ইন্ডিয়া হুড ডেস্ক: চলতি বছর লোকসভা নির্বাচনে তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী পদে যোগদান করেছেন নরেন্দ্র মোদী। তবে এই সিংহাসন একর জোড়ে দখল করেননি। সাহায্য নিয়েছিলেন শরিকদের কাছ থেকে। কারণ এ বার আর সংসদের নিম্নকক্ষে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দল বিজেপি। অর্থাৎ বিজেপি একক ভাবে জিতেছে ২৪০টি আসন। এবং বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট NDA পেয়েছে ২৯২টি আসন। তাই সরকার গড়তে হলে শরিকদের ওপর ভরসা করতে হয়েছে গেরুয়া শিবিরকে। কিন্তু সম্প্রতি আদালতের এক বড় নির্দেশে রীতিমত মাথায় হাত পড়ল বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের।
গত বছরের নভেম্বরে, জাতিভিত্তিক সমীক্ষার পর বিহারের নীতীশ কুমার সরকার সরকারি চাকরি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সমাজে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির জন্য নয়া সংরক্ষণ চালু করে। সেই নয়া সংরক্ষণে ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬৫ শতাংশ করার প্রস্তাব রাখা হয়। আর এই অধিক ১৫ শতাংশ বাড়ানোর কারণ হিসেবে বিহার সরকার জানায়,আর্থ-সামাজিক বৈষম্য থেকে রক্ষা করতে সরকারি চাকরি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংরক্ষণের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। সেই প্রস্তাব বিধানসভায় পাশও হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সরকারের এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে পাটনা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলাও দায়ের করা হয়। এবং সেই মামলার ভিত্তিতে বিস্ফোরক রায় দান করল রাজ্য সরকার।
বড় নির্দেশ হাইকোর্টের!
গতকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার পাটনা হাইকোর্ট এই মামলার ভিত্তিতে বিহারে তফসিলি, জনজাতি এবং পিছড়ে তথা অনগ্রসর এবং অতি পিছড়ে তথা অতিশয় অনগ্রসরদের জন্য রাজ্য সরকারের নয়া সংরক্ষণ বাতিল করে দিল। এছাড়াও আদালত মন্তব্য করেছে, যেভাবে এই সংরক্ষণ কার্যকর করা হয়েছে তা বেআইনি। যেখানে সুপ্রিম কোর্টের রায় রয়েছে ৫০ শতাংশের বেশি সংরক্ষণ হওয়া যাবে না সেখানে ওই রায় বহাল থাকা সত্ত্বেও কী করে রাজ্য সরকার নয়া সংরক্ষণ চালু করেছিল, সে প্রশ্ন তুলেছে আদালত।
জানা যায় বিহারে নয়া সংরক্ষণের এই নীতি কার্যকর হওয়ার সময় নীতীশ কুমার RJD-র নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক ছিলেন। তখন এই সিদ্ধান্তে লালুপ্রসাদের দলেরও সমান যোগদান ছিল। কিন্তু নয়া সংরক্ষণ নীতি কার্যকরের পরই সোজা বিজেপিতে যোগ দেন JDU নেতা নীতীশ কুমার। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে পিছড়েদের জন্য সংরক্ষণের সুযোগ বাড়ানোর জন্যই চলতি বছর লোকসভা ভোটে দারুণ ফলাফল করেছিল নীতীশ। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার আগেই হাইকোর্টের এই সংরক্ষণ বাতিলের রায়ে বড়সড়ো ধাক্কা খেলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। প্রশ্ন উঠছে বিহারের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে।
আরও পড়ুন: সময় দুই সপ্তাহ! দেড় লক্ষ শিক্ষককে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে কড়া নির্দেশ হাইকোর্টের
প্রসঙ্গত, বিহারের নয়া সংরক্ষণ নীতির ফলে সেখানকার মুসলিমরাও বেশ উপকৃত হচ্ছিল। কারণ বাংলার মতো বিহারের OBC তালিকাতেও মুসলিমদের বিভিন্ন সম্প্রদায়কে অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। ফলে সংরক্ষণের সুবিধা মুসলিমরাও পাচ্ছিলেন। সেই কারণে চলতি বছরের লোকসভা নির্বাচনে শরিকদের এই জয়ের পিছনে মুসলিমদের একাংশের ভোট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।