সহেলি মিত্র, কলকাতা: বড় চাকরি ছেড়ে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা দাঁড় করানো কিন্তু মুখের কথা নয়। নিজের উন্নতির পাশাপাশি বেকার যুবক যুবতীদের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের পথ দেখিয়ে রীতিমতো নজির গড়ছেন মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) কাঠ মিস্ত্রির ছেলে সঞ্জয় সরকার। যিনি কিনা কোটি-কোটি টাকার ব্যবসা করে মুর্শিদাবাদের বেকার যুবক যুবতীদের পথ দেখাচ্ছেন। তাঁর জীবনের গল্প শুনলে আপনিও চমকে উঠবেন।
IT-র চাকরি ছেড়ে ডুবতে থাকা পারিবারিক ব্যবসাকে দাঁড় করালেন সঞ্জয়
জানা গিয়েছে, সঞ্জয় এক সময় বিদ্যুৎ দফতরে চুক্তিভিত্তিক কর্মীর কাজ করতেন। তবে সেই চাকরি ছেড়েছেন। শুধু তাই নয়, ব্যাঙ্গালোরের আইটি সেক্টরের চাকরি ছেড়েছেন। এরপর বহরমপুরে সঞ্জয় নিজের উদ্যোগে তাঁর ব্যক্তিগত কাঠের ব্যবসা শুরু করেন যার মূল্য এখন ৩-৪ কোটি টাকার। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। এর পাশাপাশি ২২২ জনের কর্মসংস্থানের সঙ্গে জড়িত তিনি। পূর্বপুরুষের শেষ হয়ে যাওয়া ব্যবসাকে নতুন করে দাঁড় করিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সঞ্জয়।
কীসের ব্যবসা করেন সঞ্জয়?
মধ্যবঙ্গ নামের এক স্থানীয় সংবাদ অনুযায়ী, সঞ্জয়ের বাবা-দাদু একসময় কাঠের লাঙল করতেন। তৈরি করতেন ঘোড়ার গাড়ি। তারপরে কোনও কারণে ব্যবসা ভালো ফল করছিল না। সেই মার খাওয়া ব্যবসাকে নতুনভাবে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন সঞ্জয়। ফেলে দেওয়া কাঠ, কাঠের গুঁড়ো থেকে কানের দুল, বোতাম, কলমদানি, চিরুনি, খেলনা, দোলনা তৈরি করছেন তিনি। নিজের ব্যবসার পাশাপাশি তিনি সমাজ শুধরানোর কাজও করেন। প্রশিক্ষণ দেন উৎকর্ষ বাংলা, খাদি, সরকারি আইটিআইয়ে। যুব প্রজন্মকে এগিয়ে যেতে, নিজেদের পায়ে দাঁড়িয়ে সাবলম্বী হতে শেখান তিনি।
সঞ্জয় জানান, ‘যে পরিমাণ কাঠ দরকার হয় একটি দুল তৈরি করতে তাতে হয়তো ১ টাকা খরচ হয়। তা অনেক বেশি টাকায় বিক্রি হয়। কাঠের মালা বিক্রি হবে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। একদিনে অনেক তৈরি করা যায়। এখন কাঠের গয়না পড়বার প্রবণতা বাড়ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের খাদি, রাজ্যের আইটিআইয়ে ট্রেনিং করাচ্ছি। ছাঁট কাঠ থেকে ২-৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া জ্বালানির কাঠকে ৫০-১০০ টাকা মূল্যের করা হচ্ছে। কাঠের গুঁড়োও ফেলা যাবে না। ফলে গুঁড়োরও দাম পাবেন। তা দিয়ে অনেক টাকার বোর্ড তৈরি হচ্ছে।’
নিজের পারিবারিক ব্যবসা সম্পর্কে সঞ্জয় জানান যে তিনি ও তাঁর বাবা কীভাবে একটি ডুবতে থাকা ব্যবসাকে আজ কোটি টাকার মুনাফার জায়গায় দাঁড় করিয়েছেন। ঋণ নিয়ে শুরু হয় ক্লাস্টারের কাজ। তাতে ১০০-র বেশি বিভিন্ন কাঠের মিস্ত্রিকে বিনা টাকায় যন্ত্র কিনে দেওয়া হল। নিজেদের হয়তো ১ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। সরকার দিয়েছে ১৯ হাজার টাকা। একের পর এক সরকারের প্রকল্পতে ঢুকেছেন তিনি। সঞ্জয়ের কথায়, ‘একা নই। আমি ১০০-র বেশি কাঠ মিস্ত্রিকে নিয়ে কাজ করেছি। সবাইকে সাহায্য করেছি। পঞ্চাননতলায় জেলাপরিষদের কর্মতীর্থে দোকান রয়েছে।’