ইন্ডিয়া হুড ডেস্ক: বেশ কিছুদিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও বেশ ভাইরাল হয়েছিল। যেখানে দেখা গিয়েছিল বেঙ্গালুরুর এক ঝাঁ চকচকে শপিং মলে ধুতি পরে এখন কৃষক প্রবেশ করছে। তার কাছে ছিল মলের ভিতর থাকা সিনেমা হলের বৈধ টিকিট। কিন্তু তা সত্বেও শপিং মলে ঢুকতে গেলেই তাঁকে বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়। কারণ একটাই। আর সেটি হল তাঁর পোশাক। ধুতির বদলে প্যান্ট-শার্টই পরতে হবে তাঁকে। এমনই তুঘলকি নিয়ম দেখিয়ে, এক বৃদ্ধ কৃষককে ঢুকতে দিতে অস্বীকার করেছিল বেঙ্গালুরুর জিটি ওয়ার্ল্ড মল। আর সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই এবার এক বড় তথ্য উঠে এল খবরের শিরোনামে।
এই খবর প্রকাশ্যে আসা মাত্রই সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছে। নিন্দায় সরব হয়েছেন নেটিজেনরা। এমনকি রাজনৈতিক রং-ও লাগে এই ঘটনায়। বিজেপি নেতারাও এই ঘটনার প্রেক্ষিতে নিশানা করেছিল কর্নাটকের কংগ্রেস সরকারকে। কিন্তু এই ঘটনার আবহের মাঝেই গতকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার মাগাড়ি রোডের ওই মলে, সাতদিনের তালা ঝুলিয়ে দিল বৃহৎ বেঙ্গালুরু মিউনিলিপাল কর্পোরেশন। BBMP-র দাবি করছে, মল কর্তৃপক্ষ ১.৭৮ কোটি টাকার কর এখনও দেয়নি তাই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে।
করের দায়ে বন্ধ বেঙ্গালুরুর এই শপিং মল
এদিন BBMP-র এক কর্তা জানিয়েছেন, ২০২৩-২৪ সালের কর ফাঁকি দিয়েছে ওই শপিং মল। একটি নোটিশও জারি করা হলেও টাকা না দেওয়ায় মলটি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে অনেকাংশের মোট শুধু কর নয় এর পিছনে রয়েছে ধুতি পরা কৃষকের সঙ্গে নির্মম ব্যবহারের প্রতিহিংসা। রাজ্যের নগর উন্নয়ন মন্ত্রী বাইরাথি সুরেশ জানিয়েছেন, আইন মেনেই এই পদক্ষেপ করা হয়েছিল। গতকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার কর্নাটক বিধানসভাতেই সাত দিনের জন্য মল বন্ধ রাখার কথা জানান সুরেশ। তার আগেই, ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১২৬-এর ২ নম্বর ধারা অনুযায়ী, একটি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছিল মলের মালিক এবং নিরাপত্তারক্ষীদের বিরুদ্ধে।
ঘটনাটি কী?
আসলে ঘটনাটি ঘটেছে কর্নাটকের হাভেরি জেলার এক প্রবীণ কৃষক ফকিরাপ্পার সঙ্গে। তাঁর ছেলে কাজ করেন বেঙ্গালুরুতে। সম্প্রতি, ছেলের সঙ্গে দেখা করতে শহরে এসেছিলেন ফকিরাপ্পা। বৃদ্ধ বাবাকে শপিং মলের সিনেমা হলে সিনেমা দেখাতে চেয়েছিলেন তাঁর ছেলে। কিন্তু, মলে ঢুকতেই পথ আটকান নিরাপত্তা কর্মীরা। এবং তাঁদের বলতে শোনা যায়, ওই মলের নীতি অনুযায়ী, ধুতি পরে প্রবেশ নিষেধ। নানাভাবে অনুরোধ করলেও নিরাপত্তারক্ষীদের মন গলেনি। উল্টে ফকিরাপ্পাকে প্যান্ট পরে আসতে বলেন। আর সেই ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই নেটিজেনদের নজরে আসে। এবং তীব্র নিন্দা করে।
আরও পড়ুনঃ একটা রুটির দামে বাংলায় ৫ বেলার খাবার! রান্নার তেল আকাশ ছোঁয়া, পাকিস্তানে চরম হাহাকার
এই ঘটনার ভিত্তিতে বিজেপি মুখপাত্র শেহজাদ পুনাওয়ালা কংগ্রেসকে সরাসরি “কৃষক বিরোধী” বলে দেন। এবং তিনি আরও বলেন, ‘কৃষককে কি মলে টাক্সিডো পরে আসতে হবে? তারা ডিজেলের দামও বাড়িয়েছে। কৃষকদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। এখন তারা ধুতি পরে প্রবেশ করতে বাধা দিয়ে কৃষকদের অপমান করছে। রাহুল বাবা কোথায়? এটা কি কৃষকদের সঙ্গে ন্যায়? পাশাপাশি এই ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখায় কন্নড় ও কৃষক সংগঠনগুলিও। তাঁরা মল কর্তৃপক্ষকে ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি করে এবং প্রশ্ন তোলেন খাটো পোশাক পরা মানুষদের ঢুকতে দিলে, ধুতি পরে কেন ঢুকতে দেওয়া হবে না?