প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: চলতি মাসেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানিয়েছিলেন যে, ভারতীয় রফতানিতে মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। আর সেই নির্দেশিকা আজ থেকেই চালু হতে চলেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করেছে যে নতুন শুল্ক কার্যকর হবে ২৭ আগস্ট, ২০২৫, ভারতীয় সময় সকাল ৯টা ৩১ মিনিটে। যার ফলে এই সিদ্ধান্তে নতুন করে চাপ তৈরি হয়েছে আমেরিকা-ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্কে। এমতাবস্থায় ট্রাম্পের সঙ্গে নাকি কথা বলতে নারাজ মোদী। জানা যায় গত এক সপ্তাহে নরেন্দ্র মোদীকে ৪ বার ফোন করেছিলেন ডেনাল্ড ট্রাম্প, কিন্তু কোনো জবাব মেলেনি প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে। এই বিস্ফোরক দাবি করেছে জার্মান সংবাদপত্র।
প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক
গত ২৫ বছরে ভারত-আমেরিকার যে সুমধুর সম্পর্ক ছিল তা বর্তমানে একদমই তলানিতে ঠেকেছে। যার অন্যতম কারণ হল চড়া শুল্ক আরোপ। ব্রাজিলের পর ভারতই একমাত্র দেশ যার উপরে আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে আমেরিকা। যদিও নয়াদিল্লির উপর শুল্ক কোপের কথা আগেই ঘোষণা করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আসলে রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কেনার জন্য ভারতকে এই আর্থিক চাপ দিতে চেয়েছে আমেরিকা। ইতিমধ্যে আমেরিকার সরকারি ওয়েবসাইটে সেই প্রকাশ্যে এসেছে। আজ অর্থাৎ বুধবার, ২৭ আগস্ট থেকেই শুল্কচাপ বাড়তে চলেছে বলে জানা গিয়েছে। আর এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতেই আজ এনিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক চলছে। সেখানে উপস্থিত রয়েছেন অমিত শাহ-সহ কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীরা।
ট্রাম্পের ফোন ধরেনি মোদী
রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কেনার পরিণতি যে আমেরিকা এইভাবে ভারতের উপর চাপাবে, তা একদমই আশা করেনি। এদিকে অর্থনীতিবিদদের একাংশ মনে করছে এই কড়া শুল্ক চাপানোর ফলে ভারতের রফতানি প্রায় ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। যার দরুন ক্ষতি হতে পারে ৯০ বিলিয়ন ডলার। মাথায় চিন্তার চাপ যেন বেড়েই চলেছে কেন্দ্রের, এমতাবস্থায় মোদীর বিরুদ্ধে উঠে এক আরও এক অভিযোগ। জানা গিয়েছে, গত এক সপ্তাহে নাকি নরেন্দ্র মোদীকে ৪ বার ফোন করেছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, কিন্তু তাঁর সঙ্গে নাকি কথাই বলেননি মোদী। এমনটাই দাবি করেছে জার্মান সংবাদপত্র ‘ফ্রাঙ্কফুর্টার অলজেমাইন’-এ। আর এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই ভারত এবং আমেরিকার মধ্যস্থতা নিয়ে উঠছে একাধিক প্রশ্ন।
Trump tried four times in recent weeks to reach Indian Prime Minister Narendra Modi by phone, but Modi has refused to take the calls.
This was reported by Frankfurter Allgemeine Zeitung.
According to the article, Modi is said to be “offended” after Trump called India’s economy… pic.twitter.com/i5Uc8S31g6
— Visegrád 24 (@visegrad24) August 26, 2025
বিস্ফোরক দাবি জার্মানির সংবাদপত্রে
‘ফ্রাঙ্কফুর্টার অলজেমাইন’-এর সংবাদপত্র দাবি করেছে যে, কিছুদিন আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের অর্থনীতিকে ‘মৃত’ বলে তোপ দেগেছিলেন। যেটা স্বাভাবিকভাবেই নরেন্দ্র মোদি তা ভালো চোখে দেখেননি। তাই গত ১০ আগস্ট তিনি ট্রাম্পের এহেন মন্তব্যের সমালোচনা করেন এবং জানান, ভারত বিশ্বের শীর্ষ তিনটি অর্থনৈতিক দেশের মধ্যে একটি হয়ে ওঠার দিকে ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে। এখানেই শেষ নয়, ওই প্রতিবেদনটিতে আরও দাবি করেছে যে, ট্রাম্প চাইছেন বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলি আমেরিকার উপর নির্ভরশীল হোক। কিন্তু মোদি তাতে রাজি হননি। তাই তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ভারত জাতীয় স্বার্থকেই প্রাধান্য দেবে। এদিকে ট্রাম্পও তাঁর সিদ্ধান্তে অনড়, তাঁর স্পষ্ট দাবি দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যচুক্তি সম্ভব নয়। তাই ভারতের উপর ৫০ শতাংশের শুল্কের বোঝা চাপানো।
আরও পড়ুন: হবে ২.২ লক্ষ চাকরি, পুজোর মরসুমে বিরাট নিয়োগের ঘোষণা করল Flipkart
ক্ষুব্ধ নরেন্দ্র মোদী
প্রসঙ্গত, আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি না হওয়ায় প্রথম দফায় ভারতের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানোর হয়েছিল। পরে আবার রাশিয়ার থেকে তেল কেনার জন্য ভারতের উপর আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। যেটা নিয়ে বেশ ক্ষুব্ধ কেন্দ্রীয় সরকার। স্পষ্টভাবে নয়াদিল্লিও জানিয়ে দিয়েছে, রাষ্ট্রের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে যেখানে কম দামে তেল পাওয়া যাবে সেখান থেকেই তেল কিনবে ভারত।
গত সোমবার আমেদাবাদের এক জনসভা থেকে নরেন্দ্র মোদীর স্পষ্ট দাবি “যতই চাপ আসুক না কেন, আমরা তা মোকাবেলা করার জন্য আমাদের শক্তি বৃদ্ধি করে যাব। দেশ শক্তিশালী হয়েছে। এখন গোটা বিশ্বে অর্থনৈতিক স্বার্থপরতার উপর ভিত্তি করে নীতি গঠন হচ্ছে। তাই সেক্ষেত্রে শুল্ক নিয়ে ওয়াশিংটনের চাপ সহ্য করব না। মাথা নত করব না। আমাদের সরকার ঠিক রাস্তা খুঁজে বের করবে।”