প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: প্রেমের সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত আর মেনে নিতে পারেনি প্রেমিকা, বেরিয়ে আসতে চাইছিল তাই সম্পর্ক থেকে, কিন্তু তার পরিণতি হল মৃত্যু। গত সোমবার, ২৫ আগস্ট ভর দুপুরে কৃষ্ণনগরে প্রেমিকা ঈশিতা মল্লিকের বাড়ি ঢুকে পয়েন্ট ব্ল্যাক রেঞ্জ থেকে গুলি (Krishnanagar Murder Case) করে NDRF জওয়ানের ছেলে প্রেমিক দেশরাজ সিং। ঘটনাটি ঘটেছে কৃষ্ণনগরের মানিকপাড়া এলাকায়। খুনের পর এখনও বেপত্তা দেশরাজ। এমতাবস্থায় প্রকাশ্যে এসেছে প্রেমিকার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট। আর তাতেই উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
রাগের বশে ঘরে ঢুকে খুন প্রেমিকের
পুলিশের প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে জানা গিয়েছে, প্রেমঘটিত কারণে ঘরে ঢুকে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে প্রেমিক এই গোটা ঘটনাটি ঘটিয়েছে। নিহত তরুণীর নাম ঈশিতা মল্লিক। তাঁর সঙ্গে দেশরাজ সিং নামে এক যুবকের সম্পর্ক ছিল। সম্প্রতি তরুণী সেই সম্পর্ক ছেড়ে বেরিয়ে আসতে চাইছিলেন। আর সেই রাগের বশে ঘরে ঢুকে তরুণীকে গুলি করে খুন করা হয়েছে বলে প্রাথমিক অনুমান পুলিশের। তদন্তে কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার কে অমরনাথ জানিয়েছেন যে, মেয়েটির শরীরে দু’টি গুলির আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাই দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হচ্ছে। অবশেষে সেই রিপোর্ট প্রকাশ্যে এল।
পরিকল্পনা মাফিক খুন করেছে দেবরাজ
মৃত ছাত্রী ঈশিতা মল্লিকের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট সূত্রে জানা গিয়েছে যে, তাঁর মাথায় মোট তিনটি গুলি করা হয়, মাথার ডান দিকে দুটি গুলির আঘাত রয়েছে এবং পিছন থেকে একটি গুলি করেছে প্রেমিক দেশরাজ। তবে সেই পরিকল্পনা বেশ কয়েকদিন ধরেই করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। খুনের পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী পরিকল্পনা প্রেমিকের কাছে তৈরি ছিল। আর তার প্রমাণ মিলেছে খোদ অভিযুক্ত দেবরাজ সিং এর বাবার একটি বক্তব্যে থেকে। দেবরাজ সিং আদপে উত্তরপ্রদেশের গোরখপুরের বাসিন্দা। তার বাবা NDRF-এর কর্মী আর তাই কাজের সূত্রে উত্তর ২৪ পরগনার বীজপুরে আসতে হয়েছিল। সেখানেই বিগত পাঁচ-ছয় বছর ধরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকছে দেবরাজের পরিবার।
কাটা হয়েছিল উত্তরপ্রদেশ যাওয়ার টিকিট!
কৃষ্ণনগরের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দেবরাজের বাবার দাবি ছিল, কদিন আগে তাঁর ছেলে উত্তর প্রদেশে যাওয়ার কথা বলেছিল। সেই অনুযায়ী তিনি ২৪ আগস্ট বিকেল ৩টের সময় পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেসের ট্রেনের টিকিট কেটে দেন। ওইদিন দেশরাজ তাঁকে ফোন করে জানায় যে সে ট্রেনে উঠে গিয়েছে। পরদিন সকাল সাড়ে চারটে নাগাদ ছেলেকে ফোন করেন কিন্তু তারপর থেকে ফোনে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। অথচ তার পরেরদিন অর্থাৎ ২৫ আগস্ট সে কৃষ্ণনগরে গিয়ে প্রেমিকা ঈশিতা মল্লিককে বাড়ি ঢুকে খুন করে আসেন। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে সবটাই পরিকল্পনা করা হয়েছিল। দেবরাজ এও ভালো ভাবে জানত যে ঈশিতা কখন বাড়ি থাকে, আর কখন বাড়ি থাকে না। গোটা ঘটনায় পুলিশকে ঘোল খাওয়াতে রীতিমতো পাকা অপরাধীদের মতো চাল চেলেছে দেশরাজ।
আরও পড়ুন: বকেয়া সাড়ে তিন লক্ষ! বনগাঁর বিজেপি বিধায়কের বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করল দপ্তর
খতিয়ে দেখা হচ্ছে সিসিটিভি ফুটেজ
এদিকে সোমবার খুনের পর থেকে দেশরাজ সিং এর খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। তার কাচরাপাড়ার বাড়িতেও তল্লাশি চালানো হয়েছে। যদিও এখনও তার নাগাল পাওয়া যায়নি। ইতিমধ্যেই ময়না তদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসতেই ঈশিতার মরদেহ সন্ধ্যের আগে গতকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার কৃষ্ণনগর জিলা হসপিটাল থেকে বেরিয়ে কৃষ্ণনগর মানিকপাড়ায় পৌঁছায়। মেয়েটিকে শেষ দেখার জন্য প্রচুর মানুষের ভিড় জমে। ঘটনার দ্রুত অগ্রগতির জন্য তৎপর পুলিশ প্রশাসন। খতিয়ে দেখা হচ্ছে এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ।