প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: আরজি কর কাণ্ডের মামলায় সুপ্রিম কোর্টে গত কয়েক দিনের শুনানিতে জুনিয়র ডাক্তারদের সংগঠন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের’ হয়ে সওয়াল করেছিলেন আইনজীবী গীতা লুথরা। কিন্তু ১৭ সেপ্টেম্বর, গত মঙ্গলবার জুনিয়র ডাক্তারদের হয়ে সওয়াল জবাব করেছিলেন ইন্দিরা জয়সিংহ। আর চিকিৎসকদের আর এক সংগঠন, ‘জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস ওয়েস্ট বেঙ্গল’-এর হয়ে সওয়াল করেছেন আইনজীবী করুণা নন্দী এবং সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়। জানা যায় এই সংগঠনও তিলোত্তমা ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহ হলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবীদের মধ্যে অন্যতম আইনজীবী। হাজারও মামলা তিনি সমাধান করেছেন।
সুপ্রিম কোর্টে লাইভ স্ট্রিমিং এর উদ্ভব
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মহিলাদের সুরক্ষা এবং অধিকার সংক্রান্ত মামলায় তাঁকে দেখা যায় লড়াই করতে। এমনকি প্রথম এই আইনজীবীর দৌলতে সুপ্রিম কোর্টের শুনানিগুলি ‘লাইভ স্ট্রিমিংয়ের’ মাধ্যমে সাধারণ মানুষরা ঘরে বসে দেখতে পারেন। ইন্দিরা ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি পিএস নরসিংহ এবং বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালার বেঞ্চ ইন্দিরার আর্জি জানিয়েছিলেন এই লাইভ স্ট্রিমিং এর ব্যাপারে। সেখানে প্রধান বিচারপতিরা এর মান্যতা দেওয়ার কথা জানায়। বর্তমানে তাই ‘লাইভ স্ট্রিমিংয়ের’ মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টে বেশ কিছু মামলার শুনানি ঘরে বসেই দেখতে পারেন সাধারণ মানুষ। তবে এই প্রবীণ আইনজীবী ছাড়াও দাপটের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টে লড়াই করে চলেছেন আরও এক বাঙালি আইনজীবী। তিনি হলেন করুণা নন্দী।
কে এই করুণা নন্দী?
বাঙালি হলেও করুণার জন্ম ভোপালে। সেখান থেকে দিল্লিতে পড়াশোনা এবং বড় হয়ে ওঠা। সেখানকার সেন্ট স্টিফেন কলেজ থেকে অর্থনীতি নিয়ে পাশ করে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন আইন নিয়ে। সেখান থেকে কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি ল সোসাইটি জার্নালের প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব অর্জন করেছিলেন। তবে ভারতের গণ্ডির মধ্যে তাঁর আইনশিক্ষা থেমে থাকেনি। দেশের বাইরেও গিয়েছিলেন করুণা। নিউ ইয়র্কের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে মানবাধিকার ফেলোশিপও পেয়ে দীর্ঘ দিন নিউ ইয়র্কে আইন প্র্যাকটিস করেছেন।
তাই বলতে গেলে বিলেত, আমেরিকা এবং ভারত এই তিনটি দেশেই ল প্র্যাক্টিস করার লাইসেন্স আছে করুণার কাছে। আর সেই দক্ষতা যে অনেকখানি সেটি গত মঙ্গলবার সুপ্রিম শুনানির প্রথমার্ধেই স্পষ্ট দেখা গিয়েছে। ৪৮ বছরের এই দাপুটে মহিলা আইনজীবীর একের পর এক গভীর এবং স্পষ্ট প্রশ্নের মুখে পড়ে একেবারে নাকানি চুবানি খেতে হয়েছে রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বলকে।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার রাজ্যের হয়ে সওয়াল করেছিলেন মোট ১৯ জন আইনজীবী। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন আইনজীবি কপিল সিব্বল। নির্যাতিতার পরিবারের হয়ে সওয়াল করবেন আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য। পাশাপাশি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও এই মামলার অংশ হয়েছেন। তাঁর হয়ে লড়বেন ৭ জন আইনজীবী। অন্যদিকে জনস্বার্থ মামলাকারীর আইনজীবী হয়ে লড়বেন ফিরোজ এডুলজি। এবং গাইঘাটার প্রতিবাদী শিক্ষক বরুণ বিশ্বাসের পরিবারের তরফেও এই মামলায় অংশ নেওয়া হয়েছে। তাঁদের হয়ে লড়বেন আইনজীবী ফিরদৌস শামিম।