India Hood Decode: ৭ বছরের জেল, কল্যাণকে একাই কাবু করলেন রাজ্যপাল!

Kalyan Banerjee VS Governor
Kalyan Banerjee VS Governor

এবার কল্যাণ ব্যাণার্জিকে (Kalyan Banerjee) একাই কাবু করলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ। টানা ৭ বছরের জন্য হতে পারে জেল। ফের মুখ পুড়ল তৃণমূলের।

কখনও অভিষেক, তো কখনও মহুয়া মৈত্র!
কখনও চু কিত কিত, আবার কখনও ধর্ষণ কাণ্ডে বেফাঁস মন্তব্য – এমন কিছু না কিছু বিষয় নিয়ে সর্বদাই সংবাদ শিরোনামে দেখা যায় কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তবে, গত কয়েকমাস ধরে একদমই কল্যাণহীন হয়ে পড়েছিল রাজ্য রাজনীতি। না শোনা গিয়েছে কোনও তির্যক মন্তব্য, না কোনও খিঁচ মেরি ফটো।

তবে, ১৫ই নভেম্বর ফের চেনা ছন্দে দেখা গেল কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তবে, এবার নিজের দলের কর্মী বা বিরোধী নেতাদের নয়, সরাসরি আক্রমণ করলেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালকে। আর তার পরেই সিভি আনন্দ করলেন এমন কাজ, যে একপ্রকার নাকানি চোবানি খেলেন কল্যাণ ব্যাণার্জি। গসত ১ সপ্তাহ ধরে যেন ঠাণ্ডা হচ্ছে না কল্যাণ-আনন্দ তরজা!

ঠিক কী হয়েছিল ১৫ই নভেম্বর? রাজ্যপালের বিরুদ্ধে কী এমন বলেছিলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়? কল্যাণকে কীভাবে জব্দ করলেন সিভি আনন্দ? আজ India Hood ডিকোডে আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরবো সেই সমস্ত তথ্য।

কী হল কল্যাণ ব্যাণার্জি আর রাজ্যপালের মধ্যে?

দিনটা ৪ঠা আগস্ট। তৃণমূল কংগ্রেসের মুখ্য সচেতক পদ থেকে ইস্তফা দেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর কখনও দলের মহিলা সাংসদদের নিশানা, আবার কখনও ব্যাঙ্ক থেকে ৫৫ লক্ষ টাকা খুইয়ে সংবাদের শিরোনামে এসেছেন তিনি! এমনকি SIR নিয়েও মন্তব্য করতে ছাড়েননি শ্রীরামপুর লোকসভার তৃণমূল সাংসদ।

কিন্তু, ১৫ই নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গে ঘটে গেল এক অদ্ভুত ঘটনা। উত্তপ্ত হয়ে উঠল রাজ্য রাজনীতি। দিনটা ছিল শনিবার। SIR-এর সমর্থন করেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তিনি বলেন, “SIR অত্যাবশ্যক, কারণ এটি নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ করার একটা গুরুত্বপূর্ণ পথ। এই প্রক্রিয়াটি ভোটারদের মধ্যে বিশ্বাস ফেরাবে এবং ভবিষ্যতে সুষ্ঠু ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন নিশ্চিত করবে।“

আর সেই বক্তব্যের হঠাৎ করেই বিরোধিতা করে বসেন তৃণমূলের সাংসদ। দাগিয়ে দেন সরাসরি হিংসার অভিযোগ। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “প্রথমে বলুন রাজ্যপালকে, যেন উনি বিজেপির অপরাধীদের রাজভবনে আশ্রয় দেওয়া বন্ধ করেন। উনি সেখানে অপরাধীদের রাখছেন, তাদের বন্দুক ও বোমা দিচ্ছেন এবং তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে হামলা করতে বলছে।”

এরপর ১৬ই নভেম্বর। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আক্রমনাত্মক মন্তব্যের জবাব দেয় রাজভবন। এমনকি সেই মন্তব্যকে ‘গুরুতর এবং ভিত্তিহীন’ বলেও ব্যাখ্যা দেয় রাজ্যপাল সিভি আনন্দ। রাজভবনের তরফ থেকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলা হয়, “সাংসদ, নাগরিক সমাজের সদস্য এবং সাংবাদিক মিলিয়ে সর্বোচ্চ ১০০ জন ইচ্ছুক ব্যক্তিকে অবিলম্বে রাজভবনে ঢুকতে দেওয়া হবে, যাতে তাঁরা নিজেরা যাচাই করে দেখতে পারেন— এই অভিযোগের কোনও বাস্তব ভিত্তি আছে কি না। যদি অভিযোগ অসত্য প্রমাণিত হয়, তবে সাংসদ কল্যাণকে বাংলার মানুষের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে এবং ঘৃণাত্মক বক্তব্যের জন্য তাঁকে আইনি প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হতে হবে।“ এছাড়াও, ওই বিবৃতিতে বলা হয়, “যেহেতু রাজভবনের নিরাপত্তা কলকাতা পুলিশের হাতে, তাই কী ভাবে তাদের অনুমতি নিয়ে তথাকথিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ ভবনের ভিতরে প্রবেশ করল, তারও অবিলম্বে তদন্ত হওয়া উচিত। এটি জ়েড-প্লাস নিরাপত্তাপ্রাপ্ত রাজ্যপাল এবং রাজভবনের সমস্ত কর্মীর জন্য চরম হুমকি।”

এমনকি কল্যাণের এই মন্তব্যের পরেই রাজ্যপালের নিরাপত্তা আধিকারিকেরা তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সিভি আনন্দকে রাজভবন ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু রাজ্যপাল সেই পরামর্শ মানতে অস্বীকার করেন। তাঁর বক্তব্য, “আমি রাজভবনেই থাকবো, যা-ই ঘটুক।” রাজভবন আরও জানায়, এই অভিযোগ যেহেতু একজন লোকসভার সদস্য করেছেন, তাই সমগ্র বিষয়টি বিচার-বিশ্লেষণের জন্য লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার কাছে পাঠানো হবে।

যেমন কথা তেমন কাজ। দিনটা ১৭ই নভেম্বর। উত্তরবঙ্গ সফর মাঝপথে থামিয়ে কলকাতায় ফিরে রাজভবনে যৌথ চিরুনি তল্লাশি চালান রাজ্যপাল। কলকাতা পুলিশ, রাজভবন পুলিশ আউটপোস্ট, সিআরপিএফ, বম্ব স্কোয়াড ও ডগ স্কোয়াড — এই পাঁচ বাহিনী মিলে অভিযানে যোগ দেয়। আর সেই তল্লাশির সরাসরি সম্প্রচার করা হয় টিভিতে।

তল্লাশির পরে, নিজের অফিসে সাংবাদিক বৈঠক করেন রাজ্যপাল। বলেন, ‘‘তল্লাশিতে কিচ্ছু পাওয়া যায়নি। সাংসদের অভিযোগ ভিত্তিহীন। তাই অবিলম্বে কল্যাণ প্রকাশ্যে নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা করুন। নাহলে সময়মতো পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’’

এরপর রাজভবনের চিরুনি তল্লাশি মিটতেই রাজ্যপালকে নিয়ে ফের কটাক্ষ করেন কল্যাণ। তিনি বলেন, ‘‘বোমা রেখে দিয়ে কি কেউ বম্ব স্কোয়াড ডাকেন? এটা ছেলেমানুষি ছাড়া আর কিছুই নয়। ‘বম্ব স্কোয়াড কেন, উনি তো আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারতেন! এফবিআই-কে দিয়ে তল্লাশি করাতেন।’’ এর সাথে মুচকি হেসে তৃণমূল সাংসদ আরও বলেন, ‘‘অমিত শাহের কাছে নম্বর কমে গিয়েছে। তাই নম্বর বাড়ানোর চেষ্টা করছেন রাজ্যপাল। উনি যদি সংবিধান মেনে চলেন, তবে ভাল হয়। কিন্তু তিনি তা করেন না।’’

এরপর দিনটা ১৮ই নভেম্বের। রাজভবনের এক শীর্ষ আধিকারিক জানান, “আইনি পরামর্শের ভিত্তিতে তৃণমূল সাংসদের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন রাজ্যপাল। কোন কোন ধারায় মামলা দায়ের করা হবে, সেই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।“

জানা গিয়েছে, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মোট আটটি ধারায় মামলা করা হতে পারে। ভারতের ন্যায় সংহিতা ২০২৩-এর

ধারা ১৫১ ১৫২ অর্থাৎ দেশের ঐক্য, সংহতি এবং সার্বভৌত্বের প্রতি আঘাত হানার জন্য,
ধারা ১৯৭ অর্থাৎ মানুষকে ভুল বোঝানো এবং হিংসা ছড়ানোর জন্য,
ধারা ১৯৬ ‘এ’১৯৬ ‘বি’ অর্থাৎ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করা এবং ঘৃণা ছড়ানোর জন্য,
ধারা ৩৫৩-১ ‘বি’ ও ৩৫৩‘সি’ অর্থাৎ সাধারণ মনুষকে ভয় দেখানো এবং রাজ্যপালের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য,
এবং ধারা ৩৫৩-২ অর্থাৎ দুই শ্রেণির মানুষের মধ্যে হিংসায় ইন্ধন দেওয়া ধারায় মামলা দায়ের করা হবে।

অর্থাৎ এক কথায় বলতে গেলে মানহানি-সহ দেশের সম্প্রীতি, সংহতি ও ঐক্যের উপর আঘাত আনার মতো ধারাগুলি এনে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা দায়ের করা হবে। এই সমস্ত মামলায় শাস্তি পেলে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ডের সম্ভাবনা রয়েছে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়য়ের। অভিযোগগুলি গুরুতর এবং অ-জামিনযোগ্য।

তবে এমনটা যে রাজ্যপাল করবেন, তা যেন আগে থেকেই জানতেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি একটুও বিচলিত না হয়ে বলেন, ‘‘রাজ্যপাল যা ইচ্ছা করুক। কবে করবেন মামলা? মামলা করলে যেন নিজে করেন। অন্য কাউকে দিয়ে যেন না করান!’’ কিন্তু, এখানেই থেমে যাননি তৃণমূল সাংসদ।

১৯শে নভেম্বর, কল্যাণ ব্যাণার্জি, রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক মন্তব্যের অভিযোগ তুলে কলকাতার হেয়ার স্ট্রিট থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। কল্যাণের দাবি রাজ্যপাল নাকি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে উস্কানিমূলক মন্তব্য করেছেন।

একদিকে কল্যাণের মন্তব্যের পর রাজভবনে এত বড় আকারের অপারেশনকে অনেকেই  রাজনৈতিক ভাবে জবাব হিসাবে আখ্যা দিচ্ছেন। আবার কেউ বলছে তৃণমূলের মুখ পোড়াতেই এই পদক্ষেপ নিয়েছে রাজ্যপাল।

তবে, ঘটনার পরিণতি যাই হোক। রাজভবনের ইতিহাসে এই ঘটনা যে একটি অভূতপূর্ব ঘটনা সে কথা বলাই বাহুল্য। কারণ অতীতে কোনও রাজ্যপালের জমানায় রাজভবনে নাকি এমন চিরুনি তল্লাশি চলেইনি।

তাই আপনার কী মনে হয়? সাপের লেজে পা দিয়ে কি এবার ছবল খেতে হবে কল্যাণকে? নাকি নিজের জালে নিজেই জড়িয়ে পড়বেন রাজ্যপাল? আদৌ কি জেল হবে কল্যাণের? আপনার কী ,মনে হয়?

Leave a Comment