India Hood Decode: বাবরি মসজিদের পেছনে হুমায়ুন কবীরের আসল গেম প্ল্যান!

Humayun Kabir
Humayun Kabir

হুমায়ুন কবীর (Humayun Kabir) – গত কয়েকদিনে এই নামটা নিশ্চই আপনি বহুবার শুনেছেন। কারণ একটাই – তার বিতর্কিত মন্তব্য। কখনও তিনি বলেছেন, হিন্দুদের ভাগীরথী নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার কথা। আবার কখনও বলছেন, পশ্চিমবঙ্গে বাবরি মসজিদ গড়ার কথা।

কখনও নির্দল, কখনও কংগ্রেস, কখনও বা বিজেপি, আবার কখনও তৃণমূলের হয়ে লড়েছেন তিনি। গত ১৪ বছরে বহুবার তিনি বদলেছেন রঙ। তার রাজনীতিতে সঙ্গ দিয়েছে কেবল বিতর্ক, বহুবার পেয়েছেন একের পর এক  শো-কজ নোটিশ। তবুও থামেননি। তাই এবার ফের তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড হলেন তিনি।

সত্যি কি বাবরি মসজিদ, নাকি অন্য কোন চক্রান্ত? ঠিক কী কারণে সাসপেন্ড হলেন তিনি? কেন বাবরি মসজিদ বানানোর জন্য এত তোড়জোড়? পাত্তা দিলেন না তৃণমূল সুপ্রিমোকেও? কী উদ্দেশ্য রয়েছে এর পিছনে? নাকি তৃণমূলের সাথেই রয়েছে কোনও গটআপ প্ল্যান? আজ India Hood  ডিকোডে এক এক করে তুলে ধরবো সমস্ত তথ্য।

কংগ্রেসের বিধায়ক হয়ে শুরু হয় রাজনৈতিক ক্যারিয়ার

সালটা ২০১১। রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস নিজেদের সরকার গঠন করলেও, তখন মুর্শিদাবাদে চলত একছত্র কংগ্রেস, বলা ভালো অধীর রঞ্জন চৌধুরীর দাপট। আর তাঁর অধীনেই মুর্শিদাবাদের রেজিনাগর বিধানসভায় কংগ্রেসের হয়ে নির্বাচন জেতেন শেখ হুমায়ুন কবীর।

হঠাৎ করেই কংগ্রেস ছেড়ে যোগ দেন তৃনমূলে

এরপর সালটা ২০১২। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই পাল্টে গেল খেলা। নভেম্বর মাসে হঠাৎ করেই কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিলেন হুমায়ুন কবীর। দলে নিয়েই তাঁকে প্রাণীসম্পদ বিকাশ দফতরের প্রতিমন্ত্রীর পদ দিয়ে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লক্ষ্য ছিল, মুর্শিদাবাদের কংগ্রেস নেতা এবং তার প্রাক্তন পরামর্শদাতা অধীর চৌধুরীর ঘাঁটি নষ্ট করা।

কিন্তু, নিয়ম অনুযায়ী, কোনও দলের হয়ে বিধানসভায় নির্বাচিত হওয়ার পর, সেই দল ত্যাগ করলে খারিজ হয়ে যায় বিধায়ক পদও। ফলত, দল বদলে মন্ত্রী হলে, ৬ মাসের মধ্যে ফের কোনও নির্বাচন কিংবা উপনির্বাচনে জিততে হবে, অন্যথায় পদত্যাগ করতে হবে।

তাই, ২০১৩ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি, তৃনমূলের হয়ে একটি উপনির্বাচনে লড়েন হুমায়ুন, কিন্তু হেরে যান। ফলত নিয়ম মেনে, ৬ মাস শেষ হওয়ার আগেই ২০১৩ সালের ১৮ই মে মন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেন হুমায়ুন কবীর। তবে তিনি জানান, তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে দলের একনিষ্ঠ কর্মী হয়েই কাজ করবেন। এরপর মন্ত্রিত্ব থেকে সরতেই মমতার নির্দেশে তাঁকে বহাল করা হয় মুর্শিদাবাদের কার্যকরী জেলা সভাপতি হিসেবে।

এরপর সালটা ২০১৪। সময়টা ছিল লোকসভা নির্বাচনের। আর নির্বাচনে লড়ার জন্য তৃণমূল নিজেদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে। কিন্তু, দেখা যায়, একসময়ে মুর্শিদাবাদে অধীর ঘাঁটি ধ্বংস করার জন্য যে হুমায়ুনের ওপর বাজি ধরেছিলেন মমতা, এবার সেই বিশ্বাস তিনি হারিয়েছেন। কারণ, মুর্শিদাবাদের তিনটি লোকসভা কেন্দ্রের কোনওটিতেই দল তাঁকে টিকিট দেয় না। যা নিয়ে কিছুটা হলেও অভিমান করেন হুমায়ুন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “যে কংগ্রেসের খাসতালুকে তৃণমূলকে বিকল্প শক্তি হিসেবে চিনিয়েছি, সেখানেও শাসক দল যোগ্য না মনে করলে সে দলে থেকেই বা লাভ কী! তৃণমূলে প্রাপ্য সম্মান না পেলে এ বার রাজনৈতিক সন্ন্যাস নেব।”

এরপর ওই বছরের জুলাই মাসে মুর্শিদাবাদের জেলা কমিটি থেকেও নাম বাদ যায় হুমায়ুনের।

যার পর ধৈর্যের বাঁধ ভাঙতে শুরু করে হুমায়ুনের। শুরু করেন নিজের বিতর্কিত মন্তব্যের ধারা। প্রার্থী হতে না পেরে শুরু করেন নিজের দলের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সমালোচনা।

এরপর সালটা ২০১৫। দলবিরোধী কাজের অভিযোগে প্রাক্তন মন্ত্রী তথা তৃণমূলের মুর্শিদাবাদ জেলার কার্যকরী সভাপতি হুমায়ুন কবীরকে শো-কজ করা হয়। দলের তৎকালীন মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, নেতৃত্বের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সমালোচনা এবং কয়েকটি ক্ষেত্রে ‘অপমানজনক’ মন্তব্য করার অভিযোগেই তাঁর বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ নিয়েছে দল।

অন্যদিকে চুপ থাকেন না হুমায়ুনও। এবার সরাসরি আক্রমণ করেন মমতা বন্দ্যয়াধ্যায়কে! বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সাধ হয়েছে, ভাইপোকে রাজা বানাবেন। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ তাঁর সেই সাধ পূর্ণ করবেন না। এই মুখ্যমন্ত্রীর পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন, তা উনি নির্ধারণ করতে পারেন না। নির্ধারণ করবেন জনগণ। ভাইপোকে রাজা বানানোর আশা পূরণ হবে না।”

এরপর দিনটা ২০১৫ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি। দল থেকে বের করে দেওয়া হয় হুমায়ুন কবীরকে। আর এই বহিস্কারের নির্দেশিকা ৬ বছরের জন্য বহাল থাকবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়।

দলছুট হয়ে পড়েন হুমায়ুন!

ফলত, পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে কিছুটা ধিমিয়ে পড়ে হুমায়ুনের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার। কিন্তু, থেমে যায় না। ২০১৬ সালে রাজ্যে যখন বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। হুমায়ুন, রেজিনগর কেন্দ্র থেকেই নির্দল প্রার্থী হিসেবে টেবিল চিহ্নে ভোটে লড়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু, তিনি হেরে যান।

ফের ফিরে আসেন অধীরের ছত্রছায়ায়!

এরপর ২০১৭ সালে তাঁকে ফের দলে টেনে নেন, সেই অধীর রঞ্জন চৌধুরী। যার হাত ধরে শুরু করেছিলেন নিজের রাজনৈতিক যাত্রা, যার টিকিটে তিনি জিতেছিলেন নিজের প্রথম বিধানসভা আসন। দলে ফেরার পর অধীরের ছায়াসঙ্গী হয়েই ঘুরতে থাকেন হুমায়ুন। অধীরও তাঁকে নিয়ে সমস্ত সভায় যাওয়া শুরু করেন।

ফের নেন দলবদলের সিদ্ধান্ত!

কিন্তু, বছর ঘুরতেই ফের হঠাৎ করেই কংগ্রেস ত্যাগ করেন হুমায়ুন। আর ২০১৮ সালে ফের নেন দলবদলের সিদ্ধান্ত। আর এবার দিলিপ ঘোষের হাত ধরে ২৬শে জুন, দিল্লিতে গিয়ে বিজেপি-তে যোগ দেন তিনি।

এরপর সালটা ২০১৯। সারা দেশের মতো পশ্চিমবঙ্গেও শুরু হয় লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি। আর মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপি প্রার্থী করে হুমায়ুন কবীরকে। প্রার্থী হয়ে নানানভাবে হাত পা ছুঁড়লেও, ব্যালট বাক্সে মুখ থুবড়ে পড়ে হুমায়ুন কবীর। তৃণমূল-কংগ্রেস উভয়ের কাছে হেরে তৃতীয় স্থান লাভ করেন তিনি।

কিন্তু, ততদিনে দল পাল্টানো যেন নেশায় পরিণত হয়েছে হুমায়ুনের। বিজেপির টিকিটে হারার পরেই, ধীরে ধীরে দলের সাথে যেন তিক্ত হতে থাকে সম্পর্ক। আর ওই বছরের শেষেই বিজেপির নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে বিজেপি ছাড়েন তিনি।

অধীরের মতো এবার ফের হাত ধরলেন মমতা!

এরপর সালটা ২০২০। বিজেপি ছেড়ে বছরও ঘোরেনি। ৭ই আগস্ট নিজের পুরনো দল তৃনমূলে যোগ দেন হুমায়ুন। বলেন, ‘‘তৃণমূল ছেড়ে ভুল করেছিলাম। পুরনো দলেই ফিরছি। যত দিন রাজনীতি করবো, দিদিই আমার নেত্রী। তাঁর কথা মতোই কাজ করবো।’’

তবে, এবার যেন দলে ফিরলেও সেই আগের প্রতিপত্তি ছিল না হুমায়ুনের! কারণ দল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগদান, তারপর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী হওয়া, আবার ঘুরেফিরে তৃনমূলে ফিরে আসা যেন রেজিনগর এবং শক্তিপুরের তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ ভালোভাবে মেনে নিতে পারছিলেন না। যার ফলে বিভিন্ন ভাবে তাঁকে অবহেলা করা হয়, চলতে থাকে কটাক্ষের তীর, এমনকি তাঁকে আহ্বান জানানো হয় না বিভিন্ন কর্মী সভায়। এছাড়া, কখনও লেগে থাকতো স্থানীয় বিধায়কের সঙ্গে কমিটি গঠন নিয়ে বিবাদ, কখনও বা লড়াই বাঁধতো বিরোধী গোষ্ঠীর পঞ্চায়েত প্রধানের সঙ্গে। আবার কখনও বা দেখা গিয়েছে স্থানীয় বিধায়ক রবিউল আলমের সঙ্গে জমি বিবাদে জড়াতে।

তবে, এত কিছুর পরেও ২০২১ সালে দল তাকে বিধানসভা নির্বাচনের টিকিট দেয় মুর্শিদাবাদের ভরতপুর বিধানসভা ক্ষেত্রে লড়ার জন্য। আর এবারে দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় ২০১১ সালের পর ফের ২০২১-এ করে দেখালেন হুমায়ুন। কংগ্রেসের পর এবার তৃণমূলের হয়ে জিতলেন বিধানসভা নির্বাচন। ফলত দলের শীর্ষ নেতৃত্বের আস্থা যেমন অর্জন করেন তিনি, পাশাপাশি সম্পর্ক হয় আরও মজবুত।

কিন্তু, মাস ঘুরতেই ফের শিরোনামে আসেন হুমায়ুন। আর কারণ সেই আগের মতো নিজের দলের কর্মী-নেতাদের বিরুদ্ধে কটাক্ষ, হুমকি। ফলত ২০২১-এর ৩০শে জুলাই ফের তৃণমূলের তরফ থেকে শো-কজ করা হয় হুমায়ুনকে।

তারপরেও চলতে থাকে, পার্টির সাথে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা, ব্লক/জেলা সভাপতি ও স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে মত-বিরোধ, ক্ষমতার ভাগাভাগি, এবং আসন নিয়েও বিভিন্ন ঝামেলা। এমনকি দলের বিরুদ্ধে গিয়ে করেন নির্দল প্রার্থীর হয়েও প্রচার।

এরপর সালটা ২০২৪। লোকসভা নির্বাচনে মুর্শিদাবাদ থেকে প্রার্থী করা হয় ইউসুফ পাঠানকে। আর ফের দল পরিবর্তনের হিড়িক তোলেন হুমায়ুন কবীর। সরাসরি তৃণমূল নেতৃত্বকে হুমকি দিয়ে বলেন, – পাঠানকে না সরালে নাকি নির্দল হয়ে লড়বে হুমায়ুন। এমনকি শীর্ষ নেতৃত্বের আদেশ অমান্য করে জানিয়ে দেন, পাঠানের হয়ে তিনি কোনও প্রচার করবেন না।

এরপরেই মে মাসে তিনি করে বসেন এক ভয়ানক মন্তব্য। বলেন, “তোমরা ৩০ শতাংশ, আমরা ৭০ শতাংশ। দুঘণ্টার মধ্যে তোমাদের ভাগীরথী নদীতে ভাসিয়ে দিতে না পারলে, রাজনীতি থেকে সরে যাবো“। কারোর নাম না নিলেও, এটা যে হিন্দুদের উদ্দেশ্যেই বলা হয়েছিল সেই আভাস পাওয়া যায় স্পষ্টতই।

ওই বছরের ৯ই আগস্ট। আরজি কর মামলা নিয়ে সারা রাজ্যের পাশাপাশি যখন সারা দেশও উত্তাল। তখন ফের নিজের বিতর্কিত মন্তব্য নিয়ে হাজির হন হুমায়ুন। জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের সমালোচনা করে একের পর এক দিতে থাকেন হুঁশিয়ারি। চলে ধমক-চমক। যার ফলে তাঁর বিরুদ্ধে করা হয় FIR-ও। ভুলভাল, বিতর্কিত নানান মন্তব্য, তৃণমূল নেত্রীর নির্দেশ না মানার কারণে দলের তরফ থেকে করা হয় আবারও শোকজ।

এরপর বছরটা ২০২৫। ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীরকে আসাদুদ্দিন ওয়েইসির দল অল ইন্ডিয়া মজলিস-এ-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনি (মিম)-এ যোগদানের প্রস্তাব দেওয়া হয়। তবে, এবার দলবদল না করে তৃনমূলেই থাকার সিদ্ধান্ত নেন হুমায়ুন।

তবে, দলের প্রতি আনুগত্য দেখালেও, দলের সাথে ক্রমশ দূরত্ব বাড়ছিল হুমায়ুনের। আর তার মূল কারণ ছিল তৃণমূল সুপ্রিমো সহ একাধিক শীর্ষ নেতার বারংবার বারণ সত্ত্বেও বিতর্কিত মন্তব্য করা।

তবে, ২২শে নভেম্বের দলের সাথে নিজের সম্পর্কের কফিনে শেষ পেরেক পোঁতেন হুমায়ুন কবীর। বলেন, “একটি নতুন বাবরি মসজিদ নির্মাণ করতে চাই। ৬ই ডিসেম্বর মুর্শিদাবাদের বেলডাঙ্গায় বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে।“

যার পরেই রাজ্য রাজনীতিতে পড়ে যায় আলোড়ন। চলতে থাকে বহু তর্ক-বিতর্ক। তৃণমূলের অন্দরেও চলতে থাকে বিবাদ। অবশেষে ৪ঠা ডিসেম্বর কলকাতায় সাংবাদিক বৈঠক করে হুমায়ুন কবীরকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন ফিরহাদ হাকিম।

এর পরেই হুমায়ুন কবীর জানান, তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত্র করা হয়েছে। তাঁকে খুন করা হতে পারে। তিনি এও জানান, তিনি বাবরি মসজিদ করেই ছাড়বেন। এবং নিজের দল ঘোষণা করবেন। তিনি বলেন, আগামী ২২শে ডিসেম্বর নতুন দল গঠন করবো, ১৩৫টি আসনে প্রার্থী দেবো।

এরপর ওইদিনই, তাঁর এই মসজিদ তৈরির প্রস্তাবকে সংবিধান-বিরোধী বলে অভিযোগ করে, কলকাতা হাই কোর্টে দায়ের হয় একটি জনস্বার্থ মামলা। তবে এই মামলায় কোনও হস্তক্ষেপ করেনি কলকাতা হাইকোর্ট। বরং জানিয়ে দেয়, মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় আইনশৃঙ্খলা বজায় রেখে কর্মসূচির আয়োজন করতে হবে হুমায়ুনকে। রাজ্যকেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার নির্দেশ দেওয়া হয়।

ফলত জোর কদমে শুরু হয় বাবরি মসজিদ তৈরির শিলান্যাস অনুষ্ঠান। আমন্ত্রণ জানানো হয় সৌদির ধর্মগুরুদের। করা হয় বিশাল মঞ্চ। হয় বিরিয়ানির প্রস্তুতিও।

এরপর দিনটা ৬ই ডিসেম্বর। সকাল ১১টার পরেই মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার বড়ুয়া মোড় থেকে রেজিনগর পর্যন্ত জাতীয় সড়কে যান চলাচলের গতি থমকে যায়। এমনকি হুমায়ুনের সভাস্থলে মাথায় করে ইট নিয়ে সংখ্যালঘু জনতা ভিড় জমান। দুপুর ১২টায় শুরু হয় শিলান্যাসের মূল অনুষ্ঠান। বলা যায় পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের চোখরাঙ্গানিকে উপেক্ষা করে হয়ে গেল বাবরি মসজিদের শিলান্যাস। এই পরীক্ষায় উতরে গেলেন হুমায়ুন কবীর।

এইদিন এক বিস্ফোরক মন্তব্য করেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, “মসজিদ নয়, চক্রান্তে পা দেওয়ার কারণেই হুমায়ুনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।“

তাহলে কোন চক্রান্তের কোথা বলছেন কুণাল ঘোষ? আদতে কি একটা গিমিক এই বাবরি মসজিদ? আদৌ কি তৈরি হবে? কারণ এখনও মেটেনি জমি বিবাদ। প্রথমে যে জমিতে তিনি করবেন বলে ঠিক করেছিলেন, সেই জমিকে হঠাৎই ঘিরে ফেলেন সেই জমির মালিক। এরপর যেখানে শিলান্যাস অনুষ্ঠান করা হয়, সেটি মেরেকেটে দেড় থেকে দু কাঠা জমি। কিন্তু এই মসজিদের জন্য দরকার পড়বে প্রায় ২৫বিঘা জমির, কারণ হুমায়ুন কবীর জানিয়েছেন এই মসজিদ কোনও সাধারণ মসজিদ নয়, একটি বৃহৎ প্রকল্প। যেখানে মসজিদের পাশে গড়ে উঠবে বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ সহ আরও অনেক কিছু। তাহলে কি একদিকে তৃণমূল বলছে, হুমায়ুন বিজেপির হয়ে কাজ করছে, এতে বিজেপিরই লাভ হবে। অন্যদিকে বিজেপির অভিযোগ, তৃনমূলকে হিন্দু ভোট পাইয়ে দিতেই নাকি গট আপ গেম খেলছে হুমায়ুন।

কারণ যতই গরম দেখান, ফের তৃনমূলে ঢোকারও ইঙ্গিত ও দিয়েছেন  হুমায়ুন কবীর। জানিয়েছেন, নির্দল হয়ে রেজিনগর আর বেলডাঙ্গায় লড়বেন। লড়ে জিতে ফের জামাই আদর খেয়ে তৃনমূলে ঢুকবে!

অর্থাৎ, এখানেই কি স্পষ্ট নয় হুমায়ুন আর তৃণমূলের গট-আপ গেম? এই নিয়ে আপনার কি মতামত?

Leave a Comment