলে বিধীশ, একের পর এক উপায়ে অতিক্রম করে চলেছেন সৃজনশীলতার সমস্ত সীমানা। এমনকি পরিবেশ-বান্ধব মূর্তির প্রচেষ্টাকে আরও সফল করার জন্য, শুকনো ব্যবহৃত ফুল দিয়ে প্রতিমা তৈরি নিয়েও নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।
রাজা তেজুকায়াচার গণেশ আরাধনা দীর্ঘ দিন ধরেই মুম্বাইয়ে আড়ম্বরের সাথে পালিত হয়। ১৯৬৭ সালে তেজুকায়া সার্বজনীন গণেশোৎসব মণ্ডল প্রতিষ্ঠিত হয়। আর এই মণ্ডল ১৯৭০ সাল থেকে নিজেদের গণেশ পুজোর যাত্রা শুরু করেন। সেই সময়ে রাজন জাডের বাবা, বিট্টল জাড প্রথম ১৪ ফুট লম্বা রাজা তেজুকায়াচের মূর্তিটি তৈরি করেছিলেন। পরিবেশ-বান্ধব হওয়ার জন্য প্রথম দিকে এই পূজার ক্ষেত্রে তুলা ব্যবহার করা হত, এবং পরবর্তীতে কাগজের মতো উপকরণ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়। সময়ের সাথে তেজুকায়া সার্বজনীন গণেশোৎসব মণ্ডল নিজেদের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে।
এই পুজার বিসর্জনের সময়, পরিবেশের কোন ক্ষতি হয়না। কারণ যেহেতু কাগজের মূর্তি তাই সহজেই জলে এটি মিশে যায়। তাই, গণপতি বাপ্পার আরাধনা প্রতি বছর শুধু সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি আনে না, বরং সবাইকে নতুন করে, নতুন ভাবে ভাবতে শেখায়, বাঁচতে শেখায়, বাঁচার তাগিদ দেয়।