ইন্ডিয়া হুড ডেস্ক: গত কয়েক মাস ধরেই লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের পাশাপাশি একটানা প্রচার রীতিমত ক্লান্ত করে তুলেছিল সকলকে। অবশেষে গতকাল ভোটের ফলাফল প্রকাশের মধ্যে দিয়েই রাজনীতির এক বিরাট যুদ্ধের অবসান ঘটল। তবে, সেই যুদ্ধের ফলাফলটাও যে বিরাট স্বস্তির ছিল তা কিন্তু নয়। ভোটগণনা শুরু হতেই প্রতিমুহূর্তে উত্তেজক পরিস্থিতির তৈরি হয়েছিল। কিন্তু চলতি বছর বিজেপি-র পারফরম্যান্সে দেখা গেল উলাটপুরাণ।
মেলেনি প্রশান্ত কিশোরের ভবিষ্যদ্বাণী
লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে প্রত্যেকবার অনেক ভবিষ্যদ্বাণী করে থাকেন ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর। সেইগুলি প্রত্যেকবার অক্ষরে অক্ষরে মিল খেলেও, এবছর যেন সম্পূর্ণ উল্টো হল। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের থেকেও এবছর বাংলায় খারাপ ফল করেছে বিজেপি। ২০১৯ সালে ১৯টি আসন জিতেছিল বিজেপি। সেই হিসাবে প্রশান্ত কিশোর জানিয়েছিলেন এবার আরও নজরকাড়া ফলাফল করবে বিজেপি। কিন্তু সেটি না হয়ে ভোটের ফল দাঁড়াল মাত্র ১২ টি আসন। যা ২০১৯ এর তুলনায় আরও কমেছে।
শুধু বাংলা নয় গোটা দেশ জুড়ে কম বেশি প্রত্যেকটি রাজ্যে ফ্লপের তকমা জুটেছে বিজেপি- র কপালে। যেখানে ২০১৯ সালের বিজেপি- র প্রাপ্ত আসন সংখ্যা ৩০৩ ছিল। সেখানে চলতি বছর ভোটের পরিসংখ্যানের হিসাবে দেখা যাচ্ছে, ২৯২ আসন পেয়েছে বিজেপির নেতৃত্বাধীন NDA। এবং বিজেপি একা পেয়েছে ২৪৪ টি আসন। অন্যদিকে বিরোধী দল ইন্ডিয়া জোট ২৩১ টি আসনে এগিয়ে এসেছে। ইন্ডিয়া জোটের অন্তর্গত কংগ্রেস একাই এগিয়ে রয়েছে ১০০ টি আসনে। একই সঙ্গে সমাজবাদী পার্টি ৩৭ টি আসনে অর্জন করেছে। এর পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেস ২৯ টি আসনে এবং ডিএমকে এগিয়ে রয়েছে ২২ টি আসনে।
ফেল বিজেপি!
তেলেগু দেশম পার্টি (TDP) ১৬টি, জনতা দল (JD-U) ১২টি, শিবসেনা (উদ্ভব) ৯টি, ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (NCPSP) ৮টি ও শিবসেনা (SHS) ৭টি আসনে জয় পেয়েছে। তাই এবার বিজেপি সবচেয়ে বেশি আসন পেলেও সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসন পায়নি। সে ক্ষেত্রে NDA জোট শরিকদের ওপর নির্ভর করতে হবে বিজেপিকে। তাই প্রশ্ন উঠছে কেন এত বড় ধাক্কা খেতে হল গেরুয়া শিবিরকে? আজকের প্রতিবেদনে বেশ কিছু সমীক্ষা অনুযায়ী উঠে এসেছে বিজেপির এইরূপ পতনের কয়েকটি কারণ।
গেরুয়া পতনের আনুমানিক কারণ
- বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে মুদ্রাস্ফীতি এবং বেকারত্ব বড় ইস্যু হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এবং এর অন্যতম কারণ হিসেবে বার বার দায়ী করা হয়েছে বিজেপি- কে। এবং সেই প্রভাব সরাসরি পড়েছে ভোট ব্যালটে। “মোদির গ্যারান্টি”-র মতো দাবি এবং বিনামূল্যের রেশনের মতো পরিকল্পনা সত্বেও তাই এই নির্বাচনে সেইরূপ সাড়া ফেলতে পারেনি বিজেপি সরকার।
- সংখ্যালঘুদের প্রতি আক্রমণাত্মক হুংকার গেরুয়া শিবিরের। সূত্রের খবর, নির্বাচনের প্রচারের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর সমস্ত সমাবেশে বিরোধী দলগুলির বিরুদ্ধে সংরক্ষণের রাজনীতির অভিযোগ তোলেন। যার দরুণ ভোটের ফলাফলে দেখা গিয়েছিল, বিরোধী দলগুলোতে বেশি ভোট মিলেছিল সংখ্যালঘুদের পক্ষ থেকে।
- বিজেপি চলতি বছর থেকেই ফের CAA-NRC চালু করার কথা বার বার বলে আসছেন জনসাধারণকে। কিন্তু এই CAA NRC ই যে গেরুয়া শিবিরের কাছে বড় ধাক্কা হতে চলেছে প্রথমে তাঁরা বুঝে উঠতে পারেনি। কারণ বিরোধীরা এগুলির মাধ্যমে ভোটারদের ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করেছে। যা অনেকাংশেই সফল হয়েছে।
- ২০১৯ সালে নির্বাচিত বহু বিজেপি সাংসদদের ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর এলাকায় দেখা যায়নি। ফলত সেই অঞ্চলের সাধারণ মানুষকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হয়েছিল। এবং তাঁরা কার্যত জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। তাই সেক্ষেত্রে এটিও গেরুয়া পতনের অন্যতম কারণ হয়ে উঠতে পারে।