প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট রাতে টানা ৩৬ ঘণ্টা ডিউটির পর, বিশ্রামের জন্য গভীর রাতে ঢুকেছিলেন চতুর্থ তলার সেমিনার হলে। পরেরদিন অর্থাৎ ৯ আগস্ট সকালে সেই সেমিনার হল থেকেই উদ্ধার হয় তাঁর মৃতদেহ। এদিকে ক্যালেন্ডারের পাতায় পেরিয়ে গিয়েছে গোটা একটা বছর। এদিকে মূল অভিযুক্ত সঞ্জয় রায় ছাড়া বাকিরা এখনও অধরা। তাই মেয়ের এই ভয়ংকর মৃত্যুর বিচারের দাবিতে আজ নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছেন বাবা-মা। কিন্তু সেই অভিযান রদ করতে যেন উঠে পরে লেগেছে তৃণমূল কংগ্রেস সহ পুলিশ প্রশাসন। কিন্তু শত বাঁধা থাকলেও এই আন্দোলন যে হবেই তারই দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করলেন অভয়ার বাবা মা।
কী বলছেন অভয়ার বাবা?
আনন্দবাজারের রিপোর্ট অনুযায়ী, নবান্ন অভিযান প্রসঙ্গে অভয়ার বাবা প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছেন যে , “তৃণমূল বলছে অভয়া নাকি বিচার পেয়ে গেছে, তাহলে কেন আন্দোলন করছি আমরা। তাঁদের উদ্দেশে একটাই কথা বলি সন্দীপ ঘোষ এবং অভিজিৎ মণ্ডল গ্রেফতার হলেও ছাড়া পেয়ে গিয়েছে। এরাও কিন্তু অপরাধী। আমার মেয়ে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির শিকার। এখানে কলেজ কর্তৃপক্ষ, স্বাস্থ্য দফতর, স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী সকলে দায়ী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত বছর ৯ অগাস্ট ঝাড়গ্রাম থেকে বিনীত গোয়েলের সঙ্গে কথা বলে কভার আপ করার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। আর তারই প্রতিবাদে এই নবান্ন অভিযান।” নির্যাতিতার বাবা আরও জানিয়েছেন যে, “এক বছর হয়ে গেল, তবু সুবিচার নেই। CBI উত্তর দিতে পারেনি, প্রশাসনও সহযোগিতা করেনি। এদিকে এখন পতাকাবিহীন নবান্ন অভিযানকে ভয় পাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী, তাই পুলিশি বাধা তৈরি হচ্ছে।”
অভিযান নিয়ে তীব্র হুঁশিয়ারি অভয়ার মায়ের
শাসকদলের অনেকাংশ এই নবান্ন অভিযানকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আন্দোলন হিসেবে কটাক্ষ করেছে, আর এই অভিযোগকে স্পষ্ট ভাষায় উড়িয়ে পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন নির্যাতিতার মা। তিনি বলেন, “যতই ব্যারিকেড দিক, আমরা নবান্ন পৌঁছবই। আসলে মুখ্যমন্ত্রী ভয় পেয়েছেন তাই নবান্ন অভিযানের জন্য ব্যারিকেড দিয়েছে। CBI অপদার্থ। শুধু এটা নয়, সারদা-নারদা থেকে শুরু করলেই বুঝতে পারবেন। তদন্তের নামে সার্কাস দেখাচ্ছে সিবিআই। আদালতে প্রতিদিন ভর্ৎসিত হচ্ছে সিবিআই। তথ্যপ্রমাণ লোপাট করে দিয়েছে কলকাতা পুলিশ।” তাঁর অঙ্গীকার, মেয়ের নাম যেন ভুলে না যায়, তার জন্য লড়াই চালিয়ে যাবেন। এই আন্দোলন প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী হুঁশিয়ারি দিয়েছে, “নবান্ন অভিযানে কারও গায়ে পুলিশ হাত তুললে, গোটা রাজ্য ৭২ ঘণ্টা স্তব্ধ হবে।”
আরও পড়ুন: বিরাট জালিয়াতি! মাসের পর মাস সামগ্রী নিচ্ছে ভূত, বাতিল আড়াই লাখ রেশন কার্ড
উল্লেখ্য, নবান্ন অভিযানের ক্ষেত্রে হাইকোর্টের নির্দেশের প্রেক্ষিতে পুলিশ প্রশাসনের তরফে বিকল্প জায়গায় কর্মসূচির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, আর তাতেই সুর চড়িয়েছেন অভয়ার মা বাবা। তাই পুলিশের স্পষ্ট দাবি, নবান্ন অভিযানের জন্য কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি। তবে ইতিমধ্যেই কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও একাধিক ব্যারিকেড বসানো হয়েছে নবান্নের আশপাশে। এবার দেখার পালা আজকের এই নবান্ন অভিযান কতটা হিংস্র এবং ভয়ংকর হয়ে ওঠে পুলিশ প্রশাসনের কাছে।