ইন্ডিয়া হুড ডেস্ক: শরিকদের সহায়তায় তৃতীয়বারের জন্য সরকার গড়েছেন নরেন্দ্র মোদী। তাই সেই নির্বাচিত সরকারের থেকে প্রত্যাশাও অনেক বেশি সাধারণ মানুষের। অন্যদিকে লোকসভা নির্বাচনের কারণে চলতি বছর গোড়ায় নিয়মমাফিক পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করা সম্ভব হয়নি। তাই আজ সংসদে পেশ করা হবে প্রত্যাশার সেই কেন্দ্রীয় বাজেট। অবশেষে অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে সাধারণ মানুষদের। এর আগে মোরারজি দেশাই টানা ৬টি বাজেট পেশ করেছিলেন ভারতের অর্থমন্ত্রী হিসেবে।
বাজেট পেশে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ
সূত্রের খবর আজ সকাল ১১ টায় বাজেট কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করতে সময়ের আগেই উপস্থিত হয়েছিলেন নির্মলা সীতারমণ। লাল ‘খাতা’য় বাঁধানো ট্যাব ছিল তাঁর হাতে। পরনে ছিল সাদা-রানি শাড়ির সঙ্গে উজ্জ্বল রানি রঙের ব্লাউজ। দু হাতে সাধারণ দুটি চুড়ি, গলায় হার ও কানে ছোট দুল আর কপালে টিপ। এদিন সংসদের বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত রয়েছেন তানজানিয়ার প্রেসিডেন্ট। লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লা অধিবেশনের সূচনা করা হয় ২০২৪-২৫ কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ বাজেট। এরপর সরকার পক্ষের করতালির মাধ্যমে ডিজিটাল বাজেট পেশ করতে শুরু করেন নির্মলা। একনজরে দেখে নেওয়া যাক পূর্ণাঙ্গ বাজেটের কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
২০২৪-২৫ কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ বাজেট
- বাজেটের শুরুতেই রয়েছে কৃষির উল্লেখ। জানা গিয়েছে, ১০৯ টি নতুন প্রজাতির ফসল, ১ কোটি প্রাকৃতিক চাষি সার্টিফিকেট দেওয়া হবে। তৈলবীজ, সূর্যমুখী, সোয়াবিন উৎপাদনে আত্মনির্ভরতা এবং ৬ কোটি কৃষকের তথ্য কৃষি রেজিস্টারে আনা হবে। সেই সঙ্গেই পাঁচ রাজ্যে কিষাণ ক্রেডিট কার্ড দেওয়া হবে।
- কৃষি খাতে ১.৫২ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে। পাশাপাশি ফসলের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে কৃষি গবেষণাকে রূপান্তরিত করা হবে। এবং জলবায়ু সহনশীল ফসলের জাত উন্নয়নের জন্যও খামার গবেষণা সেটআপের একটি ব্যাপক পর্যালোচনা করা হবে।
- বিষ্ণুপাদ মন্দির, নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজগির-সহ বিহারের একাধিক এলাকায় উন্নয়নে সাহায্য করবে কেন্দ্র। পাশাপাশি কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের আদলে তৈরি করা হবে বিষ্ণুপাদ মন্দির করিডর। শুধু তাই নয় ওড়িশার একাধিক মন্দিরকে পর্যটনস্থল হিসাবে উন্নয়ন করা হবে।
- হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈনদের কাছে অসীম গুরুত্ব রাজগিরের। ২০ তম তীর্থঙ্কর মন্দির, সপ্তঋষি মন্দির, ব্রহ্মকুণ্ডকে অধিগ্রহণ করা হবে।
নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুনর্সংস্কার করা হবে। - প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় আরও তিন কোটি বাড়ি তৈরির ঘোষণা। শহরের দরিদ্র এবং মধ্যবিত্তদের জন্য আবাসে ১০ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ। কিন্তু সেক্ষেত্রে বাংলার জন্য আলাদা করে আবাস নিয়ে কোনও ঘোষণা নেই।
- ১ কোটি বাড়িতে সৌরবিদ্যুৎ পৌঁছনোর ঘোষণা। সোলার প্যানেলের ফলে প্রতিমাসে ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত বিনামূল্যে বিদ্যুৎ মিলবে। পরমাণু শক্তি উৎপাদন এবং গবেষণা, তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনে বরাদ্দ। আলাদা করে বরাদ্দ ঘোষণা গ্রামোন্নয়নে।
- স্ট্যাম্প ডিউটি কমিয়ে মহিলাদের সম্পত্তি কেনার ক্ষেত্রে ছাড় দিচ্ছে কেন্দ্র। পাশাপাশি মহিলাদের ক্ষমতায়নের জন্য খোলা হবে বিশেষ হস্টেল, মায়েদের সুবিধার জন্য রাখা হবে ক্রেশের ব্যবস্থাও।
- দেশের মধ্যে পড়াশোনার জন্য ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ছাত্র ছাত্রীদের শিক্ষা ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে সরকার সাহায্য করবে। এর জন্য প্রতি বছর ১ লক্ষ পড়ুয়াদের ই-ভাউচার দেওয়া হবে। এছাড়া বাজেট সূত্রে জানা গিয়েছে রাজ্য সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কেন্দ্র একটি প্রকল্প আনতে চলেছে যাতে ৫ বছর ধরে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে পড়ুয়াদের।
- ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পের জন্য বিশেষ ক্রেডিট গ্যারান্টি প্রকল্প। মুদ্রা লোনের অঙ্ক ১০ লক্ষ থেকে বেড়ে হল ২০ লক্ষ। ফুটপাথে হকারদের জন্যও অর্থমন্ত্রীর বিশেষ ঘোষণা।
- EPFO নিয়ে বাজেটে মুখ খুললেন অর্থমন্ত্রী। তিনি জানান, প্রথমে যাঁরা কাজের বাজারে ঢুকছেন, প্রভিডেন্ট ফান্ডে তাঁদের এক মাসের বেতন দেওয়া হবে। তিনটি ইন্সটলমেন্টে দেওয়া হবে ওই বেতন। অন্যদিকে ছোট সংস্থাগুলির কর্মীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডে ভর্তুকি দেওয়া হবে। প্রথম যাঁরা কাজে ঢুকছেন, তাঁদের প্রভিডেন্ট ফান্ডে এক মাসের বেতন দেওয়া হবে।
- বাজেটে ইন্টার্নশিপের সুযোগ থেকে শুরু করে সরাসরি টাকা পাঠানো, কর্মচারীদের সহায়তা প্রদান-সহ একাধিক ঘোষণা করা হল। আগামী পাঁচ বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রের চাকরিতে ১ কোটি যুবক-যুবতী ইন্টার্নশিপের সুযোগ দেওয়া হবে। ফলত ৫০০টি বড় সংস্থায় ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ পাবেন ১ কোটি পড়ুয়া। প্রতি মাসে ৫০০০ টাকা দেওয়া হবে।
- বন্যা নিয়ন্ত্রণে অসম, বিহার এবং হিমাচল প্রদেশের জন্য আলাদা বরাদ্দ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার আওতায় রাস্তা তৈরি হবে ২৫ হাজার গ্রামে। কিন্তু এদিনের বাজেটে পশ্চিমবঙ্গের ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে কোনও ঘোষণা নেই।
- মহাকাশ বাণিজ্যে বরাদ্দ আগামী ১০ বছরে পাঁচগুণ করা হবে। বিদেশি বাণিজ্যে ভারতীয় মুদ্রায় লেনদেনের ঘোষণা। অন্যদিকে আইটি আইন ১৯৬১-র ব্যাপক পর্যালোচনা করে বেতনের ওপর TDS কমানোর ঘোষণা করলেন অর্থমন্ত্রীনির্মলা সীতারমণ।
- সোনা, রুপো এবং প্ল্যাটিনামে শুল্ক কমানো হয়েছে। এবং মোবাইল ফোন এবং চার্জারগুলিতে মৌলিক শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দিলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।
- ক্যানসারের তিনটি ওষুধের ওপর থেকে আমদানি শুল্ক পুরোপুরি তুলে দেওয়া হয়।
- মিউচুয়াল ফান্ডের উপর থেকে ২ শতাংশ TDS তুলে নেওয়া হচ্ছে বলে ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। বিদেশি সংস্থার থেকে কর্পোরেট ট্যাক্সের হার ৪০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। সব ধরনের বিনিয়োগকারীদের জন্য ‘এঞ্জেল ট্যাক্স’ তুলে দেওয়া হচ্ছে।
- নতুন আয়কর নিয়মে স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। পাশাপাশি নতুন কর নিয়মে আনা হল পরিবর্তন। জানা গিয়েছে, করযোগ্য আয় যদি ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত হয়, তাহলে আয়কর হবে শূন্য। কিন্তু করযোগ্য আয় ৩ লাখ ১ টাকা থেকে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত হলে আয়কর হবে ৫ শতাংশ। ৭ লাখ ১ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়করের হার হল ১০ শতাংশ। ১০ লাখ ১ টাকা থেকে ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়করের হার হল ১৫ শতাংশ। ১২ লাখ ১ টাকা থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়করের হার হল ২০ শতাংশ।এবং ১৫ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে আয়করের হার হল ৩০ শতাংশ।