LPG এজেন্সি খুলে মাসে আয় করুন ২-৩ লাখ! জানুন বিনিয়োগ ও আবেদন পদ্ধতি সম্পর্কে

সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: ভারতে দিনের পর দিন রান্নার গ্যাসের চাহিদা বাড়ছে। এক সময় যেখানে এলপিজি সংযোগ শুধুমাত্র মধ্যবিত্ত বা শহুরে পরিবারের মধ্যেই ছিল, এখন তা প্রত্যন্ত গ্রামেও পৌঁছে গিয়েছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনার মাধ্যমে এখন দেশের কোটি কোটি পরিবারে এই রান্নার গ্যাস সংযোগ পৌঁছেছে।

এই চাহিদের কথা মাথায় রেখেই এবার এক লাভজনক ব্যবসা সামনে এসেছে। আর তা হল এলপিজি ডিস্ট্রিবিউশন এজেন্সি (LPG Agency Business)। হ্যাঁ, একদম ঠিকই পড়েছেন। আপনি যদি সামান্য খরচে বড় মুনাফা অর্জন করতে চান, তাহলে এটিই হতে পারে আপনার জন্য একদম সেরা বিকল্প।

চাহিদা দ্বিগুণ এই ব্যবসার

2014 সালে যেখানে দেশে মাত্র 14.52 কোটি গ্যাস সংযোগ ছিল, সেখানে 2025 সালের 1 জুলাইয়ে দাঁড়িয়েছে 33.52 কোটিতে। এর মধ্যে 10 কোটিরও বেশি সংযোগ দেওয়া হয়েছে উজ্জ্বলা যোজনার আওতায়। আর এই বিরাট চাহিদার যোগান দিতেই সরকার তিনটি বড় বড় তেল বিপণন সংস্থার মাধ্যমে গ্যাস এজেন্সির ডিলারশিপ প্রদান করছে। সেগুলি হল ইন্ডিয়ান ওয়েল কর্পোরেশন, ভারত পেট্রোলিয়াম এবং হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম।

আবেদন কীভাবে করবেন?

গ্যাস এজেন্সি হিসেবে কাজ করার জন্য আপনাকে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। এর জন্য প্রথমে আপনাকে https://www.lpgvitarakchayan.in ওয়েবসাইটে যেতে হবে। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট কোম্পানির ওয়েবসাইটে গিয়েও আবেদন করা যায়। যেমন iocl.com, myhpgas.in, my.ebharatgas.com। আবেদন জমার পর প্রার্থীদের ইন্টারভিউ নেওয়া হবে এবং যাচাই করা হবে। তারপর কোনো এলাকায় যদি একাধিক যোগ্য আবেদনকারী থাকে, তাহলে লটারির মাধ্যমে নির্বাচন করা হবে।

এজেন্সি কোথায় খোলা যাবে?

ডিস্ট্রিবিউশন লাইসেন্স মূলত মেট্রো শহর, পৌরসভা এলাকা এবং গ্রামীণ অঞ্চলে পাওয়া যায়। তবে হ্যাঁ, 14.2 কেজির বেশি ওজনের সিলিন্ডার সরবরাহ করা যাবে না। অর্থাৎ, শুধুমাত্র গার্হস্থ এলপিজি সিলিন্ডারের ব্যবসা করা যাবে, বাণিজ্যিক এলপিজি সিলিন্ডার রাখা যাবে না। 

কিন্তু হ্যাঁ, এক্ষেত্রে জানিয়ে রাখি, ভূমি যাচাই বাধ্যতামূলক। সংস্থার প্রতিনিধিরা খতিয়ে দেখবে যে, এজেন্সির জন্য জমি উপযুক্ত কিনা। তারপর সমস্ত ঋতুতে রাস্তার সংযোগ থাকতে হবে। পাশাপাশি  নিজের খরচায় গুদাম এবং অফিস নির্মাণ করতে হবে। আর জমি নিজের নামে না হলে 15 বছরের জন্য লিজ নিতে হবে।

কারা অগ্রাধিকার পাবে?

সরকারের নির্ধারিত কোটা অনুযায়ী, মূলত 50 শতাংশ সংরক্ষণ জেনারেল ক্যাটাগরির জন্য থাকে। আর এসসি, এসটি, প্রাক্তন সেনা, খেলোয়াড়, প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের জন্য বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। তবে এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, আবেদনকারীর বয়স হতে হবে 21 থেকে 60 বছর এবং অন্তত মাধ্যমিক পাস করতে হবে। পাশাপাশি আবেদন করার জন্য 10,000 টাকা ফি দিতে হবে, যা ফেরতযোগ্য নয়।

খরচ কীরকম হবে?

এলপিজি এজেন্সি খোলার প্রাথমিক খরচ পড়বে মোটামুটি 15 লক্ষ টাকা থেকে 30 লক্ষ টাকার মধ্যে। এর মধ্যে সিকিউরিটি ডিপোজিট, গুদাম ও অফিস নির্মাণ ভাড়া, গাড়ি, কম্পিউটার, ওজন মেশিন এবং ডেলিভারির জন্য সামান্য সরঞ্জাম কিনতে হবে। অনেক ব্যাঙ্ক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান এই ব্যবসার জন্য ঋণও দিয়ে থাকে।

আর একবার যদি এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন, তাহলে প্রতিটি 14.2 কেজি সিলিন্ডারের জন্য ডিস্ট্রিবিউটার হিসেবে আপনি 73.08 টাকা কমিশন পাবেন, যার মধ্যে 33.43 টাকা ডেলিভারি চার্জ। মাসের হিসেবে যদি আপনি 1000টি সিলিন্ডার সরবরাহ করতে পারেন, তাহলে মোট কমিশন দাঁড়াবে 2 লক্ষ 19 হাজার টাকা।

পড়তে ভুলবেন নাঃ তীব্র ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল রাশিয়া! সুনামি সতর্কতা জারি আমেরিকা ও জাপানে

এক্ষেত্রে, আপনার সব খরচ বাদ দিয়েও মাসে প্রায় 70 হাজার টাকা রোজগার থাকবে। আর শহরে বড় বড় এজেন্সিগুলো দিনে 500টি পর্যন্ত সিলিন্ডার সরবরাহ করে থাকে। অর্থাৎ, মাসে প্রায় 15,000 সিলিন্ডার দাঁড়ায়। ফলে মোট আয় দাঁড়াবে 10 লক্ষ থেকে 12 লক্ষ টাকা। আর সব খরচ বাদ দিয়েও 4 থেকে 5 লক্ষ টাকা পকেটে থাকবে। তাই যদি ভবিষ্যতের জন্য লাভজনক এবং সুরক্ষিত কোনও ব্যবসা করতে চান, তাহলে এটিই হতে পারে সেরা বিকল্প।

Leave a Comment