ইন্ডিয়া হুড ডেস্ক: মহাকাশের দিকে আলোকপাত করলে দেখা যায় পৃথিবীর আশপাশ দিয়ে প্রতিনিয়তই ছুটে চলেছে অসংখ্য গ্রহাণু থেকে শুরু করে লক্ষ কোটি উল্কা। কখনও দেখা যায় উল্কা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে রাতের আকাশে এক সুন্দর চিত্র তুলে ধরে। তাকে আমরা উল্কাপাত বলে থাকি। কিন্তু উল্কার সঙ্গে পৃথিবীর সংঘর্ষ মসৃণ হলেও গ্রহাণু সংঘর্ষ উল্কাপাতের থেকে অনেকটাই আলাদা। যা অনেক সময় প্রাণঘাতী হতে পারে। তবে সব গ্রহাণু যে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসবে তা কিন্তু নয়। কারণ গ্রহাণুর কক্ষপথ, ভর এবং বেগের উপর নির্ভর করে সেটি আদৌ পৃথিবীর কক্ষপথে ছুটে আসবে কি না। তবে সম্প্রতি গ্রহাণু সংঘর্ষ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন ISRO প্রধান।
ধেয়ে আসছে বড় গ্রহাণু
জানা গিয়েছে যে, ৩৭০ মিটার ব্যাসের একটি বিপজ্জনক গ্রহাণু পৃথিবীর কাছ দিয়ে চলে যাবে। এবং আশঙ্কা করা হচ্ছে পৃথিবীর সাথে এটির সংঘর্ষেরও প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিহাস ঘাটলে জানা যায় এর আগে যখনই কোনও গ্রহাণু পৃথিবীতে আঘাত হেনেছে তখনই একাধিক প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। যার অন্যতম উদাহরণ হল ডাইনোসর। অনুমান করা হয় যে বহু কোটি বছর আগে পৃথিবীতে এমনই এক প্রকাণ্ড গ্রহাণুর সংঘর্ষের ফলে ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। এছাড়া গ্রহাণু সংঘর্ষের আরও এক ঘটনাও বেশ চাঞ্চল্য ফেলে দিয়েছিল বিশ্ব জুড়ে।
১৯০৮ সালের ৩০ জুন সাইবেরিয়ার দূরবর্তী স্থান তুঙ্গুস্কায় একটি গ্রহাণুর সংঘর্ষ হয়। যার ফলে বিশাল বায়বীয় বিস্ফোরণ ঘটে এবং প্রায় ২,২০০ বর্গ কিলোমিটারের ঘন বনাঞ্চল ধ্বংস হয়ে যায়। প্রায় ৮ কোটি গাছ ধ্বংস হয়ে যায়। যা গোটা জীবকুলের কাছে অত্যন্ত ভয়ংকর। এবার পালা এই গ্রহাণুর। আশঙ্কা করা হচ্ছে বর্তমানে পৃথিবীর কাছাকাছি আসা এই গ্রহাণুটি যেখানে অবস্থান করে আছে, তার ভিত্তিতে এই গ্রহাণুর সংঘর্ষ হতে পারে ২০২৯ সালের ১৩ এপ্রিলে। আর এই পরিস্থিতিতে এবার সর্বশেষ আপডেট জানিয়ে দিলেন ISRO প্রধান এস সোমনাথ।
কী বলছেন ISRO প্রধান?
গত ৩০ জুন ISRO প্রধান বিশ্ব গ্রহাণু দিবসে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা একটি কর্মশালার আয়োজন করে। সেখানেই ভাষণ দেন এস সোমনাথ। তিনি জানিয়েছেন, ‘আমরা আমাদের গোটা জীবনকালে এমন কোনও দুর্যোগ দেখিনি। তাই সেইদিক থেকে অনুমান করাই যায় যে এটি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কিন্তু যদি পৃথিবী এবং মহাবিশ্বের ইতিহাস ঘাটা যায় তাহলে জানা যাবে গ্রহাণুগুলি তীব্র বেগে গ্রহগুলির সঙ্গে এসে প্রায়শই সংঘর্ষ ঘটায়। এমনকি আমি গত বৃহস্পতিবার দেখেছি শুমেকার-লেভিতে আঘাত করা গ্রহাণুটির দৃশ্য। আর সেই ঘটনা যদি পৃথিবীতে ঘটে তাহলে সত্যিই আমরা সবাই বিলুপ্ত হয়ে যাব।’
আরও পড়ুনঃ রথযাত্রার আগেই সুখবর, আচমকাই বৃদ্ধি পেল ৪% DA! বড় ঘোষণা রাজ্য সরকারের
এছাড়াও তিনি আরও জানিয়েছেন, ‘ তাই আমাদের বিজ্ঞানীদের এখন একটাই লক্ষ্য এই ঘটনা যাতে পৃথিবীতে না ঘটে, তার বন্দোবস্ত করা। কারণ আমরা সকলেই চাই মানুষ এবং সকল জীব এখানে বসবাস করুক। কিন্তু সেই কাজ আমাদের কাছে খুবই জটিল। যদিও একটি উপায় আছে যার মাধ্যমে এটি বিচ্যুত করা যায়। আমরা যদি পৃথিবীর কাছাকাছি আসা গ্রহাণুটি ভালো করে শনাক্ত করে সেটিকে দূরে সরিয়েদি তাহলে বিপদমুক্ত থাকা যায়। তবে সেক্ষেত্রে এই কাজ করা অনেকটাই অসম্ভব হয়ে পড়বে। দরকার পড়বে উন্নত প্রযুক্তি, উন্নত পর্যবেক্ষণ এবং একটি প্রোটোকল। তাই আমরা যদি অন্যান্য দেশের সাথে যৌথভাবে কাজ করি তাহলে অনেকটাই ভালো হবে। এটি শুধুমাত্র ভারতের জন্য নয়, বরং এটি সমগ্র বিশ্বের জন্য বিবেচিত হবে।’