সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: দিনের পর দিন ভারতীয় রূপির মান একেবারে তলানিতে ঠেকছে (Indian Rupee Fall)। হ্যাঁ, গত পরশুদিন তো ৯০ এর গণ্ডি পার করেছিল ডলারের বিপরীতে ভারতীয় মুদ্রা। তবে এখন সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন জাগছে, রুপির দাম যত তলানিতে ঠেকবে তত কি রান্নার গ্যাস থেকে শুরু করে পেট্রোল-ডিজেলের দাম বাড়বে? বিস্তারিত জানতে হলে প্রতিবেদনটি পড়ুন।
জানিয়ে রাখি, বুধবার ভারতীয় রুপির দাম মার্কিন ডলারের বিপরীতে ৯০ টাকা ছাড়িয়ে ৯০.১৩ টাকায় নেমেছিল যা সর্বকালের সর্বনিম্ন স্তর। অর্থাৎ, আপনাকে এক ডলার কিনতে গেলে খরচ করতে হবে ৯০ টাকা ১৩ পয়সা যা মোটেও সন্তোষজনক নয়। এক কথায় দেশের অর্থনীতি দিনের পর দিন যেন ভেঙে পড়ছে।
এতে কে লাভবান হবে আর কে ক্ষতিগ্রস্ত হবে?
আসলে রুপির দরের পতনের ফলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনেই সরাসরি প্রভাব পড়বে। কারণ, আমদানি খরচ আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে। যার ফলে সাধারণ জিনিসপত্রের দাম অনেকটাই বাড়বে। আর এই ধাক্কা শেয়ার বাজারেও অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। পাশাপাশি বিদেশে পড়াশোনার ক্ষেত্রে খরচ বাড়তে পারে, এবং আন্তর্জাতিক লেনদেনে প্রভাব পড়বে। কারণ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সবসময় ডলার দিয়ে লেনদেন হয়। অর্থাৎ, এক দেশ থেকে অন্য দেশে আমদানি করা পণ্যের মূল্য ডলারে পরিশোধ করার ক্ষেত্রে এবার বেশি মূল্য চোকাতে হবে।
সবথেকে বড় ব্যাপার, ভারত অপরিশোধিত তেলের মধ্যে ৬৫% বিদেশ থেকে কেনে, যার মধ্যে রাশিয়া সবথেকে বেশি তেল জোগানকারী দেশ। আর ভোজ্য তেলেরও ৬০% এর বেশি অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করা হয়। ফলে রুপি দুর্বল হওয়ার কারণে সরকারকে বেশি আমদানি খরচ করেই এই তেল কিনতে হবে। যার ফলে দেশের বাজারে তেলের দাম বাড়তে পারে। তাই পেট্রোল-ডিজেল বা এলপিজির দাম বাড়বে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এর ফলে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের উপরেই পড়বে চাপ।
বাড়তে পারে এসব জিনিসের দাম
তবে শুধু তেলের দাম নয়, বরং স্মার্টফোন থেকে শুরু করে ল্যাপটপ, এয়ারকন্ডিশনার, রেফ্রিজারেটর মতো ইলেকট্রনিক্স জিনিসের দামও অনেকটাই বাড়তে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। কারণ, এইসব যন্ত্রাংশগুলির সিংহভাগই আমদানি করা হয়। রুপি দুর্বল হওয়ার কারণে এসবের দামও বৃদ্ধি পাবে। ফলে দেশের বাজারে আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে এই জিনিসগুলি।
আরও পড়ুন: দেশজুড়ে অনেকটাই বাড়ছে কনডমের দাম!
এদিকে রুপির দাম কমে যাওয়ার ফলে বিদেশে পড়াশুনোর ক্ষেত্রে খরচ আরও বাড়বে। কারণ, ডলার কিনতে আরও বেশি পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হবে। আগে প্রতি ডলার ৮০ টাকা দামে কেনা যেত। তবে এখন তা প্রায় ৯০ টাকা পৌঁছেছে। যেখানে ভারতীয় মুদ্রায় ৫০,০০০ ডলারের বার্ষিক টিউশন ফি ছিল ৪০ লক্ষ টাকা, এখন তা ৪৫ লক্ষ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। ফলে বুঝতেই পারছেন, মধ্যবিত্ত পরিবারের উপর এবার বাড়তি প্রভাব পড়বে। আর রুপির মান দুর্বল হওয়ায় শিক্ষা ঋণের খরচ আরও বাড়তে পারে।